বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয়

মানুষের সৌন্দর্য প্রকাশের অন্যতম অংগ হলো তার দাত।ঝকঝকে উজ্জ্বল দাত মানুষের সৌন্দর্যকে আরো ফুটিয়ে তুলে।আর ছোট বাচ্চাদের দাঁত তো আরো সুন্দর। তাদের সুন্দর দাঁতের মিষ্টি হাসিতে যেন মুক্ত ঝরে। তাই বাচ্চাদের দাত ওঠার সময় করণীয় কিছু বিষয় থাকে।
বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয়

আজ আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে  বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয়  কি, বাচ্চাদের দাঁত না উঠলে করণীয় কি, বাচ্চাদের দাঁত না ওঠার কারণ, ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয়

দাত মানুষের অত্যান্ত প্রয়োজনীয় একটি অংগ। সৌন্দর্যকে আরো ফুটিয়ে তুলতে দাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের ফুটফুটে হাসি অনেকটা নির্ভর করে তার দাঁতের উপর।শিশুদের সাধারণত ৬ থেকে ৯ মাসের মধ্যে দাঁত উঠে। কারো কারো আবার তার আগেও উঠে।সাধারণত ছোট বাচ্চাদের মাড়ি তুলতুলে নরম হয়ে থাকে। তাই শিশুদের দাত উঠার সময় আমাদের কিছু করনীয় থাকে। নিম্নে  বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয় গুলো সর্ম্পকে আলোচনা করা হলো
  • সাধারনত ছোট বাচ্চাদের মাড়ি অনেক নরম থাকে ।তাই দাত উঠার সময় মাড়ি কিড়কিড় করে ব্যথা করে।বাজারে অনেক ধরনের আরাম দায়ক খেলনা পাওয়া যায় ।এই খেলনা গুলো দিতে হবে।এবং বাকি খেলনা গুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।কারন এই খেলনা গুলো কামড়াতে থাকে।তাই বাবা মায়ের উচিত এই গুলো পরিষ্কার রাখা যাতে এই গুলোর সাথে বিভিন্ন রোগ জিবানু না যেতে পারে।
  • এই সময় বাচ্চাদের মিষ্টি খাবার দেওয়া যাবেনা।রাতের বেলাই তো একেবারেই নয়।তবে এই সময় ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  • এই সময় বাচ্চাদের মুখের লালা পড়া বেড়ে যেতে পারে।তাই নরম কাপড় পেচিয়ে
  • দিতে হবে।প্রয়োজনে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে দিতে হবে ।তাহলে বাচ্চারা অনেক সস্থিপাবে।
  • বাচ্চাদের দাত উঠার সময় মাড়ি ব্যথা করে ।তাই খাবারের চাহিদা কমে যায়এবং খাবারের প্রতি রুচি থাকেনা।এই সময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থানিতে হবে।
  • বাচ্চাদের দাত উঠার সময় মাড়ি শিরশির করে এবং কামড়ে দেওয়ার প্রবনতা বাড়ে।তাই এসময় হাতের আংগুল পরিষ্কার করে মাড়িতে আস্তে আস্তে ম্যসাজ করতে হবে।এতে বাচ্চা অনেকটাই আরাম পাবে।
  • দাত উঠার সময় বাচ্চাদের গরম খাবার না দিয়া ঠান্ডা খাবার দিতে হবে।এতে করে বাচ্চারা অনেক আরাম পাবে।
  • এসময় শিশুকে হাসি খুশি রাখতে হবে।বিভিন্ন ধরনের খেলনা দিতে হবে।যাতে শিশুর মন থেকে অসস্থি দূর হয়ে যায়।
  • নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।এতে বাচ্চার ব্যথা অনকটা অপশম হবে।
  • নিয়মিত বাচ্চার মাড়ি পরষ্কার করে দিতে হবে।এতে করে মাড়িতে লেগে থাকা খাবারের কনা বের হয়ে আসবে এবং অনেক সস্থি পাবে।
  • এসময় বাচ্চারা অসস্তি বোধ করে।তাই বাচ্চাদের ঠান্ডা ওয়াশ ক্লথ খেতে দিতে হবে ।এইটা চাবালে বাচ্চা ভাল অনুভব করবে।
  • এসময় বাচ্চাদের মাড়ি শিরশির করেএসময় বাচ্চাদের জন্য নরম ব্রিসল যুক্ত এক ধরনের দাত মাজার ব্রাশ পাওয়া যায় ।চিবানোর জন্য এইগুলো দিতে হবে।
  • এরপরেও যদি বাচ্চা অতিরিক্ত অসস্তি অনুভব করে তাহলে অবশ্যই একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

বাচ্চাদের দাঁত না ওঠার কারণ

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমরা বাচ্চাদের দাঁত উঠার সময় করণীয় কি এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানলাম। এখন আমরা জানবো বাচ্চাদের দাঁত না ওঠার কারণ।

সাধারণত বাচ্চাদের ছয় মাস থেকে ৯ মাসের মধ্যে দাঁত ওঠে। তবে সব বাচ্চাদের ক্ষেত্রে একই রকম হয় না, কারো কারো খুব তাড়াতাড়ি উঠে, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে দেরি হয়।কিন্তু দশ মাস বা এক বছর পর হয়ে গেলে যদি দাঁত না ওঠে অভিভাবকরা চিন্তিত হয়ে পড়েন। তবে দাঁত দেরিতে উঠার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। নিম্নে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

জেনেটিক বা বংশগত কারণ

দাঁত না উঠার পেছনে যেসব কারণগুলো দায়ী তার মধ্যে বংশগত কারণ অন্যতম। যদি তার বংশে তার ভাই বোন পিতা-মাতার দেরিতে দাঁত ওঠার ইতিহাস থাকে। তাহলে শিশুর ক্ষেত্রেও এমনটি হতে পারে।

পুষ্টির ঘাটতি

অনেক সময় শিশুর শরীরে পুষ্টির ঘাটতির কারণে দাঁত উঠতে দেরি হয়। পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে দাঁত উঠতে দেরি হতে পারে। বিশেষ করে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি এর মত এবং খনিসগুলোর ঘাটতির কারণে দাঁত উঠতে দেরি হতে পারে।

স্বাস্থ্যর শর্ত

চিকিৎসাগত প্রভাবেও অনেক সময় দাঁত উঠতে দেরি হতে পারে। জন্মগত হাইপো থাইরয়েড বা কিছু জনগত রোগের কারণে শিশুদের দাঁত উঠতে দেরি হতে পারে।

প্রি ম্যাচুইটি শিশু

মেয়াদী শিশুদের তুলনায় প্রি ম্যাচুরিটি শিশুদের দাঁত উঠতে দেরি হতে পারে।

ওষুধের প্রভাব

ওষুধের প্রভাবে দাঁত উঠতে দেরি হতে পারে।উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে হাড়ের বৃদ্ধি বা বিপাকে প্রভাবিত করে ওষুধগুলো দাঁতের বিকাশকে প্রভাবিত করে।

পরিবেশগত কারণ

পরিবেশগত কারণেও দাঁত উঠতে দেরি হতে পারে।যেমন বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসালে বা মারাত্মক অসুস্থতা দাত উঠাকে প্রভাবিত করতে পারে।
এরপরও যদি আপনার শিশুর দাঁত বিলম্বে উঠে এবং আপনি এ বিষয় নিয়ে চিন্তিত থাকেন। তাহলে আপনি একটি শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।

বাচ্চাদের দাত উঠার সময় পাতলা পায়খানা

অনেক শিশুর দাত উঠার সময় পায়খানার পরিবর্তন দেখা দেয়।অনেক শিশুর কষ্ঠ্যকাঠিন্য হয় ।তবে বেশির ভাগ শিশুর পাতলা পায়খানা হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে ।কারন এই সময় শিশুর লালা ঝরার পরিমান বেড়ে যায় এবং শিশু এই লালা অনেক সময় গিলে ফেলে।এতে পরিপাকতন্ত্রে সমস্যা হয় এবং পাতলা পায়খানা হতে পারে।

খাদ্যাভাস এর পরিবর্তন

এই সময় শিশুর খাদ্যাভাস এর পরিবর্তন হয়।এই সময় শিশুর দাতের মাড়ি ব্যথা বা শিরশির করে তাই হালকা খাবারের পরিবর্তে তুলনামুলক শক্ত খাবার দেওয়া হয়।এতে অনেক সময় খাবার হজম হয়না এবং পাতলা পায়খানার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

পরিপাকতন্ত্র

অনেক শিশু আছে যাদের পরিপাকতন্ত্র অনেক দুর্বল।তাই দাত উঠার সময় পায়খানার পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।
তাই এসময় শিশুদের উপর অধিক নজর দিতে হবে এবং পাতলা পায়খানা যদি অধিক পরিমানে বেড়ে যায় তাহলে দেরি না করে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

বাচ্চাদের দাত উঠার লক্ষন

প্রিয় পাঠক,এতক্ষন আমরা জানলাম দাত উঠার সময় করনীয় কি,দাত উঠার সময় পায়খানা কেমন পরিবর্তন দেখা দেয়, ইত্যাদি বিষয়।এখন আমরা জানব দাত উঠার লক্ষন।সাধারনত দাত উঠার সময় কিছু লক্ষন দেখা যায় এখন এই লক্ষন গুলো আমরা জানবো।

  • সাধারনত দাত উঠার সময় বাচ্চাদের কামড়ানোর প্রবনতা বেড়ে যায়।সে হাতের কাছে যা পায় তাই কামড়ে দিতে চেষ্টা করে।কারন এসময় তার মাড়ি ব্যথা করে।অনেক সময় মাড়ি ফুলে যেতে দেখা যায়।এবং দাতের সাদা অংশ দেখা যায়।বাচ্চা অসস্থি অনুভব করে।মুখ দিয়ে লালা ঝরার পরিমান বেড়ে যায়।মুখ দিয়ে সবসময় লালা ঝরতে থাকে।এসময় বাচ্চাদের খাবারের রুচি কমে যায়।দাতের মাড়ি ব্যথাকরে ফলে বাচ্চারা খেতে পারেনা।অনেক বাচ্চার দাতের মাড়ি অনেক শক্ত থাক।ফলে দাত উঠতে অনেক কষ্ট হয়।কারন দাত মাড়ি ছিড়ে বের হয়।এই লক্ষন গুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে বাচ্চাদের দাত উঠার সময় হয়েছে।এই সময় মাবাবাদের অধিক সচেতন থাকতে হবে।

বাচ্চাদের দাত উঠার সঠিক সময়

প্রিয় পাঠক,এতক্ষন আমরা জানলাম দাত উঠার সময় করনীয় কি,দাত উঠার সময় পায়খানা কেমন হয় দাত উঠার লক্ষন ইত্যাদি।এখন আমরা জানবো দাত উঠার সঠিক সময় কখন। অনেক পিতামাতাই জনেনা যে বাচচাদের দাত কখন উঠে।তাই আসুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক দাত উঠার সঠিক সময় কখন।
  • বাচ্চাদের দাত সাধারনত ৬-৯ বা ১বছরের মধ্য উঠে থাকে।তবে সব বাচ্চাদের ক্ষেত্রে একই রকম হয়না।কোন বাচ্চাদের দাত দেরিতে উঠে আবার কোন বাচ্চাদের দাত তাড়াতাড়ি উঠে।এর পিছনে কিছু কারন রয়েছে যেমনঃ বংশগত কারন,পরিবশগত কারন ইত্যাদি।যাদের ভাই বন পিতামাতার দাত দেরিতে উঠার রেকড থাকে সেই সব শিশুদের দাত দেরিতে উঠার সম্ভবনা বেশি থাকে।তবে অভিভাবকদের মনে রাখতে হবে যদি ১ বছর পার হওয়ার পর দাত না উঠে তাহল অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখকের শেষ কথা 

বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয়  কি এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে।আপনি যদি সচেতন বাবা মা হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই বিষয় গুলো মেনে চলবেন।দাত উঠার সময় বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে তাই বাবামাকে অধিক যত্নবান হতে হবে।আশাকরি আমার এই পোষ্টি পড়ে আপনার উপকৃত হয়েছেন।আপনারা যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আমার লেখা সার্থক হবে।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এতক্ষন আমার সাথে থাকার জন্য।আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url