থানকুনি পাতার কিছু উপকারিতা ও কিছু অপকারিতা

থানকুনি পাতা খুব পরিচিত একটি ভেষজ উদ্ভিদ। থানকুনি পাতার নাম শুনেনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন।কারন এটি বাসার আশেপাশে ক্ষেতের ধারে,পুকুর পাড়ে,ডোবার পাশে বেড়ে উঠতে দেখা যায়। এই থানকুনি পাতার রয়েছে অনেক ঔষধি গুনাগুন।
থানকুনি পাতার কিছু উপকারিতা ও কিছু অপকারিতা

আজ আমি থানকুনি পাতার কিছু উপকারিতা ও কিছু অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।

ভূমিকা

থানকুনি পাতা একটি ছোট বর্ষজিবী ভেষজ উদ্ভিদ। থানকুনি বা আদামনি এর বৈজ্ঞানিক নাম (Centella asiatica)।এটি বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, চীন,ইন্দোনেশিয়া, মাদাগাস্কার, দক্ষিণ আফ্রিকা, এবং পূর্ব ইউরোপে দেখতে পাওয়া যায়। এটি বাড়ির আশেপাশে, ডোবানালায় পাওয়া যায়। থানকুনি পাতা হয়তো বা আমরা সবাই চিনি কিন্তু এর গুনাগুন সর্ম্পকে আমরা সবাই জানিনা।প্রিয় পাঠক, আজ আমি থানকুনি পাতার ঔষধি গুনাগুন, থানকুনি পাতার কিছু উপকারিতা ও কিছু অপকারিতা, থানকুনি পাতার বৈশিষ্ট্য, থানকুনি পাতার ব্যবহার, থানকুনি পাতা কিভাবে খেতে হয়, যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার ভূমিকা ইত্যাদি বিষয় আলোচনা করব ইনশাল্লাহ। আশা করি শেষ পর্যন্ত আমার সাথেই থাকবেন।

থানকুনি পাতার কিছু উপকারিতা

ঔষধি গুণে ভরপুর থানকুনি পাতার রয়েছে কিছু উপকারিতা।যেগুলো সবার জেনে রাখা দরকার তাহলে বাস্তব জীবনে কাজে লাগিয়ে উপকৃত হতে পারবেন।তাহলে আসুন জেনে নেয়া যাক এর উপকারিতা গুলো কি কি।

ত্বকের ক্ষত  সারাতে

ক্ষত সারাতে থানকুনি পাতার জুড়ি নেই।শরীরের কোথাও কেটে গেলে রক্তপাত হবে এটাই স্বাভাবিক। তৎক্ষণাৎ রক্ত পড়া বন্ধ করতে থানকুনি পাতা বেটে ঐ ক্ষতস্থানে লাগালে রক্ত পড়া বন্ধের পাশাপাশি ব্যাথা দূর হয়।

শরীরের রক্ত প্রবাহ ঠিক রাখে

শরীরে রক্তের প্রবাহ ঠিক রাখতে থানকুনি পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রক্তের প্রবাহ ঠিক না থাকলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। থানকুনি পাতা রস নিয়মিত খেলে রক্ত বিশুদ্ধ করার পাশাপাশি শরীরের প্রতিটি কোষের রক্ত প্রবাহ নিশ্চিত করে। এতে শরীরের নানা সমস্যা দূর হয়।

শরীরের জ্বালাপোড়া অপসারণ করে

বিভিন্ন কারনে শরীরের জালাপোড়া হয়ে থাকে। যেমন শরীরে কোথাও কেটে গেলে বা ক্ষত সৃষ্টি হলে শরীরের ভিতরে জ্বালাপোড়া জ্বর ক্লান্তি ইত্যাদি উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি শরীরের অন্য কোন অংগের ক্ষতি হতে পারে। এক্ষেত্রে থানকুনি পাতার রস নিয়মিত খেলে এই জ্বালা পোড়া,যন্ত্রণা কমে যাওয়ার পাশাপাশি ক্লান্তি ভাব দূর করে। কারন থানকুনি পাতায় রয়েছে আন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যেটা ক্ষত সারানোর পাশাপাশি ইনফেকশন থেকেও দূরে রাখে।

আলসার দূর করে

থানকুনি পাতা রয়েছে ঔষধি গুনাগুন যা আলসার সারাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খেলে আলসার সারানোর পাশাপাশি আমসায় থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

মানসিক অবসাদ দূর করে

যারা মানুষিক সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য থানকুনিপাতা হতে পারে সহজ সমাধান।কারন থানকুনি পাতা স্ট্রোস হরমোনের ক্ষরন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ফলে মানসিক অস্থিরতা ও অবসাদ দূর হয়।

মস্তিষ্কের কর্ম ক্ষমতা বাড়ায়

নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বেড়ে যায়।কারণ থানকুনি পাতা খেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পিনটাসাইক্লিক ট্রিটারপেনস উপাদান বাড়তে থাকে। যার ফলে ব্রেন সেল ভালোভাবে কাজ করতে পারে। ফলে স্মৃতিশক্তি বেড়ে যায় এবং বুদ্ধির বিকাশে ঘটতে থাকে।এ কারণেই বিশেষজ্ঞরা ছোট বাচ্চাদের থানকুনি পাতার রস নিয়মিত খাওয়ানোর জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

ঘুমের জন্য ভালো

যাদের নিয়মিত ঘুম হয় না। রাতের পর রাত অনিদ্রায় জেগে কাটাতে হয়। তাদের জন্য থানকুনি পাতা খুবই উপকারী। নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খেলে স্নায়ু শিথিল হবে প্রশান্তি অনুভব হবে এবং ঘুম চলে আসলে।

ত্বকের যত্নে

ত্বকের যত্ন নিতে থানকুনি পাতা সহায়তা করে। কারণ থানকুনি পাতায় প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও উচ্চমানের অ্যামাইনো এসিড রয়েছে। যা ত্বককে প্রাণবন্ত লাবণ্য মসৃণ করতে সাহায্য করে। এমনকি ব্রণের দাগ দূর করতেও থানকুনি পাতার নির্যাস দারুন উপকারে আসে।

ত্বক কুচকে যাওয়ার রোধ করে

থানকুনি পাতা ত্বক কুঁচকে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। থানকুনিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড ও উপাদান ম্যাডেকাসসাইড যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর কাজ করে। ফলে অকালে কুচকে যাওয়ার থেকে রক্ষা করে। এবং পাশাপাশি ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।

চুল পড়া বন্ধ করে

চুল মানুষের সৌন্দর্য বিকাশের একটি অন্যতম উপাদান। তাই চুলের যত্নে নেয়া অত্যন্ত জরুরি। অতিমাত্রায় যদি চুল ঝরে যায় তাহলে অবশ্যই চিন্তার কারণ। এক্ষেত্রে থানকুনির পাতা পিষে মাথায় লাগিয়ে কয়েক ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে মাথা ধরে ফেলতে হবে। এভাবে নিয়মিত লাগালে চুল পড়া বন্ধ হবে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে

থানকুনি পাতা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। তাজা থানকুনি পাতা এবং এক চিমটি লবণ দিয়ে সিদ্ধ করতে হবে। তারপরে পানি নিয়মিত পান করতে হবে। তাহলে আশা করি হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং পাশাপাশি খাবার রুচি বৃদ্ধি পাবে।

লিভার ভালো রাখে

আপনি কি পেটের সমস্যায় ভুগছেন তাহলে আপনার জন্য থানকুনি পাতা। থানকুনি পাতা এবং পাকা কলা প্রতিদিন সকালে একসঙ্গে খেলে লিভার ভালো থাকার পাশাপাশি পেটের সকল সমস্যা দূর হয়। এবং স্বাস্থ্য ভালো থাকে খাবারের রুচি বাড়ে।

আর্থাইটিস ভালো করে

থানকুনি পাতা আর্থাইটিস বা বাথরোগ হাড়ের ক্ষয় ইত্যাদি রোধ করে থাকে। প্রতিদিন দুটি করে পাতা চিবিয়ে খেলে এ সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

কাশির জন্য উপকারী

যাদের কাশি এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য থানকুনি পাতা উপকারি হতে পারে। থানকুনি পাতা এবং মধু একসঙ্গে মিশিয়ে খেলে সর্দি-কাশি জ্বর শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি দূর হয়ে যায়। এছাড়া আপনি থানকুনি পাতার সাথে চিনি মিশিয়ে খেতে পারেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে থানকুনি পাতা অসাধারণ। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তারা নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হওয়ার পাশাপাশি খাবারের রুচি আসবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

থানকুনি পাতা রোগ প্রিতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের বিভিন্ন রোগবালাই আক্রমণ করে। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা খুবই জরুরী। তাই নিয়মিত থানকুনি পাতা খেতে হবে। তাহলে আশা করি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে।

থানকুনি পাতার কিছু অপকারিতা

  • প্রতিটা জিনিসেরই কিছু ভালোমন্দ দিক রয়েছে। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। তাই থানকুনি পাতার রয়েছে কিছু অপকারিতা।
  • অনেকেরই থানকুনি পাতা ব্যবহার করলে এলার্জি হতে পারে। তক লালচে ভাব, চুলকানি ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে থানকুনি পাতা ব্যবহার না করাই ভালো।
  • প্রয়োজন মত থানকুনি পাতা খেতে হবে। অতিরিক্ত খেলে বা ব্যবহার করলে বদহজম বমি বমি ভাব ডায়রিয়া পর্যন্ত হতে পারে।
  • থানকুনি পাতা দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার না করাই ভালো। এতে করে যকৃতের ক্ষতি হতে পারে। যাদের যকৃতের সমস্যা রয়েছে তার অল্প পরিমাণে থানকুনি পাতা ব্যবহার করবেন।
  • গর্ভ অবস্থায় থানকুনি পাতা না খাওয়াই ভালো। খেলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।
  • অন্য কোন ওষুধ সেবন করা অবস্থায় থানকুনি পাতা খাওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে ডাক্তারর পরামর্শ নিতে হবে। তা না হলে ক্ষতি হতে পারে।
  • অতিরিক্ত থানকুনি পাতা খাওয়া ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য বিপদজনক হতে পারে। কারণ থানকুনি পাতা রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে থানকুনি পাতা খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  • প্রয়োজনের বেশি থানকুনি পাতা খেলে। বমি ভাব এবং মাথা ঘোরার মত সমস্যা হতে পারে।
  • যারা কোন অপারেশন করেছেন তাদের জন্য থানকুনি পাতা না খাওয়াই ভালো।

যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতা

  • যৌবন ধরে রাখাতে থানকুনি পাতা গুরুতপর্ন ভুমিকা পালন করে।নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে যৌনশক্তি বৃদ্ধি পাই এবংসহবাসে সময় বেশি পাওয়া যায়।তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার ভূমিকা।
  • থানকুনি পাতা ত্বকের কোষগুলোকে সুস্থ রাখে এবং ত্বকের কোষগুলো পূর্ণ গঠনে সাহায্য করে। ফলে ত্বক থাকে মসৃণ লাবণ্যময়।
  • থানকুনি পাতা ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। ফলে ত্বক কুঁচকে যায় না এবং ত্বকের উপর বলিরেখা পড়ে না। যার ফলে বয়সের লক্ষণ গুলো দেখা দেয় না।
  • থানকুনি পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ত্বকের কোষগুলোকে মুক্ত মৌল থেকে রক্ষা করে এবং বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেয় না।
  • থানকুনি পাতা ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখে ফলে ত্বকে খসখসে রুক্ষ ভাব থাকে না । ফলে ত্বক টান টান করে।
  • যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার কোনো বিকল্প নেই। এই ভেষজটি যৌবন ধরে রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী। যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে প্রতিদিন এক গ্লাস দুধের সাথে থানকুনি পাতা খেলে আপনার যৌন শক্তি বৃদ্ধি পেয়ে ২০ বছরের যুবক হয়ে যাবেন। তাই খেতে থাকুন প্রতিদিন থানকুনি পাতা

মন্তব্য

থানকুনি পাতা একটি ভেষজ উদ্ভিদ। যার গুনাগুনের কথা বলে শেষ করা যাবে না। এটা একটি সহজলভ্য ভেজস উদ্ভিদ। এটি বাড়ির আশেপাশে ডোবা নালায় পাওয়া যায়। প্রিয় পাঠক, আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে থানকুনি পাতার কিছু উপকারিতা ও কিছু অপকারিতা এবং বিভিন্ন গুণাগুণ সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি। থানকুনি পাতার অনেক ওষুধি গুনাগুন বা উপকারিতা থাকলেও ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদেরকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যাতে আমাদের কোন প্রকার ক্ষতি না হয়। অনেক ধন্যবাদ এতক্ষন আমার সাথে থাকার জন্য আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url