খালি পেটে লিচু খেলে কি হয়? লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কি কি?

খালি পেটে লিচু খেলে কি হয়? গর্ভাবস্থায় কিছু খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি? লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কি কি? লিচু অতি পরিচিত রসালো ও সুস্বাদু ফল। শুধু সুস্বাদু নয় পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ রসালু একটি ফল।


যেসব ফলগুলো আমাদের শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে থাকে লিচু তাদের মধ্যে অন্যতমগুরুত্বপূর্ণ ফল। তবে খালি পেটে লিচু খেলে কি হয় বা গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি ইত্যাদি বিষয় জানার অনেকের ইচ্ছা থাকে। আজ আমি এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

ভূমিকা 

ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ছয়টি ঋতু নিয়ে গঠিত। যেমন গ্রীষ্ম,বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত,শীত ও বসন্ত। এই প্রতিটি ঋতুর ভিন্ন ভিন্ন কিছু রুপ বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তেমনি গ্রীষ্ম ঋতু এর ব্যতিক্রম নয়। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাস নিয়ে গ্রীষ্ম ঋতু গঠিত। বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্য মাসকে মধুমাস বলা হয়। কারণ এই মাসগুলোতে সবচেয়ে বেশি ফল-ফলাদি পাওয়া যায়। এ সময় বিভিন্ন ফলের মিষ্টি গন্ধে চারিদিকে মৌ মৌ করে।

এই মাস গুলোতে আম জাম কাঁঠাল ও লিচু সহ বিভিন্ন ধরনের রসালো সুস্বাদু ফল পাওয়া যায়। এরমধ্যে লিচু অন্যতম একটি ফল। লিচু পছন্দ করে না এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। লিচু শুধু খেতেই সুস্বাদু নয় বরং পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ। লিচুর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে পুষ্টিবিদ শওকতারা সাইদা লোপা বলেন। লিচুর মূল উপাদান জলীয় অংশ, অনেক বেশি থাকে। এছাড়া প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট অল্পপরিমাণে থাকে। লিচুতে ফ্যাটের পরিমাণ খুব কম থাকে।ফ্যাট না থাকায় এ ফলটি সবাই খেতে পারে।তাই বলে যখন তখন খালি পেটে খুব বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো

লিচুর ভিটামিন সমূহ 

লিচু একটি ভিটামিন এ পরিপূর্ণ সুস্বাদু ফল। এই ফলে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন। এই ফলে রয়েছে ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম পর্যাপ্ত পরিমাণে। এছাড়া, আইরন,ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি উপাদানগুলো রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। তাই লিচু আমাদের দৈনন্দিন পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে থাকে। এই জন্যে যতটা সম্ভব আমরা এই মৌসুমী ফল লিচু আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।

লিচু কি 

লিচু গাছ চিরহরিৎ প্রজাতির একটি লম্বা গাছ। এই গাছ থেকে ছোট ছোট স্বাশ যুক্ত রসালো এক ধরনের ফল পাওয়া যায়। ফলটির বহিরাবরন অমসৃণ ও লালচে গোলাপি রঙের হয়ে থাকে। এই ফলটির নাম লিচু যা খেতে খুব মিষ্টি ও রসালো।এর বৈজ্ঞানিক নাম (Litchi chinensis)হল সোপবেরি পরিবার সেপিন্ডাসিয়ার লিচিগনের একমাত্র সদস্য।

লিচুর ইতিহাস

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় ১০৫৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে লিচুর চাষাবাদ শুরু হয়েছিল চীনের দক্ষিণ অঞ্চল, ও মালয়েশিয়া ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চলে। চীন হলো প্রধান লিচু উৎপাদনকারী দেশ। এরপরে রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত দ্বিতীয় স্থানে


 লিচুর জাত
 লিচুর অনেক জাত রয়েছে। তাই নাম করন ও সনাক্ত করন নিয়ে রয়েছে অনেক মতামত।
একই জাতের ফল বিভিন্ন অঞ্চলে বা পরিবেশে গড়ে উঠে বলে তাদের মধ্যে বিভিন্ন পার্থক্য দেখতে পাওয়া যায়। এমনকি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে জাতগুলোর নামও ভিন্ন হতে পারে। অস্ট্রেলিয়াসহ এশিয়ার দক্ষিণ পূর্ব দেশগুলোতে প্রধান জাতগুলোর ক্ষেত্রে চীনা নামটি ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও প্রতিবেশি দেশ ভারতে বারটিরও বেশি জাতের লিচুর চাষ হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় বেশি চাষ হয় "মরিশাস" জাতের লিচু।

লিচুরকিছুবিক্ষ্যাতজাত গুলো নিচেদেওয়াহল 

যেমনঃসানিয়েহং,বৈতানজিং,বায়লা,শুইডং,ফিজিক্সিয়াও, ডাজৌ,হিয়ে,নিউমিকি,গুইই,হুয়াঝি,লানজু,এবং চেনজি, ইত্যাদি এছাড়াও ভিয়েতনামের কিছু বিক্ষ্যাত ভাইথিয়েউহাই,ডুওং। 

খালিপেটে লিচু খেলে কি হয়?

বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্যমাস কে বলা হয় মধুমাস।কারণ এই মাসে বিভিন্ন জাতের ফলফলাদি পাওয়া যায়। বিশেষ করে আম,জাম,কাঠাল,ও লিচুসহ অনেক জাতের ফল। তাই রসালো মিষ্টি ও শাসযুক্ত ফলটি সবাই পছন্দ করে। বলছি লিচু ফলের কথা।এই ফল খেতে ভালোবাসেনা এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না।এই ফলটি খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয় প্রায় বারমাস বা একবছর।তাই ফল রসিকরা ফলটি পাওয়া মাত্রই খাওয়া শুরু করে। তাই বলে আপনি অধিক পরিমাণে ফলটি খেতে পারবেন তা কিন্তু নয়।

এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক খালি পেটে খাওয়া যাবে কিনা বা খালি পেটে খাওয়ার অপকারিতাই বা কি? 

খালিপেটে লিচু খেলে অনেক সমস্যা হতে পারে। কারন খালিপেটে লিচু খাওয়ার রয়েছে  অনেক অপকারিতা।

শর্করার মাত্রা কমিয়ে দে 

লিচুতে আছে হাইপোগ্লাইসিন নামক একটি উপাদান। যেটা শরীরের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়। আর খালি পেটে লিচু খেলে, লিচুরি উপাদানটি শরীরের শর্করার মাত্রা একেবারেই কমে দেয়। ফলে মৃত্যুর ঝুঁকি পর্যন্ত হতে পারে। তাই খালি পেটে লিচু না খাওয়ায় ভাল। খাবার গ্রহণের ৩০ মিনিট পর থেকে লিচু খাওয়া যেতে পারে।

বিষক্রিয়ার প্রভাব 

আমরা যখন সারারাত ঘুমিয়ে থাকি তখন শরীরের শর্করার মাত্রা এমনিতেই কম থাকে। এ সময় খালি পেটে লিচু খেলে লিচুতে থাকা হাইপোগ্লাইসিন উপাদানটি শরীরের শর্করার মাত্রা কমিয়ে শূন্য নিয়ে যেতে পারে। ফলে দেখা দেয় বিষক্রিয়া। যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই এই বিষক্রিয়া থেকে বাঁচতে খালি পেটে লিচু গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। 

কাঁচা লিচু 

কাঁচা লিচু গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আমাদেরকে আরো বেশি সচেতন থাকতে হবে। কারণ পাকা লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন উপাদানটি খুব বেশি পরিমাণে থাকে না। কিন্তু কাঁচা লিচুতে এই উপাদানটি অনেক বেশি পরিমাণে থাকে। তাই অনেক সময় শিশুরা না বুঝে কাঁচা লিচু খেয়ে ফেলতে পারে। শিশুদেরকে কাঁচা লিচু থেকে দূরে রাখতে হবে। এটা যে ক্ষতিকর তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে।

লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতাগুলো কি কি? 

আমরা জানি প্রায় প্রতিটা জিনিসেরই ভালো-মন্দ দুইটা দিক থাকে। কোনটার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বেশি থাকে আবার কোনটার কম থাকে। প্রথমেই আমরা জানবো লিচু খাওয়ার ভালো দিক বা উপকারিতাগুলো কি কি। আসুন জেনে নেয়া যাক লিচু খাওয়ার সুবিধা বা উপকারিতা গুলো। লিচু গ্রীষ্মকালীন একটি রসালো ও সুস্বাদু ফল। লিচু আমরা কম বেশি সবাই পছন্দ করি। বিশেষ করে শিশুরা বেশি পছন্দ করে থাকে 

তাই লিচুর যেমন পুষ্টিগুণ রয়েছে তেমনি রয়েছে উপকারিতা নিম্নে কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ঃ

লিচুতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। যা শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।

ত্বকের যত্নে 

ত্বকের যত্নে লিচু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লিচুতে রস বা জলের পরিমাণ বেশি থাকাই ত্বককে মসৃণ, সুন্দর ও উজ্জ্বল করে।

শরীরে ব্যথা দূর করে 

লিচুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। যেটা শরীরের ব্যথা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে 

লিচু রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

প্রদাজনিত রোগ কমিয়ে দেয় 

প্রতিদিন নিয়মিত লিচু খেলে প্রয়োজনীয় ভিটামিন b6 এর দশ শতাংশ বেশি পাওয়া যায়। যেটা শরীরের লোহিত রক্ত কণিকা বা হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। ফলে প্রদাজনিত রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

কিডনি ভালো রাখে 

আমাদের শরীরের যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রয়েছে তার মধ্যে কিডনি হল অন্যতম। লিচুতে রয়েছে পর্যাপ্ত পানি ও পটাশিয়াম যা কিডনিতে জমে থাকা দূষিত পদার্থ গুলো বের করতে সাহায্য করে। এবং লিচু ইউরিক এসিডের ঘনত্ব কমিয়ে থাকে। ফলে কিডনি সুরক্ষিত থাকি।

ওজন কমাতে সাহায্য করে 

যারা শরীরে ওজন কমাতে চান তারা বেশি করে লিচু খেতে পারেন। কারন লিচুতে ক্যালোরি পরিমাণ কম থাকে অন্য দিকে ফাইবার থাকে যার ফলে ওজন বাড়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না। 

হার্ট ভালো রাখে 

হার্ট ভালো রাখতে লিচু সাহায্য করে। লিচুতে রয়েছে অলিগোনাল,যার কারণে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করতে কাজ করে। যা আমাদের শরীরের রক্ত চলাচল করতে সাহায্য করে। ফলে আমাদের হার্ট ভালো থাকে। 

১০০ গ্রাম লিচুতে যে ভিটামিন গুলো থাকে 

নিম্নে ১০০ গ্রাম লিচুতে যে ভিটামিন গুলো থাকে তার একটি তালিকা দেয়া হলো।
  • ক্যালোরি -৬৬
  •  প্রোটিন -০.৮ গ্রাম
  •  চিনি -১৫.২ গ্রাম
  •  কার্বোহাইড্রেট -১৬.৫ গ্রাম
  •  ফাইবার -১.৩ গ্রাম
  •  ও ফ্যাট -০.৪ গ্রাম

লিচু খাওয়ার অপকারিতা গুলো কি কি 

এতক্ষণ আমরা জানলাম লিচু খাওয়ার উপকারিতা বা পুষ্টিগুণ গুলো কি কি।এখন আমরা জানবো লিচু খাওয়ার অপকারিতা বা অসুবিধা গুলো কি কি? লিচু খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি কিছু অপকারিতা রয়েছে।

আসুন জেনেয়া নে যাক লিচু খাওয়ার অপকারিতা গুলো কি কি?

 ১০০ গ্রাম লিচুতে রয়েছে ৬৬ গ্রাম ক্যালোরি। এতে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়। তাই বেশি লিচু খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো। লিচু রক্তের গ্লুকোজ কমিয়ে দেয়। তাই লিচু বেশি খেলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। তাই যাদের ডায়াবেটিক্স আছে তাদের লিচু খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। বেশি লিচু খাবার ফলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে যার ফলে শ্বাসকষ্ট হওয়া, বুক ধড়ফড় করা মাথা ঘুরানো, বমি ভাব ইত্যাদি হতে পারে।

বেশি বেশি লিচু খেলে ইমিউনিটি বেড়ে যেতে পারে। যার ফলে রিউমাটয়েড,আর্থাইটিক, মাল্টিপল, স্কুলেরসিস, লুকাস ইত্যাদি রোগ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। লিচুতে খুব বেশি পরিমাণে ভিটামিন ক্যালসিয়াম নেই। যার ফলে বেশি বেশি লিচু খেলে শরীরের স্বাভাবিক ব্যালেন্স নষ্ট হতে পারে। এবং খালিপেটে লিচু খেলে শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে। এতে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই লিচু সুস্বাদু হলেও অতিরিক্ত পরিমাণে লিচু না খাওয়াই ভালো। প্রতিদিন ভরাপেটে ১০/১২ টি লিচু খাওয়া যেতে পারে।

শেষ কথা

আমার এই পোস্টের মাধ্যমে লিচু সম্পর্কে কিছু তথ্য জানানোর চেষ্টা করেছি। লিচু একটি গ্রীষ্মকালীন সুস্বাদু ও পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি ফল। তাই ছোট বড় কম বেশি আমরা সবাই লিচু খেতে পছন্দ করি। তাই লিচু দেখলেই আমরা না খেয়ে থাকতে পারিনা। তবে অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নেই। অতিরিক্ত পরিমাণে লিচু খেলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রিয় পাঠক, আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করেছি আপনাদের ভালো কিছু উপহার দেয়ার কতটুকু দিতে পেরেছি জানিনা। আমার লেখার মধ্যে ভুল ত্রুটি থাকতে পারে। আশা করি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এতক্ষণ ধৈর্য ধরে আমার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url