ডায়াবেটিস রোগীর আদর্শ খাদ্য তালিকা
ডায়াবেটিকস অতি পরিচিত ও দীর্ঘমেয়াদি একটি রোগ।রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়াকেই মুলত ডায়াবেটিকস বলা হয়।এ রোগ হলে খাবার দাবার বুঝে শুনে খেতে হয়। তাই অনেকেই জানে না যে ডায়াবেটিস রোগীর আদর্শ খাদ্য তালিকা কি।
প্রিয় পাঠক, চিন্তার কোন কারণ নেই,কারণ আজ আমি আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে ডায়াবেটিস রোগীর আদর্শ খাদ্য তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই এ পুরো বিষয়টি জানতে হলে আমার এই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
ভূমিকা
ডায়াবেটিস রোগ অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তেছে। এই রোগ হলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে প্রভাবিত করে। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪২ কোটিরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিকস রোগে আক্রান্ত।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে এ রোগ বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করতে পারে। তাই আমাদের ডায়াবেটিকস সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। ডায়াবেটিস রোগ হলে আমাদের জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করে। তাই অনেকেই ডায়াবেটিস রোগীর আদর্শ খাদ্য তালিকা, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সবজি, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ফল , এবং কোন কোন খাবার নিষিদ্ধ ইত্যাদি বিষয়ে জানতে চাই। তাই আমার এই পোস্টের মাধ্যমে এই পুরো বিষয়টি আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আমার এইপোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
ডায়াবেটিকস কি
ডায়াবেটিকস রোগীদের আদর্শ খাদ্য তালিকা সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে ডায়াবেটিকস সম্পর্কে জনা জরুরী। আমি আগেই বলেছি রক্তে শর্করার পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনাই বেশি হওয়াকে ডায়াবেটিকস বলা হয়। ডায়াবেটিকস সাধারণত ৪ ধরনের হয়ে থাকে।
- টাইপ -১,
- টাইপ -২
- গেষ্টেশনাল এবং
- অন্যান্য।
টাইপ-১ ডায়াবেটিকস
টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে তাদের শরীরে নিয়মিতভাবে ইনসুলিন নিতে হয়। তা না হলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে এমনকি রোগী মারাও যেতে পারে। ৫-১০ শতাংশ মানুষ টাইপ -১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
টাইপ-২ ডায়াবেটিকস
এই ধরনের রোগীদের শরীরে ইনসুলিন থাকে কিন্তু কাজ করতে পারে না। তাই আমরা যে খাবারই খাই শরীরে গ্লুকোজ হিসেবে জমা হতে থাকে। এই অবস্থাকেই টাইপ -২ ডায়াবেটিস বলা হয়। এই টাইপের ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যায় বেশি। প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ মানুষ এই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়।
গেষ্টেশনাল ডায়াবেটিস
এই ডায়াবেটিসে মূলত গর্ভবতী মহিলারাই বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। কারণ গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন হরমোনের তারতম্য ঘটে। আর কিছু হরমোন ইনসুলিন প্রতিরোধের জন্য দায়ী। তবে বেশিরভাগ মহিলার ক্ষেত্রেই প্রসব পরবর্তী স্বাভাবিক গ্লুকোজ সহনশীলতাই ফিরে আসে। তবে পরবর্তী জীবনে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায় প্রায় (৩০-৬০)শতাংশ। প্রায় ২-৫ শতাংশ মানুষ এই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
অন্যান্য টাইপ ডায়াবেটিকস
এ ধরনের ডায়াবেটিকস হলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় না। এটি হলে প্রচন্ড তৃষ্ণার অনুভূতি হতে পারে। ঘন ঘন পানির পিপাসা লাগতে পারে। এবং কম এন্টি -ডাই ইউরেটিক হরমোন নিঃসরণের কারণে ঘন ঘন প্রসব তৈরি হয়। এটি প্রায় ১-২ শতাংশ মানুষের হয়ে থাকে।
ডায়াবেটিসের লক্ষণ
রক্তে চিনির মাত্রা বেশি হলে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন, ঘন ঘন প্রসবের চাপ দেওয়া, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, ওজন কমে যাওয়া, দুর্বলতা, ক্ষত দেরিতে সারা, রক্তনালী ও স্নায়ুতে ক্ষতি, পায়ের পচন, স্নায়ু গুণবতী হ্রাস, এবং স্ট্রক বা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই এ লক্ষণ গুলো দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা জানতে এখানে চাপ দিন
ডায়াবেটিস রোগীর আদর্শ খাদ্য তালিকা
রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়াকে ডায়াবেটিকস বলা হয়। আমরা যে প্রতিদিন খাবার গ্রহণ করে থাকি এই খাবারগুলো আমাদের শরীরের অগ্ন্যাশায় ইনসুলিন নামক হরমোন নিঃসৃত করে থাকে। যা কোষে গ্লুকোজ পৌঁছে দেয়। আর এই গ্লুকোজ শরীরে জ্বালানি হিসেবে কাজ করে থাকে। যখন অগ্ন্যাশয় প্রয়োজনীয় ইনসুলিন উৎপাদন হয় না তখন শরীরের কোষগুলো ইনসুলের প্রতি সাড়া দিতে পারে না। তখন ডায়াবেটিকস দেখা দেয়। তাই ডায়াবেটিকস হলে আমাদেরকে অনেক খাবার বুঝে শুনে খেতে হয়। প্রিয় পাঠক এখন আমি ডায়াবেটিকস রোগীদের আদর্শ খাদ্য তালিকা সম্পর্কে আলোচনা করব।
খেজুর
খেজুর ডাইবেটিকস রোগীদের জন্য হতে পারে একটি আদর্শ খাবার। যদিও অনেকেই মনে করেন খেজুর খেতে অনেক মিষ্টি তাই ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য এটি ক্ষতিকর। কিন্তু এ ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল ।কারন খেজুরে রয়েছে উচ্চমানের ফাইবার যা ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফাইবার সেলে গ্লুকোজের শোষণকে ধীরগতি করে ফলে রক্তের সরকারের মাত্রা স্থির থাকে। এছাড়াও খেজুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে বেশি যা শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যাল গুলোকে ধ্বংস করে এবং ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
তিসি
তিসি একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর বীজ যা মানব শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কারণ তিশির বীজে রয়েছে উচ্চমানের ফাইবার, ওমেগা থ্রি, অমেগা ৬,ফ্যাটি এসিড ইত্যাদি। এই বীজগুলো ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকরী। এবং পাশাপাশি রক্ত শর্করার মাত্রা কমিয়ে দে। তাই এই বীজগুলি পানিতে ভিজিয়ে প্রতিদিন খেতে পারেন।
দুধ
দুধ পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি খাবার। এতে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি ইত্যাদি রয়েছে। এই পুষ্টি উপাদান গুলো ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী তাই দুধ ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য ভিটামিনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে।
তুলসী
তুলসী হতে পারে ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য একটি আদর্শ খাবার। তুলসির ঔষধি গুনাগুনের কথা আমরা সবাই কমবেশি জানি। তুলসি একটি ঔষধি গুনাগুন সম্পন্ন উদ্ভিদ। এই তুলসী ঠান্ডা জ্বর সর্দি কাশির পাশাপাশি ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটাকে প্রাকৃতিক ইনসুলিনও বলা হয়। এটা শরীরে গ্লুকোজের মাত্র কমাতে এবং ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাই প্রতিদিন সকালে তুলসী পাতার রস এবং মধু একসঙ্গে খেলে সর্দি কাশি ভালো হওয়ার পাশাপাশি ডায়াবেটিসের জন্য উপকারে আসে।
মটরশুটি
মটরশুটি ডায়াবেটিকস ও হৃদরোগের জন্য খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন প্রায় ২০০গ্রাম মটরশুটি খেলে টাইপ টু ডায়াবেটিকস হৃদরোগ উচ্চ রক্তচাপের মত মারাত্মক রোগগুলোর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এগুলো প্রোটিন ফাইবার ভিটামিন এবং খনিজের ভালো হিসাবে কাজ করে থাকে।
পানীয়
পানির অপর নাম জীবন। পানি ব্যতীত মানুষ বাঁচতে পারে না। পানি মানব দেহের সব কোষের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য উপাদান। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত। যাতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে ফলে ডায়াবেটিকস বৃদ্ধি পায় না।
শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবার
শ্বেতসার মানবদেহের অন্যতম প্রধান শক্তির উৎস। বিশেষ করে জটিল কার্বোহাইড্রেট শ্বেতসার জাতীয় খাবার আমাদের দেহে আস্তে আস্তে শর্করা পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং পাশাপাশি দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি প্রদান করে থাকে। শ্বেতসারের অন্যতম উৎস হলো বাদামি চালের ভাত, লাল আটার রুটি, ওটস ইত্যাদি। তাই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
প্রোটিন মানব স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি ভিটামিন। প্রোটিন মানুষের শরীরের কোষ গঠনে এবং মেরামতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা প্রাণিস এবং উদ্ভিদোষ উৎস থেকেপ্রোটিন সংগ্রহ করে খেতে পারেন যা কোষ গঠনে এবং মেরামতের সাহায্য করে। ভালো প্রোটিনের উৎস হতে পারে মাছ ডাল টক দই এবং নাটস।
চর্বি বা ফ্যাট
চর্বি মানব শরীরের জন্য খুবই অপরিহার্য একটি উপাদান। চর্বি হলো শক্তির ভান্ডার বা উৎসব। কিন্তু চর্বি বেশি হল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এতে করে ওজন বেড়ে যাই। তাই স্বাস্থ্যকর চর্বির উৎস যেমন অলিভ অয়েল, বাদাম,এবং ফ্যাট, মাছ খাওয়া উচিত।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ফল
এই ফল গুলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারি।
বেরি
ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, রাসবেরি, ব্ল্যাকবেরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল। এছাড়াও এতে কম গ্লাইসেমিক রয়েছে।
আপেল
ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আপেল রাখা উচিত। টাইপ টু ডায়াবেটিকস রুখতে সাহায্য করে এবং ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
নাশপাতি
নাশপাতিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা হজম কারী শর্করাসহ নাশপাতি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
সাইট্রাস ফল
এ জাতীয় ফলের মধ্যে রয়েছে, কমলালেবু, জাম্বুর, লেবু এবং, ভিটামিন সি, এবং দ্রব্যনীয় ফাইবার সর্ব করে থাকে। এছাড়াও আরো ভালো গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
চেরি
ব্লুবেরির মতোই চেরিতে রয়েছে অ্যান্হসায়ানিন।যা রক্তে ইন্সুলেনের মাত্রা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে তোলে। ফলে ডায়াবেটিসের মাত্রা কমে যায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসে।
পীচ
এই ফলে রয়েছে প্রয়োজনীয় ফাইবার এবং ভিটামিন যা রক্তে শর্করার ওপর তুলনামূলকভাবে কম প্রভাব ফেলে থাকে।
বরই
বড়ই এ রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
কিউই
কিউই ফাইবার সমৃদ্ধ একটি এবং ফল কম কার্বোহাইড্রেট। এছাড়াও কিউই গ্লাইসেমিক সূচক এবং ডায়াবেটিকস বান্ধব একটি ফল।
বেদেনা
বেদেনা ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী। সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে বেদেনার ভিতরে। যার ফলে ফ্রি রেডিক্যাল ডায়াবেটিসের মাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে থাকে।
আঙ্গুর
আঙ্গুরের মধ্যে থাকে ফাইটোকেমিক্যাল রেসভারেট্রল যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।
তরমুজ
তরমুজ ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে যা রক্তে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। যার ফলে ডায়াবেটিসের প্রভাবে হওয়া কিডনির জন্য ক্ষতি রুখতে সাহায্য করে তরমুজ।
এপ্রিকট
এপ্রিকোর্ট ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। এই ফল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ফাইবার এবং গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিপ্রধান সরবরাহ করে থাকে।
কমলালেবু
ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য কমলালেবু একটি আদর্শ ফল। কারণ কমলালেবুতে ফ্লাভনলস ও ফেনোলিক অ্যাসিড রয়েছে। আর এই দুই উপাদান রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রন রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পেঁপে
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেঁপে একটি খুবই উপকারী ফল। কারণ পেঁপের ভিতরে এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে শুধু ডায়াবেটিসের জন্যই নয় হার্ট ও নার্ভ এর জন্যও উপকারী।
পেয়ারা
পেয়ারা ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। কারণ এই ফলে গ্লাইসেমিক ইনটেক্স এর পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে যা টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাই। এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সবজি
পালং শাক
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পালংশাক খুবই উপকারী। এটা ওষুধের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ এ শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, আইরন, ক্যালসিয়াম, প্রোটিনসহ আরো অনেক পুষ্টি উপাদান, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।
মিষ্টি কুমড়া
ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য মিষ্টি কুমড়ার বীজ খুবই উপকারী একটি উপাদান। এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে থাকে পলি স্যাকারাইড নামক কার্বোহাইড্রেট যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে থাকে। এছাড়াও এর বীজে উপকারী চর্বি ও প্রোটিন থাকে। যেটা ডায়াবেটিসের জন্য খুব উপকারী।
ঢেঁড়স
ঢেঁড়স ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী একটি সবজি। কারণ এতে আছে পটাশিয়াম, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ফাইবার ইত্যাদি। যা শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগানোর পাশাপাশি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
টমেটো
টমেটো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ সবজি গুলোর মধ্যে অন্যতম। এতে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপিন নামক একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যেটা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও এই সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এছাড়াও হাটের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।
ব্রকলি এবং বাধাকপি
ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য ব্রুকলি একটি আদর্শ সবজি। কারণ এতে রয়েছে আয়রন, ভিটামিন সি, ফাইবার, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম সহ, একাধিক পুষ্টিউপাদান।
গাজর
গাজর পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি খাবার। কারণ গাজরে প্রচুর পরিমাণে, বিটা ক্যারোটিন, ফাইবার, ভিটামিন কে ওয়ান, ভিটামিন এ ও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এছাড়াও গাজরে গ্লাইসেমিক ইনটেক্স এর পরিমাণও কম থাকে। মাত্র ১৬ শতাংশ। তাই গাজর খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ে না বরং কমে যাই। ফলে ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
শসা
শসা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি সবজি। এটা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় যেমন, রান্না করি তরকারি হিসেবে, সালাতে,এমনকি কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায়। শসা আমাদের ওজন কমাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে শ্মশায় থাকা পুষ্টিকর উপাদান মানবদেহের ইনসুলিন তৈরিতে সাহায্য করে থাকে। ফলে ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
ডায়াবেটিকস রোগিদের এই খাবার গুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মিষ্টি জাতীয় খাবার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এ জাতীয় খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে তোলে। ফলে ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি আনার সাথে সাথে হৃদরোগ ক্যান্সারের ও ঝুঁকি বাড়াই। তাই চর্বিযুক্ত খাবার আমাদেরকে এড়িয়ে চলতে হবে।
তেলে ভাজাপোড়া খাবার ও চর্বিযুক্ত খাবার
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চর্বিযুক্ত ও তেলেভাজা খাবার অত্যন্ত ক্ষতিকর। যদিও আমরা জানি চর্বি আমাদের শরীরের জন্য শক্তি সঞ্চয় করে রাখে আবার অতিরিক্ত চর্বি আমাদের শরীরের ওজন বাড়িয়ে দেয়। ফলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিকস রোগীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চর্বি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য ঝোঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
লব
ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য লবণ একটি মারাত্মক ক্ষতিকর খাবার। অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করলে টাইপ টু ডাইবেটিক্স এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ি তোলে। এছাড়াও হৃদরোগ, স্ট্রোক,এবং কিডনি রোগের মত মারাত্মক রোগ হতে পারে। তাই ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য লবন না খাওয়াই ভালো।
শুকনো ফল
শুকনো ফল অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর হলেও বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি মারাত্মক ক্ষতিকর খাবার।উদাহরন হিসেবে বলা যায় ৫০ গ্রাম শুকনো খেজুর প্রায় ২৫ গ্রাম চিনি এবং ৪৩ গ্রাম কিসমিসে প্রায়,২৫ গ্রাম চিনি থাকে। তাই এ শুকনো ফল খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় এবং ডায়াবেটিসের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
প্রক্রিয়াজাত মাংস
প্রকিয়াজাত মাংস আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই ধরনের মাংসে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপাদান থাকে যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে। এছাড়াও এই ধরনের মাংসে সোডিয়ামের পরিমাণ খুব বেশি থাকে। আর অতিরিক্ত সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়ায়,, এবং হৃদরোগ ও স্ট্রোকের মত মারাত্মক ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। কারণ এই ধরনের মাংসে পুষ্টি উপাদান নষ্ট হয়ে যায়। তাই ডায়াবেটিকস সহ ক্যান্সার সহ নানা ধরনের রোগ হতে পারে।
কিসমিস
কিসমিস একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর খাবারহলেও ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। কারণ এতে চিনির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে।ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে তোলে এবং ডায়াবেটিক্স নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
লেখকের শেষ কথা
ডায়াবেটিকস বর্তমান একটি পরিচিত রোগ।দিন দিন এই রোগের হার বেড়েই চলেছে।তবে বালেন্স ডায়েট করলে এই রোগ নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। তাই আমাদের মাঝে অনেকেই ডায়াবেটিস রোগীর আদর্শ খাদ্য তালিকা সর্ম্পকে জানতে চাই।আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে ডায়াবেটিকস ডায়াবেটিস রোগীর আদর্শ খাদ্য তালিকা ,ডায়াবেটিকস রোগির ফল,সবজি ইত্যাদি সর্ম্পকে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।আশা করি এতক্ষনে এই সমপুর্ন বিষয়টি সর্ম্পকে জানতে পেরেছেন।আমরা যদি এই বিষয় গুলো মেনে চলি তাহলে আশা করি ডায়াবেটিকস কমানো সম্ভব হবে ইনশাল্লাহ।সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url