বাচ্চাদের মুখে ঘা হলে করণীয়
আসসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। পরম করুনাময়ী আল্লাহর নামে লেখা শুরু করলাম। প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা জানবো বাচ্চাদের মুখে ঘা হলেকরণীয় বা মুখের ভিতরে সাদা ঘা হলে করণীয়।
অনেকে জানতে চান বাচ্চাদের মুখে ঘা হলে করণীয় কি বা কি ওষুধ ব্যবহার করব এবং কোন ক্রিম দিতে হবে ইত্যাদি। তাই ধৈর্য ধরে আমার এই পোস্ট শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন আশা করি আপনার কাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের উত্তর পাবেন।
বাচ্চাদের মুখে ঘা হওয়ার লক্ষণ ও উপসর্গ
- প্রিয় পাঠক, বাচ্চাদের মুখে ঘা হলে করণীয় কি তা আলোচনা করার পূর্বে বাচ্চাদের মুখে ঘা হওয়ার লক্ষণ ও উপসর্গ কি এগুলো জানা খুবই জরুরী। তাই আর দেরি না করে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
- মুখের ঘা যেকোন বয়সের মানুষের হতে পারে। এটাকে ওরাল ক্যান্ডিডিয়াসিসও বলা হয়।এই ঘা সাধারণত ৬ মাসের কম বয়সী শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের বেশি হয়ে থাকে।
- এটি বাচ্চাদের মুখের কোলে চামড়া ফেটে যায়
- ঠোঁট জিহ্বায় ও গলার ভিতরে সাদা সাদা ছোপের মত হতে পারে।
- ঠোঁট জিহ্বা লাল হয়ে যাই
- মুখ দিয়ে লালা পড়তে পারে
- মুখ ব্যথা করতে পারে
- কোন কিছু খেতে পারে না এবং খাওয়ার সময় কান্নাকাটি করতে পারে
- শিশু অসুস্থ অনুভব করতে পারে
- ঘর চারপাশের লাল দাগ দেখা দেয়
- ক্ষতস্থান হলুদ সাদা বা ধুসর বর্নের হয়ে থাকে
- ক্ষতর পাশে ফুলে যেতে পারে
মুখের ঘা এর কারণ
- মুখের খাওয়া বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। তবে যে কারণগুলো গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে।
- ওরাল থ্রাশ বা মুখে ঘা সাধারণত ক্যানডিডা অ্যালবিকানস,ছত্রাকের বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে
- সাধারণত প্রতিটি মানুষের মুখ এবং পাচনতন্ত্রে ক্যানডিডা থাকে। সুস্থ ইমিউন সিস্টেম এবং কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া শৈলী ছত্রাকের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
- কিন্তু যখন ইমিউনি সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে তখন বিভিন্ন ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া আক্রমন করে থাকে। যার ফলে এ ধরনের ঘা হয়ে থাকে।
- আবার অনেক সময় ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবেও এ ঘা হতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের ফলেও মুখে ঘা হতে পারে।
- এছাড়াও দাঁতের ট্রিটমেন্টের সময় উড়াল টিস্যুতে আঘাত লেগে ঘা হতে পারে।
- এলার্জির কারণেও হতে পারে
- মানসিক চাপের কারণে হতে পারে
- অনেক হয় ঘুম কম হলেও ঘা হতে পারে
- এসিডিক খাবার খেলে ঘা হতে পারে যেমন কমলা আপেল স্ট্রবেরি ইত্যাদি।
বাচ্চাদের মুখে ঘা হলে করণীয়
আপনি যদি অনুভব করেন যে আপনার শিশুর মুখে ঘা হতে পারে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন।তবে ভয়ের কোন কারণ নেই শিশুদের মুখের ঘা খুব দ্রুত ভালো হয়ে যায়।এক্ষেত্রে আপনি অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ সেবন করতে পারেন। এই ওষুধ এখন তো মুখ এবং জিহ্বার ভিতরে পেন্টিং করে দিতে হয়। এভাবে দিনে ৩ থেকে ৪ বার ব্যবহার করলে খুব দ্রুত ঘা ভালো হয়ে যাই।
এই ঘা বয়সের উপর অনেকটা নির্ভর করে। সাধারণত ছয় মাসের নিচে বয়সী বাচ্চাদের বেশি হয়ে থাকে।তাই বাচ্চার বয়স নয় মাসের বেশি হলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। কারণ এটি অন্য কোন কারণে হতে পারে।এটা ভিটামিনের অভাবেও হতে পারে। তাই ডাক্তারের কাছে গেলে কোন ভিটামিনের অভাবে এ ঘা হয়েছে সেটা সনাক্ত করে ওষুধ প্রেসক্রাইব করে থাকে।
সাধারণত ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন বি১২ ট্যাবলেট দিয়ে থাকে এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে মাইক্রো ওরাল জেল প্রেসক্রাইব করে থাকে। তবে আপনি চাইলে ওষুধ ছাড়াও ঘরোয়া পদ্ধতিতে বাচ্চাদের মুখে ঘা ভালো করতে পারেন। এই ঘা দ্রুত ভালো করতে সংক্রমণ এলাকায় আপনি মধু লাগাতে পারেন।অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করেও দ্রুত মুখের ঘা ভালো করা সম্ভব। একটি তাজা ঘৃতকুমারীর পাতা সেকে ক্ষতস্থানে প্রয়োগ করতে পারেন। কারণ এলোভেরাতে রয়েছে ওষুধি গুন যেমন এ পাতার এন্টি ব্যাকটেরিয়াল একশন জা ঘা সারাতে সাহায্য করে।
পাঠক, দ্রুত ঘা সারাতে ওষুধগুলো প্রয়োগের পাশাপাশি এই ঘরোয়া টোটকা গুলো প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। এতেও যদি ভালো না হয় তাহলে দেরি না করে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ঘা হয়
প্রিয় পাঠক, এখন আমরা জানবো কোন কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ঘা হয়ে থাকে। আসুন দেরি না করে জেনে নিয়ে যাক।
মুখে ঘা হলে আমরা অনেক অসুবিধার মধ্যে পড়ে যাই। বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আরো বেশি অস্বস্তি অনুভূত হয়। তারা ঠিক মতো খাবার গ্রহণ করতে পারেনা। মুখের ভেতর ব্যথা করে, ভালোমতো খাবার গিলতেও পারেনা, খাবার অতিরিক্ত ঝাল মনে হয়, ইত্যাদি অসুবিধা সৃষ্টি হয়। কিন্তু হয়তোবা আমরা অনেকে জানিনা যে কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ঘা হয়ে থাকে।
সাধারণত শরীরে ভিটামিন বি কম্পেক্স এবং ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি দেখা দেয় তখনই ঘা হতে পারে। এই ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দিলে জিহ্বায় এবং মুখের তালুতে ঘা হয়ে থাকে। ফলে জিহ্বা ব্যথা ও ফুলে যেতে পারে।এবং মানুষ স্বাভাবিকভাবেই খাবারের স্বাভাবিক স্বাদ পায় না। অ্যানিমিয়া যা ভিটামিন বি ১২ এর অভাবের প্রতিক্রিয়া। এমনকি একজন মানুষের শ্বাসকষ্ট হতে পারে ভিটামিন বি১২ এর অভাবে।
মুখের ভেতর সাদা ঘা হলে করণীয় কি
আমরা অনেক সময় খেয়াল করে দেখতে পাই যে মুখের ভিতর সাদা সাদা ঘা হয়ে থাকে। এটা ছোট বড় উভয়েরই হতে পারে। অনেকে মনে করেন যে এ সাদা ঘা এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু অনেকে জানে না যে এ ঘা হলে কিভাবে ভালো করবেন। এই ঘা হলে কোন কিছু খাওয়া যায় না বিশেষ করে ঝাল জাতীয় খাবার খেতে গেলে প্রচন্ড ঝাল অনুভব হয়। মুখ জ্বালাপোড়া ও ব্যথা করে। তাই আসুন জেনে নেয়া যাক মুখের ভিতরে সাদা ঘা হলে কিভাবে ভালো করবেন।
গরম পানিতে একটু লবণ দিয়ে দিনে কয়েকবার ফুলকুচি করতে পারেন। এতে আপনার মুখের ব্যথা এবং ঘা আস্তে আস্তে ভালো হবে। এছাড়া আপনি ব্রেকিং সোডাও ব্যবহার করতে পারেন। মুখের ঘা সারাতে ব্রেকিং সোডা খুবই উপকারী। এটা ph এর মাত্রা ধরে রাখতে সক্ষম হয়। তাই আপনি যদি নিয়মিত এক কাপ পানিতে এক চা চামচ ব্রেকিং সোডা মিশিয়ে নিয়মিত ফুলকুচি করেন তাহলে এটা আপনার মুখের ঘায়ের জন্য খুবই উপকারে আসবে।
আপনি চাইলে ভার্জিন কোকোনাট অয়েল ব্যবহার করতে পারেন কারণ এতে রয়েছে অ্যান্টি ইন প্লেমেটরি এবং মাইক্রোবিয়াল উপাদান যা মুখের ব্যথা ও জ্বালাপোড়া কমাতে এবং দ্রুত ক্ষতস্থান সারাতে খুবই কার্যকরী। এছাড়া আপনি তুলোর মধ্যে ভর্জিন কোকোনাট অয়েল লাগিয়ে ক্ষতস্থানে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ও মুখের ঘা নিরাময় হয়। এছাড়া আপনি যেসব খাবারগুলোতে ভিটামিন বি টু এবং বি কমপ্লেক্স রয়েছে এ জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে পারেন। এছাড়া ঠান্ডা খাবার ও তরল জাতীয় খাবার যেমন পাবজি কলস হেমায়েত দই শরবত আইসক্রিম নরম ও আর্দ্র খাবার খাওয়া যেতে পারে। এ ধরনের খাবার খেলে আমাদের মুখ ও গলা ব্যথা করবে না এবং আমরা সহজেই এ খাবারটি গিলতে পারবো।
বাচ্চাদের মুখের ঘা এর মলম
এই ঘা সাধারণত ছোট বাচ্চাদের বেশি হয়ে থাকে। ৬ মাস থেকে নয় মাসের বাচ্চাদের বেশি হতে দেখা যাই। কিন্তু বাচ্চারা ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল খেতে পারে না। তাই তাদেরকে মুখের ঘা এর বিভিন্ন ধরনের মলম দেওয়া হয়ে থাকে। যেমন মুখের ঘা দ্রত দূর করার জন্য আন্টি মাইক্রোবিয়াল মাউথ ওয়াশ দিয়ে মুখের ভিতর পরিষ্কার করা হয়। এছাড়া এনালাল জেসিকা হলে এক জাতীয় মলম যা মুখের ঘা এর উপর লাগাতে হয়। যেটা আন্টি ইনফ্লামেটরি হিসেবে কাজ করে।ওষুধ সেবন ছাড়াও ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে আপনার বাচ্চার মুখের ঘা ভালো করবেন তার কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি নিম্নে দেয়া হলো
- দ্রুত ঘা সারাদিন দিনে তিন থেকে চার বার ঘি ব্যবহার করতে পারেন
- ঘি দ্রুত ক্ষত সারানোর পাশাপাশি ব্যথা কমায়
- নারিকেল ও দুধ দিয়ে গা গোল করলে ব্যথাও জ্বালা কমে যায়
- অ্যালোভেরা জেল পানিতে মিশে নিয়মিত কুলি করলে দ্রুত ঘা কমে যায়
- এছাড়া দই দিয়ে শিশুর ঘা সারানো যায়
- আপনি ব্যবহার করে শিশুর ঘা নিরাময় করতে পারেন। কারণ মধুতে রয়েছে জীবানু নাশক উপাদান।
- আপনি যদি এক বছর থেকে তিন বছরের শিশুদের মুখের ঘা ভালো করতে চান তাহলে এ পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আশা করি ভালো ফলাফল পাবেন।
- এগুলো ব্যবহার করার পরেও যদি ঘা ভালো না হয় তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন। এবং ট্রিটমেন্ট গ্রহণ করবেন।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, হয়তোবা এতক্ষণে জেনে গেছেন যে বাচ্চাদের মুখে ঘা হলে করণীয়। এছাড়া মুখের ভিতর সাদা ঘা হলে কি ওষুধ বা কি মলম ব্যবহার করতে হবে এবং এর ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট বা কি আমরা কিভাবে বুঝব যে আমাদের বাচ্চাদের মুখে ঘা হয়েছে এর উপসর্গ ও লক্ষণ কি ইত্যাদি। তাই আমার পরামর্শ থাকবে এ লক্ষণ বা উপসর্গ গুলো দেখা দিলে প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট হিসেবে এ পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করতে পারেন। আশা করি নিরাশ হবেন না ভালো ফল পাবেন। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ এতক্ষণ আমার সাথে থাকার জন্য আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url