অটিজম শিশুদের শিক্ষা ও চিকিৎসা পদ্ধতি সর্ম্পকে জেনে নিন

অটিজম হলো স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের বিকাশ জনিত সমস্যা। সাধারণত বারো মাস বা এক বছর থেকে ৩৬ মাস বা তিন বছরের মধ্যে এর লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায়। তবে যত দ্রুত শনাক্ত করা যাবে ততোই ভালো। এটি জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে।
অটিজম শিশুদের শিক্ষা ও চিকিৎসা পদ্ধতি সর্ম্পকে জেনে নিন

অটিজম শিশুদের শিক্ষা ও চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পন্ন আলাদা। তাহলে আসুন জেনে নিয়ে যাক অটিজম শিশুদের শিক্ষা ও চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে। এছাড়া অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য গুলো কিকি।

অটিজম শিশুদের শিক্ষা ও চিকিৎসা পদ্ধতি সর্ম্পকে জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আমি প্রথমে আলোচনা করব অটিজম বা অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে। অটিজম শিশুদের চিকিৎসা পদ্ধতি কি, কিভাবে চিকিৎসা নেয়া যায়, সঠিক সময় চিকিৎসা নিলে কি ফল পাওয়া যায় ইত্যাদি বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করব।

অটিজম শিশুদের চিকিৎসা পদ্ধতি

যদিও খাবারের সাথে অটিজমের কোন সম্পর্ক নেই তবুও অনেক বিশেযজ্ঞ দাবি করেন যে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য অভ্যাস অটিজম আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় সহায়তা করতে পারে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং অন্রের মধ্যে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক আছে। কিন্তু এতসব খাবার গুলোর মধ্যে অটিজমি আক্রান্ত শিশুদের জন্য কোন খাবার গুলো সর্বোত্তম তা নির্ধারণ করবেন কিভাবে। 
প্রোবায়োটিক বা বন্ধুসুলভ ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ খাবার সমূহ অটিজম আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।তাই উপযুক্ত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা এবং নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্যসম্মত পরিপাকতন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ অটিজমের উপসর্গ গুলোর নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।

বিশেষ করে হজম জনিত বৃহদান্তের সমস্যা যেমন বিরক্তকর পেটের সমস্যা এর মধ্যে পেট ব্যথা এলাবাদ চাকা অনুভূত হওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেট ফাঁপাঅটিজমে আক্রান্ত শিশুরা বেশি ভুগে থাকে। তাই অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের সহজে হজম হয় এবং দ্রুত গ্যাসটোলিক রিফ্লেক্সটিকে কার্যকর এমন খাবার খাওয়াতে হবে। এ ধনের খাবার গুলোই অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় কার্যকরি ভূমিকা পালন করে।

অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত

এখানে কিছু খাবারের তালিকা দেয়া হলো যেগুলো অটিজমের আক্রান্ত শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদেরও এড়িয়ে চলা ভালো।যেমন
  • আশ যুক্ত খাবার
  • চর্বিযুক্ত খাবার
  • কার্বনেটেড দুব্যাদি
  • কফি ও অলকোহল জাতীয় খাবার
  • কৃত্রিম মিষ্টি সৃষ্টিকারি খাবার

আশ যুক্ত খাবার

আশ যুক্ত খাবার সাধারণত হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে তাই এ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। আশ যুক্ত খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে কিছু সবুজ শাকসবজি পালং শাক লেটুস পাতা, বিভিন্ন লতাপাতা জাতীয় শাক, ইত্যাদি। এ ছাড়া যে সকল খাবারের মধ্যে কমবা গম ও গম বীজ থাকে,। এবং ফলমূলের মধ্যে আনারস সবুজ মটরশুটি, কেফসি কাম জাতীয় মরিচ পেঁয়াজ, শালগম বাধাকফি, ফুলকপি এবং টমেটো ইত্যাদি এড়িয়ে চলাই ভালো।

চর্বিযুক্ত খাবার

চর্বি যুক্ত খাবার হজমে খুব সমস্যা সৃষ্টি করে। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের এই খাবারগুলো অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্য ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে। এ ধরনের খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভাজাপোড়া, মাংস দুধ ও দুধজাত সকল খাবার সালাত সহ পেস্ট্রিক্ট কেক, এ জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

কার্বনেটেড দ্রব্যাদি

কার্বনেটেড দ্রব্যাদি অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন খাবার সোডা কারণ এটি পেট ফাঁপা মাংসপেশির ক্রাম্পের কারন।

কফি ও অ্যালকোহল জাতীয় খাবার

কফি ও অ্যালকোহল জাতীয় খাবার অবশ্যিই এড়িয়ে চলতে হবে কারণ এরা পরিপাকতন্ত্রের সমস্যার সৃষ্টি করে। বিশেষ করে কফির ক্যাফিন কলোনকে সবসময় সক্রিয় রাখ।

কৃত্তিম মিষ্টি সৃষ্টিকারী খাবার

কৃত্রিম মিষ্টি সৃষ্টিকারী খাবারগুলো অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জন্য খুবই বিরক্তকর ও সমস্যার কারণ। এ ধরনের খাবার পেটের সমস্যা তৈরির প্রধান কারণ। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে দুধ ও দুগ্ধ জাত পণ্য, আইসক্রিম ইত্যাদি।

এছাড়াও অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় এই খাবারগুলো প্রদান করা ভালো

  • যেকোনো ধরনের আলু যেমন -গোল আলু মিষ্টি আলু সিনা আলো ও গাজর।
  • মিষ্টি কুমড়া মুলা বিটস ও লাউ
  • পাস্তা ও নুডুলস
  • ওটা মিল বা জয়চূর্ণ
  • চালের রুটি বা ফরাসি রুটি
  • চাল ও চাল শস্য জাতীয় খাবার সমূহ
  • কলা আম পেঁপে ও আপেলের সস
  • পেপারমিট কেমো মাইল ও ফেনেলের মত চকলেট ইত্যাদি।
এছাড়াও বন্ধু সুলভ ব্যকটেরিয়ে সমৃদ্ধ খাবার গুলি যেমন দই, কেফের,বিশেষ প্রকিয়ায় উৎপন্ন সবজি ও কিসমিস ইত্যাদি।

যদিও অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা সম্পূর্ণ বা ১০০% ভালো হয় না। তবে যদি দ্রুত শনাক্ত করা যায় এবং যথা প্রযুক্ত চিকিৎসা প্রদান করা হয় তাহলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এই চিকিৎসা হচ্ছে একটি সমন্বিত চিকিৎসা। পেডিয়াট্রিক বিশেষজ্ঞ, নিউরো রিহ্যাবিলিটেশন, বিশেষজ্ঞ, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, (spice and language) থেরাপিস্ট, এবং বিশেষ ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপিস্টের সহযোগিতায় প্রতিটি অটিস্টিক বাচ্চার জন্য আলাদা আলাদা ভাবে ডিজাইন করা হয়।

অটিজম শিশুদের শিক্ষা পদ্ধতি

অটিস্টিক বাচ্চাদের জন্য বাংলাদেশেই বিশেষায়িত কয়েকটি স্কুল আছে, যেখানে অটিজম বা অটিস্টিক বাচ্চাদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এটা নির্ভর করে সাধারণত তার অকুপেশনাল থেরাপিস্ট এর পরামর্শের উপর। কারণ তিনি বাচ্চাদের সক্ষমতা বুঝে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত দেবেন যে তাকে কোন স্কুলে ভর্তি করাতে হবে।অনেক অটিস্টিক বা অটিজম শিশুদের মানসিক সমস্যাও থাকে যেমন, অতি চঞ্চলতা অতিরিক্ত ভীতি, অমনোযোগী, ঘনঘন মনের অবস্থা পরিবর্তন, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি।
তাই এ ধরনের শিশুদের সাধারণত সাইকিয়াট্রিস্ট ওষুধের ব্যবহার করে থাকেন।অটিস্টিক শিশুদের বিশেষ কোন মিরাক্কেল চিকিৎসা নেই। তবে পরিবার-পরিজন আত্মীয়-স্বজন সমাজ পাড়া প্রতিবেশি শিক্ষক-শিক্ষিকা চিকিৎসক সহ সকলের সাহায্য সহযোগিতায় একটি অটিস্টিক শিশুর জীবন হয়ে উঠতে পারে আনন্দময়। এবং সে অটিজম শিশু হয়েও স্বাভাবিক জীবন যাপন করার উৎসাহ পেতে পারে।
অটিজম শিশুদের বৈশিষ্ট্য ও লক্ষণ সমূহ
শিশুদের লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য ১২-৩৬ বা ৩ বছরের মধ্যে প্রকাশ পাই। এই লক্ষণ গুলো দেখলে আপনাকে বুঝতে হবে আপনার শিশুর সমস্যা রয়েছে। তাই প্রিয় পাঠক, অটিজম শিশুদের লক্ষণগুলো নিয়ে আলোচনা করব। তাই আসুন দেরি না করে জানা যাক লক্ষণ গুলো কি কি।

অটিজমের প্রাথমিক লক্ষণ

  • ১২ মাস বয়সের মধ্যে শিশু সাধারণত এক অক্ষরের আধো আধো কথাগুলো বলবে। তা না বলা এবং পছন্দের বস্তুর দিকে ইশারা না করা।
  • ১৬ মাসের মধ্যে কোন শব্দ বলতে না পারা।
  • দুই বছরের মধ্যে দুই বা ততোধিক শব্দ দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে না পারা
  • ভাষার ব্যবহার শেখার পর পুনরায় ভুলে যাওয়া
  • বয়স অনুযায়ী সামাজিক আচরণ করতে না পারে

অটিজমের সাধারণ লক্ষণ সমূহ

  • শিশুদের ভাষা শিখতে সমস্যা
  • এক বছর বয়সের মধ্যে দা.. দা বা...বা উচ্চারণ করতে না পারা
  • দুই বছরের মধ্যে অর্থপূর্ণ দুটি শব্দ দিয়ে কথা বলতে না পারা
  • চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারেনা
  • নাম ধরে ডাকলে সাড়া না দেয়া
  • অন্যদের কাছ থেকে আদর না নেয়া এবং তাদের দেখলে ভয় পায়া
  • হঠাৎ করে উত্তেজিত হওয়া
  • পছন্দের ও আনন্দের বস্তু অন্যদের সাথে শেয়ার না করা
  • বারবার একই আচরণ করা
  • অন্যের কথা বারবার বলা
  • নিজেকে আঘাত করার প্রবণতা
  • পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে চাই না
  • শব্দ আলো স্পর্শ ইত্যাদি বিষয় কম বা বেশি আগ্রহ দেখানো
  • আশেপাশে কোন পরিবর্তন সহ্য করতে না পারা
  • নেটওয়াস্যার্ক সমুহ

রেড ফ্ল্যাগঃঅটিজমের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণঃ

  • স্বাভাবিক আচরণ করতে অক্ষম
  • আনন্দের বিষয় আনন্দ না পাওয়া
  • পছন্দের বিষয়ে কারো সাথে ভাগাভাগি না করা
  • পরিবেশ অনুযায়ী মুখের ভঙ্গি পরিবর্তন না করা
  • এছাড়াও অটিজমের সাথে যে সমস্যা গুলো থাকতে পারেঃ
  • খিচুনি
  • অতি চঞ্চলতা (হায়পার অ্যাক্টিভিটি)
  • স্বল্পবুদ্ধি সম্পন্ন
  • হাতের কাজ করতে জটিলতা অনুভব করা
  • হজমের সমস্যা
  • দাঁতের সমস্যা

অটিস্টিক শিশুদের বৈশিষ্ট্য

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমরা অটিজম শিশুদের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জানলাম।এখন আমরা অটিজম শিশুদের বৈশিষ্ট্য গুলো সম্পর্কে জানব। আসুন জানা যাক অটিজম শিশুদের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি।

সমবয়সীদের সাথে না থাকা

অটিজম বা অটিস্টিক শিশুরা সবসময় একা থাকতে ভালবাসে এবং তারা সমবয়সী শিশুদের সাথে মিশতে চায় না।সে সমবয়সীূদের সাথে গল্প করতে, খেলা করতে কোন আগ্রহ প্রকাশ করে না।সে সবসময় একা একা থাকতে পছন্দ করে। খেলাধুলার ক্ষেত্রে খেলনা পরিবর্তন করলেও খেলার ধরন একই থাকে।

পুনরা বৃত্তিমূলক আচরণ

সে একই ধরনের আচরণ বার বার করতে থাকে। যেমন তাকে যদি খেলনা দেওয়া হয় সে একই ধরনের খেলা খেলতে থাকে। তাকে যদি খেলনা পরিবর্তন করে দেওয়া হয় তাও সে ঐ একই খেলা খেলে।তাকে যদি দুইটি ভিন্ন ভিন্ন খেলা দেওয়া হয় বা তাকে একটা গ্লাসে পানি আনতে দেন সে একইভাবে বার বার পানি আনবে।

চোখে চোখ রেখে কথা না বলা

অটিজম শিশুরা চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারে না।সে আপনার সাথে কথা বলবে কিন্তু আপনার দিকে তাকাবেনা।

কথা বলায় জড়তা

কথা বলার মধ্যে জড়তা লক্ষ্য করা যায়।তার কথা স্পোষ্ট হয়না।আবার কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় শিশু একেবারে কথা বলছেনা।

ধৈর্য কম থাকে

অটিজম শিশুদের ধৈর্য কম থাকে। আপনি যদি তাকে কোন খেলনা দেন সে কয়েক মিনিট খেলার পরে সেই খেলনার প্রতি বিরক্ত বোধ করে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক,আজ আমি আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে অটিজম শিশুদের শিক্ষা ও চিকিৎসা পদ্ধতি,লক্ষন,বৈশিষ্ঠ্য, সর্ম্পকে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।যারা এই বিষয় গুলো জানতেননা তারা এতক্ষন হয়তাবা জানতে পেরেছেন।এবং উপকৃত হয়েছেন।যে সকল পরিবারে এই ধরনের শিশু রয়েছে তাদের প্রতি আমার অনরোধ থাকবে আপনারা তাদের প্রতি বিরক্ত হবেন না।তাদের প্রতি যত্নবান হবেন।কারন সে আপনারি সন্তান।সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url