অটিজম শিশুর খাবার তালিকা২০২৪

অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD)নামে পরিচিত। অটিজম শিশু বলতে স্নায়ুতন্ত্র এবং মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যাকে বুঋায়।আটিজমে আক্রান্ত শিশু সাধারণত অসাভাবিকভাবে বেড়ে উঠে। অটিজম আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ, সামাজিক আচারন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়।
অটিজম  শিশুর খাবার  তালিকা২০২৪ সর্ম্পকে জেনে নিন

বিশেষজ্ঞরা একেই অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার বা(ASD)বলে থাকেন।তবে অনেক অটিজম বিশেষজ্ঞরা বলেন যে,বিভিন্ন ধরনের খাবার ও খাদ্যঅভ্যাস একজন অটিজমে আক্রান্ত শিশু এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের চিকিৎসা ক্ষেত্রে সাহায্যে করতে পারে। তাই নিম্নে অটিজম শিশুর খাবার তালিকা২০২৪ সর্ম্পকে আলোচনা করা হল।

ভূমিকা

অটিজম শিশু বলতে অসাভাবিকভাবে বেড়ে উঠে অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগ, সামাজিক আচারন,ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এটা শিশু জন্মের ১৮ মাস পর্যন্ত বোঋা যায় না। ১৮-৩৬ মাসের মধ্যে এর লক্ষন গুলো প্রকাশ পায়।তবে যত দ্রুত এ সমস্যা নির্ণয় করা যায় ততই ভালো।অটিজম শিশুদের যদি ১৮ থেকে ৩৬ মাসের মধ্যে যথা প্রযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া যায় অর্থাৎ পুষ্টি প্রশিক্ষণ এবং অটিজম থেরাপিস্ট এর মাধ্যমে থেরাপি প্রদান করলে অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো সম্ভব। তাই প্রিয় পাঠক, আজ আমার এই পোস্টের মাধ্যমে অটিজম শিশুর খাবার তালিকা২০২৪ তালি খাবার নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি শেষ পর্যন্ত আমার সাথে থাকবেন।

অটিজম শিশুর খাবার তালিকা২০২৪

অটিজম বিশেষজ্ঞদের মতে অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে তাদের কার্যকর ভাবে চিকিৎসা প্রদান করা যেতে পারে। অটিজমের সঠিক কারন এখনও জানা যায়নি । তাই গবেষকরা প্রতিটি বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন।তার মধ্যে খাদ্য অন্যতম।গবেষকরা খাদ্যের বিভিন্ন উপাদান নিয়ে পরীক্ষা করছেন কোন খাবার গুলো পরিহার করলে বা কোন খাবার ও ভিটামিনের ঘাটতি পুরন করলে অটিজমে আক্রান্তের হার কমানো যায়।


তাই অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের খাবারের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যদিও খাদ্য জনিত কারণে অটিজম হয়না।এদের খাবার ঠিক করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে রক্তে শর্করা মাত্রা স্বাভাবিক আছে কিনা। ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের কোন ঘাটতি আছে কিনা। তাদের খাবারের তালিকায় এমন খাবার রাখতে হবে যেন থাইরয়েডের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। 

থাইরয়েডের কার্যকারিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের অতি চাঞ্চল্যতা, আক্রমনাত্মক আচরণ, অমনোযোগিতা দৃষ্টিশক্তি হীনতা, বিকৃতি অঙ্গভঙ্গি এবং অন্যান্য উপসর্গের তীব্রতা কমানো যেতে পারে। গবেষকরা অটিজমের সমস্যার সমাধানে খাবারের গুরুত্ব বিবেচনায় যে খাবারগুলো রেখেছেন তার মধ্যে।

গ্লটেন যুক্ত খাবার পরিহার করা

আটা-ময়দা বালি ইস্ট এবং ভুট্টার মধ্যে গ্লটেন থাকে। তাই এই জাতীয় খাবার যেমন রুটি বিস্কুট লুডুস কেক সুজি সেমাই পাস্তা পাউরুটি ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। অভিভাবকদের প্রশ্ন থাকে তাহলে বাচ্চাদের কি খাবার দেয়া যেতে পারে। এ প্রশ্নের উত্তর হল এই বাচ্চাদের দেয়া যেতে পারে চালের রুটি ভাত খিচুড়ি পিঠা চালের সেমাই ধানের খই মুড়ি চূড়া চালের সুজি পেয়াজু ইত্যাদি। এছাড়াও আপনি আলুর তৈরি বিভিন্ন খাবার দিতে পারেন। যেমন, আলুর ভর্তা আলোর ভাজি আলুর চপ,আলুর দম ইত্যাদি। এছাড়া যাদের গ্লুটেন সংবিধানশীলতা রয়েছে তাদের তল পেট ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, চুলকানি, মাথাব্যথা হতে পারে।

কেজিন যুক্ত খাবার পরিহার করা

অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের কেজিন মুক্ত খাবার দিতে হবেনা। অর্থাৎ যে খাবারে কেজিন রয়েছে সে খাবার গুলো পরিহার করতে হবে। যেমন,দুধের মধ্যে কেজিন থাকে। কেজিন হল দুধের প্রধান প্রোটিন। তাই অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের দুধ এবং দুধ জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে। এতে শিশুর মা-বাবা বিপদে পড়েন। কারণ দুধ হল ক্যালসিয়ামের অন্যতম উৎস। এর জন্য দুধ ছাড়া অন্যান্য ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার যেমন, সব ধরনের ডাল বাদাম ছোট মাছ পোস্ত দানা সমুদ্রের মাছ শালগম কাল কচুর শাক, সজনে পাতা বাঁধাকপি ব্রকলি খেজুর ডুমুর ধনেপাতা সিমের বিচি মটরশুটি ইত্যাদি খাবার দিতে হবে।

 শর্করা জাতীয় খাবার

শর্করা সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে যেমন, জটিল শর্করা ও সহজ শর্করা।

জটিল শর্করা

জটিল শর্করার মধ্যে পড়ে ভাত রুটি, চিড়া মুড়ি, খই আলু ইত্যাদি।

সহজ শর্করা

সহজ শর্করা হলো, চিনি মিষ্টি গুড় মধু গ্লুকোজ ইত্যাদি। অটিজম আক্রান্ত শিশুদের রক্তে যাতে শর্করার পরিমাণ বেড়ে না যায় তার জন্য সহজ শর্করা ও সহজ শর্করা জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে। যেমন, চিনি ও গুড়ের তৈরি খাবার মিষ্টি হালুয়া পুডিং আইসক্রিম কোমল পানিও মিষ্টি মিঠা বাত দিতে হবে।
  • আবার যদি কোন বাচ্চার হাইপোথায়রডিজমে আক্রান্ত থাকে তাহলে তাদের খাবার থেকে মূলা পাতাকপি ফুলকপি ও ব্রকলি বাদ দিতে হবে। এদের খাবারে সামুদ্রিক মাছ ও আয়োডিনযুক্ত খাবার বেশি দিতে হবে।
  • এছাড়া অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় নিম্নলিখিত খাবার গুলো দেয়া যেতে পারে।
  • যেকোনো ধরনের আলু যেমন, গোল আলো মিষ্টি আলো চিনা আলো ও গজর।
  • মিষ্টি কুমড়া মুলা বিটস ও লাউ
  • পাস্তা নুডুলস ইত্যাদি
  • ওটামিল বা জয়চূর্ণ
  • চালের রুটি বা ফরাসি রুটি
  • কলা আম পেঁপে ওআপেলের সস
  • পেপারমেট, কেমো মাইল ও ফেনেলেরএর মত চকলেট
  • উপকারী ব্যাকটেরিয়া যুক্ত খাবার যেমন দই, কিসমিস, বিশেষ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন সবজি ইত্যাদি
লেখক
চিপ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব)বারডেম।সভাপতি, ডায়াবেটিকস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা।

অটিজম শিশুদের ক্ষেত্রে যে খাবারগুলো বর্জন করতে হবে

অপাচ্য আঁশযুক্ত খাবার

অপাচ্য ও আশ যুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। কারণ এ জাতীয় খাবার হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। এই খাবারগুলো পরিহার করে চলতে হবে যদি ওই খাবারগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। অপাচ্য আশ যুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে কিছু সবুজ শাকসবজি যেমন,পালং শাক, লেটুস পাতা, বিভিন্ন লতাপাতা জাতীয় শাক, ফলমূল যেমন আনারস, সবুজ মটরশুটি, কেফসি কাম জাতীয় মরিচ পেঁয়াজ শালগম পাতাকপি ফুলকপি এবং টমেটো ইত্যাদি অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

চর্বিযুক্ত খাবার

অটিজম আক্রান্ত শিশুদের অবশ্যই চর্বি মুক্ত খাবার দিতে হবেনা। কারণ চর্বি যুক্ত খাবার সহজে হজম হয় না। চর্বি যুক্ত খাবার দিলে কোষ্ঠকাঠিন্যসহ ডায়রিয়া পর্যন্ত হতে পারে। চর্বিযুক্ত খাবরের মধ্যে রয়েছে যেমন, বিভিন্ন ধরনের ভাজা খাবার সমূহ, দুধ ও দুধ জাতীয় খাবার, ছালাতসহ পেস্টি কেক,অন্যান্য মিষ্টি ও ঝাল জাতীয় খাবার (বেকারিতে তৈরি) পরিহার করতে হবে।

কার্বনেটেড দ্রব্যাদি

কার্বনেটেড দ্রব্যাদি পরিহার করতে হবে। যেমন খাবার সোডা অবশ্যই খাবার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেন থাকে। এতে পেট ফাপা থেকে শুরু করে ডায়রিয়া পর্যন্ত হতে পারে।

কফি ও অ্যালকোহল

কফি ও অ্যালকোহল যুক্ত খাবার অবশ্যই এড়িয়ে যেতে হবে। কারণ এ জাতীয় খাবার পরিপাকতন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে কফির ক্যাফেন কোলনকে সব সময় সক্রিয় রাখে।

কৃত্রিম মিষ্টি সৃষ্টিকারী খাবার

কৃত্রিম মিষ্টি সৃষ্টিকারী খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। এ জাতীয় খাবার অটিজমের আক্রান্ত শিশুদের ও পেটের সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে খুবই বিরক্তকর একটি খাবার। তাই এগুলো পরিহার করতে হবে যেমন, দুধ ও দুগ্ধ জাত খাবার দই আইসক্রিম ইত্যাদি।

শেষ কথা

অটিজম শিশু বলতে অসাভাবিকভাবে বেড়ে উঠা বাচ্চাদের বুঝি।অর্থাত বয়স অনুযায়ী যাদের মানুষিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটেনা তাদেরকে বুঝায়।প্রিয় পাঠক, আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে অটিজম শিশুর খাবার তালিকা২০২৪,কোন কোন খাবার দেওয়া উচিৎ আর কোন কোন খাবার দেওয়া যাবেনা এই বিষয় গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।আশাকরি এতক্ষনে এই বিষয় গুলো সর্ম্পকে জেনে গেছেন।আশাকরি আমার এই পোষ্টি পড়ে আপনার কাংখিত উত্তেরটি পেয়েছেন।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এতক্ষন আমার সাথে থাকার জন্য।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url