চিরতরে মেছতা দূর করার ১০ ঘরোয়া উপায়
সবাই সৌন্দর্যের পূজারি।সুন্দরকে সবাই পছন্দ করে।তাই সুন্দর ত্বক কে না চাই। সুন্দর নরম কমল মসৃণ ত্বক সবাই প্রত্যাশা করে। কিন্তু এই সুন্দর ত্বকের উপর যখন ব্রণ ওব্রণ এর দাগ এবং মেছতার মতো কালো কালো ছোপ ছোপ দাগ পড় তখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেটা ছেলে হোক বা মেয়ে হোক। বিশেষ করে মুখের উপর মেছতার মতো কালো কালো দাগ পড়লে সুন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়।
প্রিয় পাঠক, আর নয় দুশ্চিন্তা, নিয়ে এসেছি চিরতরে মেছতা দূর করার ১০ ঘরোয়া উপায়। আজ আমি আমার এই পোস্টের মাধ্যমে চিরতরে মেছতা দূর করার ১০ ঘরোয়া উপায় এবং মেছতা দূর করার ক্রিম,ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাল্লাহ।
মেজতা কি
এখন আমরা জানব মেছতা জিনিসটা কি।মেছতা চিনেনা বা মেছতা সমস্যায় ভুগেন নাই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মশকিল।মেজতা সাধারণত (pigmentation Disorder)যার ফলে ত্বকে বাদামি বা ধূসর দাগ বিশেষ মুখে দেখা যায়। তবে মেছতা শরীরের অন্যান্য যায়গায়ও দেখা যায়।যেমন,নাক,গলা,গাল,ঘাড় ইত্যাদি যায়গাও হতে পারে। আমেরিকান একাডেমি অফ ডার্মাটোলজি তথ্য অনুসারে ১০% পুরুষের মেছতা সমস্যা দেখা যায়। এই গবেষণা থেকে বোঝা যায় নারীরা এ রোগে বেশি ভুগে থাকেন।
মেছতা কেন হয়
মেছতা সাধারণত যাদের বয়স ৩৫ বছরের বেশি তাদের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। এছাড়া যারা ত্বকের যত্ন নিতে চাই না বা অবহেলা করে তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি বেশি দেখা দেয়। তবে মেছতা কেন হয় এ বিষয়ে ডাক্তাররা এখনও পুরো পুরি নিশ্চিত নয়।এটি ত্বকে মেলানো সাইটস বা মেলোনিনের ত্রুটির কারণে হতে পারে। এমনকি জেনেটিক কারণে মেজতা হতে পারে।
এছাড়াও মেছতা হওয়ার সম্ভাব্য কারণ সমূহ
প্রখর সূর্যালোক
- গর্ভাবস্থায় হরমোনের চিকিৎসা বা জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়িগ্রহনের সময় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে
- বিভিন্ন রাসায়নিক কসমেটিকের বিভিন্ন পন্য ব্যবহারের কারণে
- বংশগত বা জেনেটিক কারণে
- ত্বকের যত্নে অবহেলা করার কারণে
চিরতরে মেছতা দূর করার ১০ ঘরোয়া উপায়
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমরা জানলাম, মেছতা কি,মেছতা কেন হয়, এখন আমরা জানবো চিরতরে মেছতা দূর করার১০টি ঘরোয়া উপায়।
- আপেল সাইডার ভিনেগার
১ টেবিল চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার ও ১ চা চামচ মধু এক সাথে ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।এর পর মেছতার যায় গায় লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।এই প্যাক্টি যদি আপনি শুধু মেছতায় লাগাতে চান তাহলে প্রতিদিন লাগাতে পারবেন।আর যদি মুখে লাগাতে চান তাহল একদিন পরপর লাগাতে হবে।
- অ্যালোভেরা
প্রথমে অ্যালোভেরা জেল ২ চা চামচ লেবুর রস ১ চা চামচ,ও পরিমান মত চিনি ভাল্ভাবে মিশিয়ে প্যাক তৈরী করতে হবে।এই প্যাকটি মেছতার যায়গায় লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।এই ভাবে সপ্তাহে ২-৩বার লাগাতে পারেন।
- কলার খোসা
মেছতা দূর করতে কলার খোশা গুরুতপুর্ন ভুমিকা পালন করে।কলার খোশার ভিতরের অংশ মেছতার যায়গায় লাগিয়া ৪-৫ মিনিট পর পানি দিয়া ধুয়ে ফেলতে হবে।এইভাবে এক দিন পর পর লাগাতে পারেন।
- মেছতা দূর করার তেল
মেছতা দূর করতে বিভিন্ন তৈল খুবই কাজ করে থাকে।যেমন,
আমন্ড অয়েল
প্রথমে অল্প আমন্ড অয়েল গরম করে নিতে হবে। তারপর এই তেল দুই থেকে তিন ফোটা হাতের আঙ্গুলে নিয়ে মেছতার জায়গায় হালকা করে মেসাজ করতে হবে। এরপর এক ঘণ্টা পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই তেল প্রাকৃতিক ব্লিচিং হিসেবে কাজ করে এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ই যা ত্বকের ভিতর থেকে ময়লা দাগ দূর করে।
আরগান অয়েল
আরগান অয়েল চুল ও ত্বকের জন্য খুবই ফলদায়ক।কারন এই তেলে রয়েছে ফ্যাটি এসিড ভিটামিন ও ক্যারোটিনয়েডস,যা এক সাথে কাজ করে আস্তে আস্তে মেছতার দাগ দূর করে । প্রথমে ত্বক ভালো ভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর ২-৩ ফোটা এই তৈল নিয়ে মেছতার যায়গায় লাগিয়ে হালকা মেসাজ করতে হবে।এইভাবে সারারাত রেখে পরের দিন ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি আপনি প্রতি দিন রাতে ঘুমানোর আগে লাগাতে পারেন।
অলিভ অয়েল
প্রথমে এই তেল হালকা করে গরম করে নিতে হবে। তারপর তেল অল্প করে আঙ্গুলে নিয়ে সারা মুখে মেসাজ করতে হবে। তেল না শুষা পর্যন্ত মেসাজ চালিয়ে যেতে হবে। এরপর এক ঘণ্টা পরে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে দিনে তিন থেকে চারবার মেছতার উপর এই তৈল লাগাতে পারেন।
টি ট্রি অয়েল
ত্বক ভালো রাখতে টি ট্রি অয়েলের কোন বিকল্প নেই। ত্বকের যত্নে টি ট্রি অয়েল খুবই উপকারী। মেছতা দূর করতে বা মেছতার দাগ কমাতে এই তেল ব্যবহার করতে পারেন। ১-২ ফোটা তৈল হাতের আঙ্গুলে নিয়ে মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ মেসাজ করতে হবে। এর কয়েকঘন্টা পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে আপনি দিনে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন।
- বিভিন্ন রকমের ফলের রস
চিরতরে মেছতা দূর করার ১০ ঘরোয়া উপায় বা পদ্ধতির মধ্য বিভিন্ন ফলের রসের ব্যবহার।
প্রিয় পাঠক, বিভিন্ন প্রকার ফলের রস ব্যবহার করেও আপনি চিরতরে মেছতা দূর করতে পারেন। যেমন,
লেবুর রস
প্রথমে লেবুর রসের সাথে অল্প পরিমাণে মধু মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর এই রস মেছতার দাগে লাগিয়ে ১৫থেকে ২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। আপনি এ প্যাকটি প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন তবে একদিন পর পর ব্যবহার করাই ভালো। প্রতিদিন ব্যবহার করলে ত্বকের সেন্সিটিভিটি নষ্ট হতে পারে। এই প্যাকটি মেছতার দাগ দূর করার পাশাপাশি অন্যান্য দাগও দূর করে।
টমেটো রস
টমেটোর রস মেছতা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ এ রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যা ত্বকের টাইরোসিনেজার এক্টিভিটি কমাই ও মেছতা দূর করার পাশাপাশি ত্বককে ফর্সা করে। প্রথমে একটি ছোট্ট টমেটো নিয়ে ভালোভাবে ম্যাশ করে নিতে হবে।এই ম্যশ করা টমেটোটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। আপনি চাইল একটি প্যাকটি প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন।
পেঁয়াজের রস
একটি ছোট্ট পিয়াজ গ্র্যান্ড করে নিয়ে এর রস বের করে নিতে হবে। এর সাথে এক চা চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এটি মুখে লাগিয়ে তিন চার মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে। আশা করি ভালো ফল পাবেন।
- টক দই
এক টেবিল চামচ টক দই ও এক চা চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর মুখ পরিষ্কার করে নিতে হবে। পরিষ্কার মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ১০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই প্যাকটি প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন।মেছতার দাগ দূর করার পাশাপাশি ত্বককে ফর্সা করে।
- মুলতানি মাটি
মুলতানি মাটি ত্বকের যত্ন নিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মুলতানি মাটি ত্বকের মরা কোষগুলো পরিষ্কার করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। এটা ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব দূর করে এবং ত্বককে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল লাবণ্যময়ী করে তোলে।
- গোলাপজল, শশুর রস ও সবু চায়ের প্যাক
প্রথমে পরিমাণ মতো, গোলাপ জল, মুলতানি মাটি, লেবুর রস, এবং পানি একসাথে মিশে একটি মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এই মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে।
এছাড়াও আপনি ১ চা চামচ টমেটোর রস এবং চন্দন গুড়া ২ চা চামচ মুলতানি মাটি একসাথে মিশে ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়। এই প্যাকটি আপনি সপ্তাহে ১-২ দিন ব্যবহার করতে পারেন।
- স্ট্রবেরি
স্ট্রবেরি ত্বকের যত্নে খুবই উপকারী। কারণ এতে রয়েছে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি, হাইড্রক্স এসিড স্যালিক অ্যাসিড, এলিজিক এসিড ইত্যাদি। যেটা ত্বকের মরা কোষ দূর করার পাশাপাশি, অন্যান্য দাগ, ব্রুন,ও ত্বক ফাটা থেকে রক্ষা করে।
- হলুদ
কাঁচা হলুদের গুনের কথা আমরা কম বেশি সবাই জানি। একটি যুগ যুগ ধরে রূপচর্চায় ব্যবহার করে আসছে। কারণ হলুদে থাকে কারকিউমিন,যা ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই কাঁচা হলুদ মুখে লাগিয়ে এক ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে সপ্তাহে ৩-৪ দিন লাগালে মুখের সব ধরনের দাগ দূর করার পাশাপাশি ত্বককে উজ্জ্বল ফর্সা ও লাবণ্যময় করে তোলে।
এছাড়াও যেসব জিনিস এড়িয়ে চলতে হবে
উপরে বর্ণিত প্যাক গুলো ব্যবহার করার পাশাপাশি কিছু জিনিস এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। যেমন,
সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকা
আপনারা সাধ্যমত সূর্যের আলো বা রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। কেননা সূর্যের আলো মেলানিনের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয় এবং মেছতার দাগ আরো গারো করে।
সানস্ক্রিন ব্যবহার করা
সানস্ক্রিন ব্যবহার করার মাধ্যমেও ত্বক ভালো রাখা সম্ভব। রোদ বৃষ্টি সব ধরনের পরিবেশেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। এতে করে ত্বক ভালো থাকবে।
ত্বক ঠান্ডা রাখা
যতটা সম্ভব ত্বক ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করতে হবে। কারণ রোদ গরম ত্বকের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
প্রতিদিন এক্স ফালিয়েট করা
এক্স ফোলিয়েড ত্বকের মরা কোষ গুলো দূর করে। ফলে ত্বক আস্তে আস্তে ফর্সা ও লাবণ্য ময়ী হয়।
মন্তব্য
মানুষের সৌন্দর্য বিকাশে যেই অঙ্গটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে মানুষের মুখের ত্বক। তাই মুখে কোন কিছু ব্যবহার করার আগে চিন্তাভাবনা করে ব্যবহার করবেন। এবং সবচেয়ে ভালো হয় ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা। প্রিয় পাঠক, আমার এ পোষ্টের মাধ্যমেচিরতরে মেছতা দূর করার ১০ ঘরোয়া উপায় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এটি ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্যই উপকারী। এতক্ষন হয় তবা বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে ফেলেছেন। আশা করি এই আর্টিকেলে বর্ণিত পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করে উপকৃত হবেন। আমার এই আর্টিকেল সম্পর্কে কোন তথ্য মতামত থাকলে জানিয়ে যাবেন। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url