মুখে ঘা হলে করনীয় ১৫টি প্রাকৃতিক উপায়


প্রিয় পাঠক, আজ আমি আলোচনা করব মুখে ঘা হলে করনীয় ১৫টি প্রাকৃতিক উপায়। মুখে ঘা যে কোন বয়সের মানুষেরই হতে পারে। তবে বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের বেশি হয়ে থাকে।৬ মাস থেকে ৩ বছরের বাচ্চাদের বেশি হতে দেখা যাই। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের হয়ে থাকে। ছোট বাচ্চাদের মাড়ি ঠোঁট বা জিব্বায় ছোট ছোট ঘায়ের মত দেখা যায়।

মুখে ঘা হলে করনীয় ১৫টি প্রাকৃতিক উপায়

আর এ ঘা হলে জিহবা ব্যথা হয় এবং কোন প্রকার খাবার খেতে গেলে অস্বস্তি বোধ হয়। প্রিয় পাঠক আর নয় দুশ্চিন্তা নিয়ে এসেছি ঘরোয়া সমাধান। তাই এ ঘা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের পোস্টটি মনোযোগ সহকারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে।

কি কি কারনে মুখে ঘা হতে পারে

আঘাত

জিহ্বায় দাঁতের কামড় লাগলে বা ধারালো কিছু আঘাত এমনকি শক্ত ব্রাশের কারণে আঘাত লাগতে পারে। এ থেকে ঘা সৃষ্টি হতে পারে।

ভাইরাস জনিত ইনফেকশন

ভাইরাসজনিত ইনফেকশনের কারণে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। যেমন হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস (এইচএসভি) ইত্যাদি এ ভাইরাসগুলোর সংক্রমণে মুখে ঘা হতে পারে।

পুষ্টির ঘাটতি

পুষ্টি বা ভিটামিন এর অভাবে ঘা হতে পারে। ভিটামিন বি১২, বি কমপ্লেক্স, আইরন ও প্লেটের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে মুখে ঘা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

খাদ্যের কারণে

কিছু খাবার গ্রহণের কারণেও ঘা হতে পারে। যেমন অ্যাসিটিক বা মসলাদার খাবার, ফাস্টফুড খাবার।এই খাবারগুলো মুখের সংবেদনশীল অঙ্গ যেমন মিউকাস মেমব্রেনকে আঘাত করতে পারে। তাই খাবার গুলো থেকে ঘা হতে পারে।
মুখের ঘা বা আলসারের আরো কিছু কারণ উল্লেখ করা হলোঃযেমন
  • জ্বর
  • পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব
  • ছোট ছোট টিস্যুর ক্ষতি
  • স্ট্রবেরি, আনারস কমলার মত অ্যাসিটিক খাবার গ্রহণ করা
  • অসতর্কতা ভাবে আপনার জিগহবা বা গালে কামড় লাগা
  • শক্ত টুথব্রাশ ব্যবহার করা এবং রুক্ষ টুথপেস্ট ব্যবহার করা
  • এলার্জির কারণে
  • মাসিকের সময় হরমোনের পরিবর্তনে
  • ইত্যাদি এ সকল কারণেও মুখে ঘা হতে পারে। তাই এ কারণগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো।

মুখের ঘা এর প্রকারভেদ

মুখে যে ঘা গুলো হয় সে ঘা গুলো কত ধরনের হতে পারে তা হয়তোবা আমরা জানিনা। পাঠক, আসুন জেনে নেয়া যাক মুখের ঘা এর বিভিন্ন প্রকারভেদ।

ক্যানকার ঘা(অ্যাপথাস আলসার)

এগুলোকে সাধারণ ধরনের মুখের আলসার বলা হয়। ছোটখাটো ট্রমা (যেমন মুখ কামড়ানো বা মুখে কামড় লাগা), অ্যাসিটিক খাবার এগুলোর মূল হতে পারে।ক্যানকার ঘা সাধারণত সাদা বা হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে এবং কেন্দ্রের চারপাশে লাল সীমানা থাকে।

লিউকোপ্ল কিয়া

এই ঘা হলে মুখের ভিতরে সাদা বা ধূসর রঙের দাগ তৈরি হতে দেখা যায়। এটা অতিরিক্ত কোষের বিস্তারের কারণে উদ্ভূত হয়ে থাকে। এটা ধূমপান বা তামাক জাতীয় জিনিস থেকে ঘা হতে পারে। এছাড়া কোন আপাতত কারণ ছাড়াও এ ঘা হতে পারে।

ওরাল লাইকেন প্লাকিয়া

এটি আপনার মুখে জরির মতো সাদা আলসার এবং বিরক্তিকর ত্বকে ফুসকুড়ি হতে পারে। এটি সাধারণত ৫০ বছর বা তার ঊর্ধ্বে বয়সী মেয়েদের প্রায় এতে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।

এরিথ্রাপ্লাকিয়া

এটি ধূমপান বা তামাক ব্যবহারের ফলে এ রোগটি হয়ে থাকে। এ রোগ হলে রোগীর জিহবার নিচে বা সামনের নিচের দাঁতের নিচে লালচে দাগ দেখা যায়।

মৌখিক গায়ক পক্ষি

মৌখিক গায়ক পক্ষী ছত্রাকের সংক্রমণ কে candida Albicans বলা হয়ে থাকে। এটি খামির অতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে। এন্টিবায়োটিক খাওয়ার ফলে অথবা ইমিউনিটি সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়লে এ রোগ প্রায়ইশ দেখা যায়।

মুখের ক্যান্সার

অনেক সময় মুখের ক্যান্সারের ক্ষত গুলোর সাথে লাল ও সাদা মুখের ঘা বা আলসার থাকতে পারে। এগুলো সাধারণত এমনিতে সারে না এ জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হয়। এবং সে অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হয়।

মুখে ঘা হলে করনীয় ১৫টি প্রাকৃতিক উপায়

এতক্ষণ আমরা জানলাম, মুখের ঘায়ের কারণবা কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ঘা হয়, এর উপসর্গ বা লক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে। এখন আমরা জানতে চলেছি মুখে ঘা হলে করনীয় ১৫টি প্রাকৃতিক উপায়।

কুসুম গরম পানি দিয়ে ফুলকুচি করা

পানির ভিতরের লবণ দিয়ে পানি গরম করে নিতে হবে। এই গরম পানি দিয়ে (সহ্য করার মত গরম) দিনে তিন চারবার ফুলকুচি করতে হবে। এভাবে নিয়মিত ফুলকুচি করলে মুখের ক্ষত দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং ব্যথা কমে যায়।

মধু

মধু মুখের আলসার নির্ময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ মধুতে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টি ইনফ্লামেটরি গুণ। তাই মধু সংক্রমণ এলাকার ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করতে দেয় না এবং পাশাপাশি ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। তাই দ্রুত ক্ষত সারাতে দিনে তিন থেকে চারবার আক্রান্ত এলাকায় ব্যবহার করতে পারেন।

এলোভেরা জেল

অ্যালোভেরা জেল মুখের ঘা শুকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।ঘৃতকুমারীর পাতা ছেকে নিয়ে এর জেল সংক্রামিত স্থানে প্রয়োগ করতে পারেন। কারণ এতে রয়েছে ওষুধি গুনাগুন যেমন প্রদাহরোধী এবং আন্টি মাইক্রোবিয়াল একশন, যা দ্রুত ঘা শুকাতে সাহায্য করে।

নারকেল তেল

মুখের ঘা বা আলছারের একটি কার্যকরী চিকিৎসা হতে পারে নারিকেল তেল। কারণ এতে ব্যাকটেরিয়া বিরোধী গুণ রয়েছে। নারিকেল তেল রোগের বিস্তার বন্ধ করে এবং পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী লাল ভাব কমাই। এই তেল আঙুলের ডগায় নিয়ে আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করতে হবে। এভাবে নিয়মিত প্রয়োগ করলে ধীরে ধীরে ক্ষত শুকিয়ে যায়।

অ্যাপেল সিডার ভিনেগার

এটি মুখের আলসারের জন্য খুবই উপকারী।এটি মুখের ঘা এবং ঘা থেকে ব্যথার সৃষ্টিকারী অনুজীবগুলো নির্মূল করে। তাই এটি মুখের আলসার ঘা শুকাতে প্রয়োগ করা যেতে পারে।

আইসিং

এটা মুখের ব্যথা ও যন্ত্রণা কমাতে এবং মুখের আলসার দ্রুত সারাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। একটি বরফ ডলি নিয়ে ঘাগুলিতে ঘষতে হবে। এটা ব্যথা কমানোর পাশাপাশি ঘাও শুকে যাই।

ব্রেকিং সোডা

ব্রেকিং সোডা মুখের আলসার চিকিৎসার জন্য খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। ব্রেকিং সোডা ফোলা কমানোর পাশাপাশি মুখের পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে যার ফলে মুখের ঘা দ্রুত কমে যায়।

লবঙ্গ তেল

আলসার নিরাময় লবঙ্গ তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। একটি তুলাই লবঙ্গ তেল নিয়ে আলসার বা ক্ষতস্থানে লাগাতে হবে। লবঙ্গ তেলে প্রাকৃতিক এবং ব্যাকটেরিয়াবিরোধী গুণাবলী রয়েছে। এটি জীবাণু মারতে এবং ব্যথা উপশম করতে গুরুতপর্ন ভমিকা পালন করে।

মৌখিক স্বাস্থ্য বিধি বজায় রখতে হবে

আলসার ভালো করতে দাঁত এবং মুখ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। এবং নরম টুথব্রাশ ব্যবহার করতে হবে। সোডিয়াম লোরিল সালফেট বিহীন টুথপেস্ট ব্যবহার করতে হবে। কারণ এতে জ্বালাপোড়া করতে পারে।

হলুদ

ঘরোয়া প্রতিকার গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো হলুদ।বিশেষ করে শিশুদের মুখের আলসারের চিকিৎসার জন্য খুব ভালো কাজ করে। কারণ এতে প্রদাহ বিরোধী, অ্যান্টিসেপটিক, এবং ব্যাকটেরিয়া বিরোধী বৈশিষ্ট্যগুলো রয়েছে। যা সকল ধরনের ঘা ক্ষত কাটা নিরাময় করতে সাহায্য করে। তবে এটি আপনি মধুর সাথে মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।

দই

মুখের ঘা বা আলসারের চিকিৎসার জন্য বিশেষ করে শিশুদের জন্য দই হতে পারে একটি কার্যকারী উপাদান। এ দই আক্রান্ত এলাকায় দিয়ে কিছুক্ষণ রাখতে হবে। কিছুক্ষণ রেখে খেয়ে ফেলতে হবে। দইটি টক হলে আরো ভালো হয়। কারন এই দয়ে থাকে ল্যাকটিক এসিড যা ক্ষত এলাকায় ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে।

পবিত্র বেসিল

বেসিল পাতা(যা তুলসী পাতা নামে পরিচিত) হতে পারে মুখের আলসারের জন্য একটি দুর্দান্ত ওষুধ। এই পাতার ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে মোটামুটি আমরা সবাই জানি। এ পাতার রস এবং মধু একসাথে মিশিয়ে খেলেও দ্রুত আলসার ভালো হয়।

পোস্ত দানা

চিনির মিছরি গুড়া পরিমান মত পোস্ত দানা এবং কোড়া নারিকেল একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। এটি বড়ির আকারে নিয়ে এসে আপনার সন্তানকে চকলেটের মত চুষতে দেন। এটা নিয়ে আপনার সন্তান কোন অভিযোগ করবে না এবং দ্রুত ঘা শুকিয়ে যাবে।

ঘি

মুখের আলসার নিরাময় করতে ঘি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে খুবই উপকারী। এই ঘি আপনি দিনে তিন থেকে চারবার আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করতে পারেন। এটি দ্রুত ঘা শুকাতে সাহায্য করে এবং পাশাপাশি ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। আপনার শিশু যদি ঘি অপছন্দ করে তাহলে আপনি ঘির বিকল্প হিসাবে পরিষ্কার মাখন দিতে পারেন।

আইসক্রিম 

কিছু কিছু আলসার আছে যা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। আবার কিছু আলসার চিকিৎসা ছাড়া যায় না। এ সময় ঠান্ডা জাতীয় খাবারগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে। কারণ এগুলো ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। যেমন আইসক্রিম আপনার সন্তানকে দিতে পারেন। এই আইসক্রিম শিশুদের দুর্দান্ত পছন্দের আইটেম। এতে তাদের কোন অভিযোগ নেই।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক,আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে মুখে ঘা হলে করনীয় ১৫টি প্রাকৃতিক উপায় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।এই প্রাকৃতিক উপায় প্রয়োগ করলে আশাকরি ভাল ফল পাবেন।এই গুলো ব্যবহারের পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।আশা করি বুঝতে পেরেছেন।আমার এই পোষ্টি পড়ে যদি উপকৃত হন তাহলে আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে এই পোষ্টি আপনার আপন জনের মধ্য শেয়ার করে দিবেন।আল্লহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url