নিম গাছের ঔষধি গুনাগুন

 

নিম গাছের নাম শুনেনি এমন মানুষ খুজে পাওয়া যাবেনা।নিম গাছ আমাদের দেশেএকটি অতি পরিচিত বৃক্ষ।এটা আমাদের বাড়ির আশেপাশে দেখতেপাওয়া যায়।নিম গাছের ঔষধি গুনাগুন সর্ম্পকে কমবেশি আমরা সবাই জানি।এর পাতা থেকে শিকড় পর্যন্ত প্রতিটি অংশই কাজে লাগে।নিম গাছ বহু বর্ষ জীবি চির হরিত বৃক্ষ
নিম গাছের ঔষধি গুনাগুন সর্ম্পকে জেনে নিন।

নিম গাছের ডাল ,পাতা,ফুল,রস ,বাকল ,শিকড় প্রতিটি অংশই কাজে লাগে।প্রিয় পাঠক ,আজ আমি নিম গাছের ঔষধি গুনাগুন সর্ম্পকে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাল্লাহ।আশা করি শেষ পর্যন্ত আমার সাথেই থাকবেন।

ভূমিকা

নিম গাছ অতি পরিচিত একটি গাছ।ঔষধি গুনে ভর্পুর একটি গাছ।নিম গাছ সকল রোগের মহা ঔষধ নামেও বেশ পরিচিত।এটিকে বাড়ির ডাক্তারও বলা হয়ে থাকে।এটি একটি বহু বর্ষজিবী চির হরিত গাছ।নিম গাছের এমন কোন অংশ নেই যে কাজে লাগেনা।পাতা,শিকড়,বাকল,রস ফুল,এমন কি এর কাঠ দিয়ে আসবাবপ্ত্র তৈরী করা হয়।নিম গাছের বৈঙ্গানিক নাম(Azadirachta indica)।এটা বাংলাদেশের প্রয় সর্বত্রই পাওয়া যায়।তবে উত্তাঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়।প্রিয় পাঠক ,আজ আমি নিম গাছের ঔষধি গুনাগুন তুলে ধরার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।বিস্তারিত জানতে শেষ পর্যন্ত আমার সাথেই থাকবেন আশাকরি।

উৎপত্তি 

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিম গাছের উৎপত্তি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ভারত, এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পশ্চিম আফ্রিকাতে।

উদ্ভিদের ধরন 

নিম গাছ,বহু বর্ষজীবী একটি চিরহরিৎ বৃক্ষ।এবং এটা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় সর্বত্রই পাওয়া যায়।

নিমগাছের ঔষধি গুনাগুন

নিম গাছের ঔষধি গুনাগুন বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। এর পাতা থেকে শুরু করে শিকড় পর্যন্ত কাজে লাগানো যায়। এর পাতা ছাল বাকল, রস, ফুল, ফল সবই কাজে লাগে। এক কথায় বলতে গেলে, এর প্রত্যেকটি অংশই কাজে লাগানো যায়। এমনকি এর কাঠ,আমাদের আসবাবপত্র তৈরিতে কাজে লাগে। নিম গাছ অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে সারা বিশ্বে ব্যবহার হয়ে থাকে।


এছাড়া নিম গাছ, ছত্রাক নাশক, ব্যাকটেরিয়া রোধক, ও ভাইরাস রোধক হিসেবে, কীটপতঙ্গ বিনাশে, চ্যাগাস রোগ নিয়ন্ত্রণে,ম্যালেরিয়া নিরাময়ে, দাঁতের চিকিৎসায়, ব্যাথা মুক্তি, জ্বর কমাতে, ও জন্মনিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়।প্রিয় পাঠক, আজ আমি এর কিছু জাদুকারি উপকারিতা বা গুনাগুন ও ব্যবহার সম্পর্কে জানাবো। তাই আসুন আর দেরি না করে জেনে নেয়া যাক এর জাদুকরি সব উপকারিতা।

এইডস

এইডস নিয়ন্ত্রণেও মিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিম পাতার বাকল হতে আহরিত রস বা নিম পাতার রস করে নিয়মিত পান করলে অথবা পুরো পাতা চা এর মিশিয়ে চা বানিয়ে পান করলে এইডস রোগের কোন ঋুকি থাকেনা।

জন্ম নিয়ন্ত্রণ 

নিম জন্মনিয়ন্ত্রণ করে থাকে। পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্মনিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে থাকে। সহবাসের পুর্বে নিম তৈল ,তুলায় ভিজিয়ে স্ত্রীর যোনাঙ্গে ১৫মিনিট রাখলে স্পার্ম মারা যায়।এছাড়া পুরুষ যদি নিম ট্যাবলেট নিয়মিত সেবন করে তাহলে তারস্ত্রীর বাচ্চা হয়না। এছাড়া কোন পুরুষ যদি ৬ সপ্তাহ নিম তৈল সেবন করে তাহলে তার স্ত্রী গর্ভবতী হবেনা।তাই প্রিয় পাঠক ,যারা বাচ্চা দেরিতে নিতে চান তারা এই পদ্ধতি গুলো অনসরন করতে পারেন।

জন্ডিস 

জন্ডিস রোগের জন্য নিম খুবই উপকারি। ২৫-৩০ ফোটা নিমপাতার রস নিয়মিত খেলে জন্ডিস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

বহুমুত্র

প্রতিদিন সকালে ১ চা চামচ নিম পাতার রস ৩ মাস নিয়মিত খেলে ডায়বেটিকস ভাল হয়।এছাও আপনি ১০টি নিম পাতার গুড়া বা নিম পাতা চিবিয়ে খেলেও ডায়বেটিকস ভাল হয়।

চোখের ব্যথা 

চোখে চুলকানি হলে নিম পাতা পানিতে সিদ্ধ করে ,ঠান্ডা করে সেই পানির ঝাপটা চোখে দিলে চোখের চুলকানি ভাল হয়।সামান্য নিম পাতা,শুস্ক আদা,সৈদ্ধব লবন একত্রে মিশিয়ে পেস্ট তৈরী করে পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে লাগিয়া চোখ ঢেকে দিলে চোখের ব্যাথা কমে যায়।

উকুন

উকুন ছেলে মেয়ে উভয়ের মাথায় দেখা যায় ,তবে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের বেশি দেখা যায়।মাথায় উকুন হলে অসস্থিসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে ।তাই উকুন নিরাময় করতে হবে।নিমের ফুল বেটে মাথায় লাগিয়ে কয়েক ঘন্টা পর ধুয়ে ফেললে উকুন মারা যায়।

কৃমি

.৩-৪ গ্রাম নিম ছাল চুর্ন করে তাতে সামান্য সৈন্ধব লবন মিশিয়ে নিয়মিত খেলে কৃমি ভাল হয়। তবে চোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১-২ গ্রাম মাত্রায় সেবন করতে হবে।

উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে 

নিম রক্ত পরিষ্কারক হিসেবেও কাজ করে। নিম পাতার রস নিয়মিত পান করলে রক্ত পরিষ্কার করে এবং পাশাপাশি রক্তের শর্করা কমাতে সাহায্য করে। ফলে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ব্রুন

নিমপাতা ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়া বিরোধী, তাই ত্বকের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিমপাতা বেটে মধুর সাথে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলতে হবে, তাহলে একদিকে তক যেমন উজ্জল ও লাবণ্য হবে অন্য দিকে ব্রুন থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

কফ জনিত বুকের ব্যথা 

কফজনিত বুকের ব্যথা উপশমে নিম পাতা সাহায্য করে। অনেক সময় বুকে কফ জমে বুক ব্যথা করে। এক্ষেত্রে ২০-৩০ ফোটা নিম পাতার রস ও মধু মিশিয়ে দিনের ৩-৪ বার খেলে বুকে ব্যথা কমে যায়। তবে গর্ভবতী মহিলা, শিশু ও বৃদ্ধের জন্য এই ঔষধ খাওয়া যাবে না।

খোস পাচড়া

খুশখসে বা চুলকানি নিরাময়ে নিমের কোন তুলনা হয় না। নিম পাতা সিদ্ধ করে ওই পানি দিয়ে গোসল করলে চুলকানি বা খোশ পাসরা ভালো হয়। এছাড়াও নিম পাতা বেটে কয়েকদিন নিয়মিত লাগালে চুলকানি ভালো হয়।

পোকামাকড়ের কামড়

অনেক সময় আমাদের পোকামাকড় কামড় দিয়ে হুল ফুটিয়ে রাখে। এ ক্ষেত্রে নিমের ছাল বা পাতা বেটে ওই স্থানে লাগালে ব্যথা উপশম হয়।

দাতের রোগ 

অনেকেরই দাত শিরশির করে, ব্যথা করে এবং দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত পড়ে এক্ষেত্রে নিম পাতার ছাই দিয়ে নিয়মিত দাঁত মাজলে অথবা নিম গাছের ডাল দিয়ে মেছওয়াক করলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

ব্লাড ছুগার নিয়ন্ত্রণ 

নিম পাতার রস নিয়মিত সকালে খালি পেটে পান করলে রক্তের শর্করা কমিয়ে দেয়, ফলে ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য খুব উপকারে আসে।

ত্বক 

ত্বকের যত্নে নিমের কোন জুড়ে নেই। নিমপাতা পিষে এর সাথে সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। এই পেস্ট মুখে লাগিয়ে কয়েক ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করে ত্বক উজ্জ্বল, লাবণ্য মসৃন হবে এবং পাশাপাশি ব্রুন বা অন্যান্য খোঁজ পাষড়াও ভালো হয়।

চুল

চুলের যত্নে নিম পাতার অবদান অপারিসিম,উজ্জ্বল ঘন, কালো ও দৃষ্টিনন্দন চুল পেতে নিম পাতার কোন তুলনা হয় না। নিমপাতা পিষে পেস্ট তৈরি করে মাথায় লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেললে মাথার উকুন, খুশকি দূর হওয়ার পাশাপাশি চুল ঘন কালো ও দৃষ্টিনন্দন হয়।

ওজন কমাতে

যারা ওজন কমাতে চান বিশেষ করে যাদের মেদ বেড়ে গেছে তারা নিমের ফুলের জুস খেতে পারেন। কারণ এটা মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এছাডাও এক মুঠো নিম ফল চূর্ণ করে এর সাথে সামান্য মধু মিশে প্রতিদিন পান করলে দেখবেন জাদুর মত কাজ করবে।

রক্ত পরিষ্কারক

নিম পাতা রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। নিম পাতার রস নিয়মিত খেলে রক্ত পরিষ্কারের পাশাপাশি রক্ত চলাচল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এর ফলে হার্ট ভালো থাকো।


আরো কিছু জাদু করি গুনাগুন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব ।নিম্নে আরো কিছু নিম গাছের ঔষধি গুনাগুন নিয়ে আলোচনা করব।

ম্যালেরিয়া থেকে মুক্তি 

নিম পাতার নির্যাস নিয়মিত সেবন করলে ম্যালেরিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পানি বা অ্যালকোহল মিশ্রিত নিম পাতা নির্যাস ব্যবহারে একই ধরনের ফল পাওয়া যায়।

মানসিক চাপ 

স্বল্প পরিমাণে নিম পাতার রস নিয়মিত খেলে মানসিক চাপ ও অশান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

আলসার 

আলসার বা গ্যাস্ট্রিক কমাতে নিম পাতার কোন জুড়ি নেই। নিম পাতার নির্যাস ও নিম্বিডিন নির্যাস খেলে পেপটিক আলসার ও ডিউডেনাল আলসার কমে যায়।

ক্যান্সার 

নিমের তেল, বাকল,ও পাতার নির্যাস ব্যবহারে ক্যান্সার টিউমার, স্কিন ক্যান্সার ইত্যাদি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

রাতকানা 

নিম ফুল ভেজে খেলে রাতকানা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

মাথা ব্যাথা

নিম তেল মাথাই মাখতে মাথা ব্যথা, মাথা ধরা ইত্যাদি থেকে উপশম পাওয়া যায়।

বমি

বমি বমি ভাব আসলে নিম পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে বমি বমি ভাব দূর হয়।

নিম চা

শুষ্ক নিম পাতা পানিতে সিদ্ধ করে অথবা কাঁচা পাতা গরম পানিতে সেরে দুই-তিন মিনিট জ্বাল দিয়ে মধু মিশিয়ে চা বানিয়ে খেলে বিভিন্ন রোগ বালায় থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।যেমন শুষ্ক কাশি, বুক ব্যথা ইত্যাদি।

লেখকের মন্তব্য 

প্রিয় পাঠক, আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে নিম গাছের ঔষধি গুনাগুন, উপকারিতা, নিম গাছের ব্যবহার, ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। নিম গাছ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। এটা যেমন আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, তেমনি অন্যদিকে এর ঔষধি গুনাগুন আমাদের বিভিন্ন রোগ নিরাময় কাজে লাগে। এটা বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই পাওয়া। তবে উত্তরাঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়। আশাকরি আমার এই পোস্ট পড়ে আপনাদের জ্ঞান ভান্ডার কে কিছুটা হলেও সমৃদ্ধ করতে পেরেছি। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। কথা হবে অন্য কোন পোস্ট নিয়ে।আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url