ইসলামের দৃষ্টিতে ই-সিগারেট খাওয়া হারাম না হালাল

 

সিগারেট সাধারণত তামাকজাত দ্রব্য দিয়ে তৈরি করা হয়। আর ই- সিগারেট হচ্ছে ইলেকট্রনিক সিগারেট। সাধারণত সিগারেটের বিকল্প হিসেবে ইলেকট্রনিক সিগারেট বা ই- সিগারেট ব্যবহার করা হয় যা তরুণদের মধ্যে দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।


যেটা ফাইবার বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। এটি ব্যাটারি চালিত একটি যন্ত্র যার ভিতরে একটি প্রকোষ্ঠ থাকে। তার মধ্যে ভরা থাকে বিশেষ ধনের তরল মিশ্রণ।

ভূমিকা 

প্রিয় পাঠক আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারবেন ই- সিগারেট কি ই-সিগারেটের বৈশিষ্ট্য কি এই সিগারেটের ইতিহাস ইসলামের দৃষ্টিতে ই-সিগারেট খাওয়া হারাম না হালাল ইত্যাদি বিষয় জানতে পারবেন আশা করি ধৈর্য সহকারে আমার এই পোস্টটি পড়বেন তাহলে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে অনেক তথ্য পাবেন।ই- সিগারেট হচ্ছে বৈদ্যুতিক সিগারেট। যা সাধারন সিগারেটের বিকল্প হিসেবে ব্যবহূত হয়।

এটি একটি অটোমাইজার। অটোমাইজার হল একটি গরম করার উপাদান যা ই তরল নামক একটি তরল দ্রবণকে বাষ্পীভূত করে । যেটা খুব দ্রুত ছোট ছোট ফোটা, বাষ্প এবং বাতাসের অ্যারোসলে পরিণত হয়। লিথিয়াম ব্যাটারির মাধ্যমে কাটিজে থাকা নিকোটিন স্বাদ ও গন্ধ মিশ্রিত ্ ই- লিকুইড প্রোপিলিননামক রাসায়নিক পুড়িয়ে মস্তিষ্কে ধূমপানের মতো অনুভূতি সৃষ্টি করে যেটা কয়েক বছর ধরে বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ।

ই -সিগারেটের বৈশিষ্ট্য 

ই -সিগারেট হচ্ছে ইলেকট্রনিক সিগারেট। ই -সিগারেট ব্যাটারি চালিত ডিভাইস যেটা নিয়মিত সিগারেটের আদলে তৈরি। ২০০৩ সালে চিনা ফার্মাসিস্ট প্রাথমিকভাবে যন্ত্রটি তৈরি করেছিলেন। যেটা সাধারণ সিগারেটের বিকল্প হিসেবে তৈরি করেন। এই সিগারেটের মধ্যে একটি অটোমাইজার এবং একটি কার্তুজ থাকে। যেটাতে ই-তরল নামক একটি তরল উপাদান থাকে।

যখন ডিভাইসটি চালু করা হয় তখন ব্যাটারি কার টিজে তরল গরম করে এবং অটোমাইজার তরলকে বাষ্পী ভূত করে। যেটা কুয়াশার মতো নির্গত হয় এবং ব্যবহারকারী শ্বাস নেয়।তাই সিগারেট ব্যবহারকারীকে বলা হয় ভ্যাপি ং(Vaping) বলা হয়।এই সিগারেটের চেহারা তার আকার দ্বারা নির্ধারিত হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি চেহারা এবং এটিতে যে বাষ্প নির্গত হয় তার কারণে একটি ই- সিগারেট সাধারণ সিগারেটের মতোই দেখতে মনে হয়।

তবে অন্যান্য ধরনের ই সিগারেট একটি ধুমপান পাইপ থাকে। আবার কিছু কিছু সিগারেট বল পয়েন্ট কলম এর মতো দেখতে মনে হয়। এই সিগারেট গুলোকে পণ্য ব্যবহারযোগ্য বা নিষ্পত্তিযোগ্য করার জন্য ডিজাইন করা হয়।আবার অনেক লোক ধূমপানের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। আবার অনেকেই ধূমপান বন্ধের সহায়তা হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন।

ই- সিগারেটের ইতিহাস 

আজকের দিনে সিগারেট অনেকের কাছে ফ্যাশন আবার অনেকের কাছে বিরক্তিকর বস্তু আবার অনেকের কাছে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে পরিগণিত হয়। তবে বর্তমান যুগে তরুন যুবক বৃদ্ধ এমনকি কিশোরীরাও সিগারেটের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। সিগারেটের পক্ষে বিপক্ষে অনেক তর্ক বিতর্ক রয়েছে তবে আজ আমি তা নিয়ে আলোচনা করব না। আজ আলোচনা করব মানুষ সিগারেট কেন খাই এবং সিগারেটের পূর্ব ইতিহাস।


আমরা অনেকেই হয়তোবা জানিনা যে সিগারেটের পিছনেরইতিহাস কি। তাই আজ আমি সিগারেটের জন্ম ইতিহাস সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ। আজকাল আমাদের দেশের যুবসমাজ এমন হয়ে গেছে যে ভাত খেতে ভুলে গেলেও ধূমপান বা সিগারেট খেতে ভুলে না। তাই আজ আমি আলোচনা করব সিগারেট আমাদের জীবনে কিভাবে প্রবেশ করেছে।এর ইতিহাস টা কি?

ইসলামের দৃষ্টিতে ই-সিগারেট খাওয়া হারাম না হালাল

ইসলামের দৃষ্টিতে ধূমপান করা হারাম। এতে দ্বিতীয় কোন মতামত নেই। কারণ ধূমপান কোন ভাল কাজ নয়। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণই বেশি। এটা একদিকে যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি অন্যদিকে অর্থের অপচয় ঘটে। আর ইসলামে অপচয় করা হারাম। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রকাশ্যে বা জনসম্মুখে ধূমপান করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। 

কারণ এর ধোয়ার দ্বারা শিশুসহ অন্যান্যদের পড়তে হয় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, 'হে ঈমানদাররা! যেসব পবিত্র বা উৎকৃষ্ট বস্তু আমি তোমাদের রিজিক হিসেবে দিয়েছি, সেগুলো খাও এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। যদি তোমরা তার ইবাদত করে থাকো। (সুরা বাকারা,আয়াত :১৭২)।কোন মুমিন ধূমপান করে অন্যকে কষ্ট দিতে পারে না।রাসুল (সা.)বলেছেন, কেউ অন্যের ক্ষতি করলে আল্লাহ তার ক্ষতিসাধন করবেন। (আবু দাউদ,হাদিস :৩৬৩৫)।

প্রিয় পাঠক, এখন আশাযাক মূল আলোচনায়,ইসলামের দৃষ্টিতে ই-সিগারেট খাওয়া হারাম না হালাল
ই-সিগারেট মূলত সিগারেটেরই একটি অন্য রুপ বা বিকল্প ব্যবস্থা।অনেকেই সিগারেট ছাড়ার জন্য ই-সিগারেট ব্যবহার করে থাকেন, কারন এই সিগারেটের ভিতরে থাকে নিকোটিন, প্রপাইলিন গ্লাইকল অথবা ভেজিটেবল গ্লিসারিন এবং সুগন্ধি মিশ্রিত।

অন্য দিকে তামাকের তুলনায় নিকোটিন তুলনামূলক কম ক্ষতি করে।ই-সিগারেট তুলনামূলক ভাবে কম ক্ষতি করলেও শতভাগ নিরাপদ নয়।এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাক নিয়ে তাদের সর্ব শেষ প্রতিবেদনে সিগারেটকে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য হিসেবে গন্য করেছেন।ইসলামি শরিয়তের বিধানে সকল কিছুর স্পষ্টদলিল না থাকলেও সব কিছুই যে হালাল তা নয়।শরীয়তের স্পষ্ট উক্তি গুলো থেকে ফকিগন এমন কিছু নিয়ম নিতী নির্ণয় করেন, যা থেকে বলা যায় কোনটা হালাল আর কোনটা হারাম।

যে নিতী গুলোর মাধ্যমে বিড়ি সিগারেটকে হারাম করা হয়েছে তা নিম্নে কিছু দেওয়া হল 
  • এতে রয়েছে অর্থের অপচয়। আর ইসলামে অপচয় করা হারাম
  • এতে রয়েছে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি। যেটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ইসলামে তা হারাম।
  • বেশি পরিমাণ পান করলে মস্তিষ্কেের বা ব্রেনের ক্ষতি হতে পারে। আর যেটা নিশা, জ্ঞান শূন্যতা আসি তা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম।
  • সিগারেটের ধোঁয়া থেকে এক ধরনের দুর্গন্ধ বের হয়। এতে নিজে যেমন অপবিত্র হয়, অন্যদিকে অন্যরাও কষ্ট পাই। আর এ অপবিত্র জিনিস খাওয়া ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম।
  • প্রিয় পাঠক, আমরা উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝতে পারি যে সিগারেট বা ইলেকট্রনিক সিগারেট সাধারণ সিগারেটের থেকে কম ক্ষতিকর হলেও এটা স্বাস্থ্যের এবং অর্থের অপচয় ঘটে। এতে ভাল দিকের থেকে খারাপ বা মন্দ দিকটায় বেশি। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে সাধারণ সিগারেটের পাশাপাশি ই-সিগারেট খাওয়াও হারাম।

ই -সিগারেট কি ক্ষতিকর 

বেশিরভাগ তরুণদের মাঝে আজকাল সাধারণ সিগারেটের বিকল্প হিসেবে সিগারেট বা ইলেকট্রনিক সিগারেট দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আবার অনেকেই সিগারেট ছাড়ার বিকল্প হিসেবে ই -সিগারেট ব্যবহার করে থাকেন। তার মনে করেন সিগারেট ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে সাহায্য করবে। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের মতে, ই-সিগারেট ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে বা ছাড়াতে সহযোগিতা করে এর কোন স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।


বরং কোন কোন ক্ষেত্রে এর প্রভাব অন্যান্য সাধারণ সিগারেটের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর হতে পারে। ই -সিগারেটের ভিতরে থাকে তরল মিশ্রনের (ই-লিকুইট)এর মধ্যে থাকে প্রপোলিন গ্লাইসল,গ্লিসারিন, পলিইথিলিন,গ্লাইসল,এবং নানা ধরনের ফ্লেভার ও নিকোটিন। যা গরম হওয়ায় সাথে সাথে এ রাসায়ানিক গুলো থেকে সাধারণ সিগারেটের মতো ধোঁয়া বের হয়।

ই-সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকে অতিসূক্ষ্ণ রাসায়নিক কনা যেটা সাস্থ্যর জন্য বেশ ক্ষতিকর। এ থেকে শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন, গলা,মুখ জালা,বমিবমিভাব,এবং কাশি দেখা দিতে পারে।এছাড়াও ই-সিগারেটর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো নিকোটিন এটা দূত আসক্তি তৈরি করে এবং ফুসফুসের নানা অসুখ হতে পারে। এর অতিরিক্ত ব্যবহার মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে সাধারণ সিগারেটের চেয়ে ই-সিগারেট ১০ গুন বেশি ক্ষতিকর। তাই ই-সিগারেট দিয়ে কখনো ধূমপান ছাড়ানো যায় না।

লেখক: মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, হেলথকেয়াুর ডায়াগনস্টিক সেন্টার লি.শ্যামলী ঢাকা।

শেষ কথা 

ই-সিগারেট হলো আধুনিক যুগের একটি সংস্করণ। এটা আমাদের যুব সমাজ বা তরুণদের মধ্যেই বেশি জনপ্রিয়। প্রিয় পাঠক, ই-সিগারেট তুলনামূলকভাবে সাধারণ সিগারেট তুলনায় কম ক্ষতিকর হলেও একেবারেই নিরাপদ নয়। আপনারা অনেকে জানতে চেয়েছিলেন ইসলামের দৃষ্টিতে ই-সিগারেট খাওয়া হারাম না হালাল

আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে এ বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। প্রিয় পাঠক,আশা করি আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে বুঝতে পেরেছেন ইসলামের দৃষ্টিতে কোন ক্ষতিকর বস্তুই হালাল নয়। আশা করি আমার এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা কিছুটা হলেও উপকৃত হতে পেরেছেন। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ এতক্ষণ ধৈর্য ধরে আমার সাথে থাকার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url