কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে দূর করার ঘরোয়া উপায়
কোষ্ঠকাঠিন্য একটি শারীরিক সমস্যা। কোষ্ঠকাঠিন্য ভোগে নাই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এটা প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশু উভয়ের ক্ষেত্রে হতে পারে। তাই অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে চাই।
কোষ্ঠকাঠিন্য যে ওষুধ ছাড়াই ঘরোয়া উপায়ে দূর করা সম্ভব তা হয়তো অনেকেই জানে না। তাই এই পুরো বিষয়টি সম্পর্কে জানতে হলে এ পুরো পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে।
ভূমিকা
কোষ্ঠকাঠিন্য মূলত পায়খানা শক্ত বা কষা হওয়াকেই বুঝাই। এটা ছোট বড় উভয়েরই হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে যেমন, মানসিক চাপ, ধূমপান, খাদ্যাভ্যাস, ইত্যাদি কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পাইলস বা অর্শ রোগ বা পায়ুপথের রোগ তৈরি হতে পারে। কিন্তু অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানেনা। তাই অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে চাই। তাই আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে দূর করার ঘরোয়া উপায়, বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ওষুধ, কোষ্ঠকাঠিয়া দূর করার সিরাপ ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাল্লাহ। তাই এ বিষয়টি সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে হলে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ
সাধারণত সপ্তাহে যদি তিন থেকে চার বার এরকম পায়খানা হয় তাহলে আমরা তাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলতে পারি। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য হলে যেসব লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে তা নিম্নে দেওয়া হলঃ
- পায়খানা শুকন শক্ত চাকার মতো হওয়া
- পায়খানার আকৃতি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হওয়া
- পায়খানা করতে কষ্ট ও ব্যাথা অনুভব করা
- পায়খানা ক্লিয়ার হচ্ছে না এমন অনুভব করা
- পেট ভারি লাগা , পেট ফাঁপা, বমি বমি ভাব অনুভব করা
কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়
কোষ্ঠকাঠিন্য বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ গুলোর হল। যেমন,
খাবারের তালিকায় আশযুক্ত বা ফাইবার যুক্ত খাবার যথেষ্ট পরিমাণে না থাকা
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা
ফাইবার যুক্ত খাবার না খাওয়া
খাবার তালিকায় আঁশযুক্ত খাবার না রাখা। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য আশযুক্ত খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমাদের পরিপাকতন্ত্রেকে ত্বরান্বিত করতে ফাইবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিপাকতন্ত্রের যে জায়গায় পায়খানা তৈরি হয় ও জমা থাকে ফাইবার সেখানে পঞ্জের মত কাজ করে থাকে। ফলে পায়খানা নরম ও ভারী হয়, এবং সহজেই শরীর থেকে পায়খানা বের হয়ে আসে। তাই আমাদের খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার না থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা
কোষ্ঠকাঠিন্যর আরেকটি অন্যতম কারণ হলো যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান না করা। কারণ পানি ফাইবারের সাথে মিশে পায়খানাকে নরম করে তুলে। যার ফলে পায়খানা পরিপাকতন্ত্রের ভিতর দিয়ে খুব সহজে চলাচল করতে পারে। তাই যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
অলসভাবে সময় কাটানো
অলসভাবে শুয়ে বসে না থেকে নিয়মিতভাবে শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে বা ব্যায়াম করতে হবে। শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করলে আমাদের পরিপাকতন্ত্র অর্থাৎ পেটের ভিতরের নারী ভুড়িগুলো সচল থাকে। তাই নিয়মিতভাবে শারীরিক পরিশ্রম না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
মানসিক চাপ
মানসিক চাপের কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। অনেক সময় বেশি বেশি চিন্তা ভাবনা করা কোন কিছু নিয়ে উদদিগ্ন থাকা ইত্যাদির কারণে শারীরবৃত্তি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
অনেক সময় ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। যেমনঃ
- ট্রামাডল বা ওপিয়েট জাতীয় ব্যথার ওষুধ
- আইবুপ্রোফেন
- আয়রন
- ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট
- এছাড়াও কোমর থেরাপিতে ব্যবহৃত কিছু ওষুধ
পায়খানার বেগ আসলে তা চেপে না রাখ
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে অনেকেই টয়লেটে যেতে ভয় পাই। কারণ মলত্যাগের সময় ব্যথা লাগে বা কষ্ট অনুভব হয়। কিন্তু পায়খানার বেগ আসলে যদি আমরা চেপে রাখি তাহলে শরীর সেখান থেকে পানি শুষে নিতে থাকে। এই জমে থাকা পায়খানা দিনে দিনে শক্ত হয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে দূর করার ঘরোয়া উপায়
- ফাইবার যুক্ত খাবার
- বেশি করে পানি পান
- প্রতিদিন ব্যায়াম করা
- পায়খানার বেগ আসলে তা চেপে না রেখে পায়খানা করা
- মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করা
- ওষুধের পার্শ্বপ্রতিকটার বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে
শাকসবজি
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শাকসবজি। কারণ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে আশ বা ফাইবার রয়েছে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় টাটকা মৌসুমী শাকসবজি রাখতে হবে। এসকল সবজির মধ্যে লাউ, পেঁপে, চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, ঢেঁড়স ইত্যাদি। এছাড়াও খাবার তালিকায় সালাত রাখতে হবে। যেমন, শসা কাঁচা পেঁপের সালাত রাখা যেতে পারে।
কলা
কলা ফাইবারের আরেকটি অন্যতম উৎস। কলাতে প্রচুর পরিমাণে আশ রয়েছে। তাই যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তারা প্রতিদিনের সকালের নাস্তায় একটি করে কলা রাখতে পারেন।
আপেল
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আপেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে একটি করে খোসা সহ আপেল খান। কারণ আপেলের খোসায় প্রচুর পরিমাণে আশ রয়েছে, যা পায়খানাকে নরম করতে সাহায্য করে।
নাশপাতি
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় নাশপাতি রাখা যেতে পারে। প্রতিদিন একটি করে নাশপাতি খেলে আমাদের দৈনন্দিন আশের চাহিদার প্রায় ২২ শতাংশ পূরণ হয়। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে নাশপাতি খেতে হবে।
ইসবগুলের ভুসি
ইসবগুলেরভুষি কোষ্ঠকাঠিন্যদূর করার হতেপারে সহজ সমাধান। কারণ ইসবগুলের ভুষি প্রাকৃতিকভাবেই পায়খানা বা মলকে নরম করতে সাহায্য করে। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে আশ রয়েছে। তাই সকালে খালি পেটে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে দুই চা চামচ ইসবগুলের ভুষি মিশিয়ে পান করতে হবে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও একইভাবে পান করতে পারেন। এতেই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে এবং পেট পরিষ্কার হবে।
তোকমা
তোকমা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। একটি পরিষ্কার পাত্রে তোকমা পানিতে ভিজে রেখে এক ঘন্টা পর খেতে হবে। এতে করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার পাশাপাশি খাবারের রুচি বৃদ্ধি করে।
টক দই
টক দই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে একটি চমৎকার সমাধান। কারণ টক দই হচ্ছে প্রোবায়োটিক সম্পূর্ণ খাবার, যা হজ শক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়াও এতে উপকারী ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন খাবার খাওয়ার পরে এক কাপ টক দই খেতে পারেন।
বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়
প্রায় প্রতিটি বাবা-মায়ের একটি অভিযোগ থাকে জে তার বাচ্চা খেতে চাই না। খাবারের প্রতি অনীহা। খাবারের প্রতি অরুচির অন্যতম একটি কারণ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। অনেক বাবা-মাই তা বুঝতে পারে না কারণ পায়খানা নরম হলেও অনেক সময় পেট পরিষ্কার হয় না ফলে শিশুর ঠিকমতো খেতে চাই না। খাবারের প্রতি অরুচি দেখা দেয়। তাই প্রতিটি বাবা-মায়ের উচিত তার শিশু কেমন পায়খানা করে সেদিকে লক্ষ্য রাখা। আবার অনেক বাবা মা জানে না ওষুধ ছাড়াও বাচ্চাদের ঘরোয়া উপায়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করা সম্ভব। যেমন
- প্রতিদিনের খাবারে ডায়েটারি ফাইবার রাখতে হবে
- প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডায়েটরি ফাইবার
- হাইড্রেটেড রাখতে হবে
প্রোবায়োটিক খাবার
প্রতিদিন প্রবায়োটিক যুক্ত খাবার খেতে হবে। কারণ প্রোবায়োটিক পঞ্চতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং স্বাস্থ্যকর অন্ত্র বজায় রাখতে সাহায্য করে। যেমন, দই,মিষ্টি, রসমালাই ইত্যাদি। দই একপ্রকার স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। তাই প্রতিদিন খাবার পরে এক থেকে দুই চা চামচ বাচ্চাদের দই খাওয়ানো উচিত।
টয়লেটে রুটিন ঠিক করে দেয়া
বাচ্চাদের টয়লেটের রুটিন করে নিয়মিত সঠিক সময় পায়খানা করানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দিনে দুই বার করে পায়খানা করানোর অভ্যাস করতে হবে। এবং আপনার শিশু পায়খানা করার সময় যেন অন্যদিকে মনোযোগী না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তাই সময় মত প্রতিদিন যদি দুইবার করে পায়খানা করে তাহলে পেট পরিষ্কার থাকবে, খাবারের রুচি আসবে, এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে থাকা যাবে।
খাদ্যাভ্যাস
কিছু খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনেও বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা সম্ভব। যেমন কাঁচা খাবার না দিয়ে সেদ্ধ বা নরম জাতীয় খাবার খেতে দিতে হবে। এক্ষেত্রে নরম খিচুড়ি, ভাত, ডাবের পানি, শরবত, ইত্যাদি খাবারগুলো খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এতে করে পায়খানা নরম হবে এবং খুব সহজেই পায়খানা শরীর থেকে বের হবে ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে।
বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঔষধ
এই ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো প্রয়োগ করার পরে যদি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর না হয় তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করাতে হবে। যমন,Dulcolax Bisacodyl,এগুলো হচ্ছে ব্র্যান্ড নাম এটি ট্যাবলেট এবং তরল হিসেবে পাওয়া যায়। এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।Dulcolax খেলে ৩০ মিনিট বা ১ ঘন্টার মধ্যে টয়লেট ক্লিয়ার হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সিরাপ
ল্যাকটুলোজ সিরাপ বা পিকলাস যেটা( সোডিয়াম পিকোসালফেড)এই সিরাপ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়াতে পারেন। এই গুলো খাবার ৬ঘন্টার মধ্যে পায়খানা হয়।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণে হয়তোবা জানতে পেরেছেন কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে দূর করার ঘরোয়া উপায়, বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠি দূর করার উপায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সিরাপ, বাচ্চাদের কোষ্ঠকাটা দূর করার ওষুধ ইত্যাদি সম্পর্কে। আশা করি এই পোস্টটি পড়ে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো জানতে পেরেছেন। এই তথ্যগুলো আপনার বাস্তব জীবনে কাজে লাগিয়ে উপকৃত হতে পারেন। আপনারা যদি বিন্দু পরিমাণ উপকৃত হন তাহলে আমার লেখাটি সার্থক হবে। এবং আমার এই পোস্টটি সম্পর্কে যদি কোন মতামত থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই পোষ্টের কমেন্ট সেকশনে গিয়ে আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যাবেন। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url