ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায়
ব্রণ হল মানব ত্বকের একটি দীর্ঘ মেয়াদী রোগ বিশেষ। যার ইংরেজি শব্দ (Acne vulgarisবা Acne)।যা বিশেষত লালচে ত্বক,প্যাপ্যুল,নডিউল,পিম্পল, তৈলাক্ত ত্বক,ক্ষত চিহ্ন, বা কাটা দাগ ইত্যাদি দেখে চিহ্নিত করা যায়। দুশ্চিন্তা, ভীতি বিষন্নতা ও উদ্বিগ্নের পাশাপাশি এর একটি প্রধান পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া।
আত্মীয়-স্বজন পাড়া প্রতিবেশীর দ্বারা হেই প্রতিপন্ন হয় ফলে অনেকেই ডিপ্রেশনে চলে যাই। আবার অনেকেই আত্মহত্যার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে এতে আত্মহত্যার পরিমাণ ৭.১ শতাংশ। ব্রণের অনেক ধরনের চিকিৎসা রয়েছে। এর মধ্যে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ব্রুনের চিকিৎসা করা যায়।এটা সহজ পদ্ধতিতে ঘরোয়া ভাবে চিকিৎসা করা যায়।
ভূমিকা
ব্রুনের সমস্যায় ভুগেননি এমন মানুষ খুজে পাওয়া যাবেনা। এটা সাধারনত বয়স সন্ধিকালে উভয় লিঙ্গে নিরবিশেষে টেস্টস্টরনের মতো অ্যান্ড্রজেন বূদ্ধির ফলে ব্রুন হতে পারে।ব্রণ ত্বকের উপর তৈলাক্ত গ্রন্থির মাত্রার উপর ব্রণ হওয়া নির্ভর করে। এটা শরীরের যে কোন স্থানে হতে পারে, তবে মুখ, বুকের উপরের অংশ, ও পিঠে বেশি হয়ে থাকে। এটা সাধারণত বয়সন্ধিকালে বেশি দেখা যায়, এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে এটা কমতে থাকে।
তবে বিভিন্ন রকম প্রসাধনী সমগ্রহী ব্যবহারের কারণেও এটা হতে পারে। অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন, এবং ডিপ্রেশনে চলে যাই। প্রিয় পাঠক, আর নয় দুশ্চিন্তা, এটার অনেক ধরনের চিকিৎসা,রয়েছে যারা এ সমস্যায় দীর্ঘ দিন যাবত ভুগতেছেন এই পোস্টি তাদের জন্য।আজ আমি এর বিভিন্ন চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করব।এর মধ্য সহজ ঘরোয়া পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব ,আশাকরি হতাশ হবেনা,তাই শেষ পর্যন্ত আমার সাথেই থাকুন।
কারন
বিভিন্ন কারনে ব্রুন হতে পারে,এর মধো হরমনাল কারন ,মানুষিক কারন,জেনেটিক কারন,ইত্যাদি কারনে ব্রুন হতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রসাধনি ব্যবহারের কারণে ব্রণ হতে পারে। তকের উজ্জ্বলতা নষ্টকরে দেয়।সাধারণত আমাদের ত্বকের গৈল গ্রন্থি ব্যাকটেরিয়া দারা আক্রান্ত হলে ধীরে ধীরে এর আকৃতি বূদ্ধি পাই এবং ভিতরে পুজ জমতে থাকে এবং পরবর্তীতে ব্রণে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। নিম্নে এর কারন গুলো উল্লেখ করা হলো।
হরমোন
মাসিক চক্র এবং বয়স সন্ধিকালে হরমোনের মাত্রাধিকোর কারণ ব্রণ হয়। এছাড়া বয়সন্ধিকালে অ্যান্ড্রোজেন নামক হরমোনের বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত সিবাস তৈরি হয় তৈরি হয়, এবং গর্ভকালীন সময়েও অ্যান্ড্রোজেন হরমোন বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত সিবাস তৈরি হয়। এছাড়াও আরো কিছু হরমোনব্রণেরসাথেসম্পর্কযুক্তযেমন টেস্টোস্টেরন,ডিহাইড্রোএপি,এন্ড্রোস্টেরন ইত্যাদি। পরবর্তী জীবনে ব্রণ হওয়া অস্বাভাবিক বিষয়, যদিও ব্রণের মতন এক ধরনের উপস্থিতি থাকতে পারে।
জেনেটিকজরে। জেনেটিক উপাদান যেমন TNF- আলফা, IL-, আলফা ইত্যাদি ব্রণের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। যেটা জমজ গবেষণা দ্বারা সমর্থিত।
মানসিক
ব্রণের জন্য মানসিক কারনও অনেকাংশে দায়ী। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণেও ব্রণ বাড়তে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ দুশ্চিন্তাকে ব্রণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাই প্রিয় পাঠক, উপরিক্ত আলোচনা মাধ্যমে এতোটুকু বুঝতে পেরেছেন যে, যেকোনো বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা না করে ঠান্ডা মাথায় সময়মত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
প্রতিকার বা চিকিৎসা
প্রিয় পাঠক, ব্রণ যদি অতিরিক্ত মাত্রায় হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসা নিতে হবে। ব্রণের বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে তার মধ্যে এলোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, ভেষজ পদ্ধতি অন্যতম। প্রিয় পাঠক, আজ আমি ঘরোয়া পদ্ধতিতে খুব সহজেই কিভাবে ব্রণ দূর করা যায় এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব ইনশাল্লাহ।
মুলতানি মাটি
মুলতানি মাটি ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। যাদের মুখ অতিরিক্ত তৈলাক্ত এই তৈলাক্ততার কারণেই ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে মুলতানি মাটি পানির সাথে পেস্ট করে মুখে লাগাতে হবে। কারণ মুলতানি মাটি ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব দূর করে।
শশা
শসার রস তৈলক্ততা দূর করতে খুবই কার্যকর। বাইরে থেকে এসে প্রতিদিন শসার রস দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে হবে। এছাড়া আইস কিউব করেও ইজজ করতে পারেন।এতে ওপেন পোরসের সমস্যাও দূর হয় অনেকটা
শশার রস,চালের গুড়া ও মধু
শসার রস,চালের গুড়া,এবং যাদের মধুতে এলার্জি নেই তারা এর সাথে একটু মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এই প্যাক ব্যবহার করলে ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে ব্রণ থাকলে স্ক্রাব করা যাবে না।
কাচা হলুদ ও চন্দন কাঠ
কাঁচা হলুদ এবং চন্দন কাঠের গুড়ে সমপরিমাণ পানির সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরী করতে হবে।এই পেস্টটি ব্রুন আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে কিছুক্ষন পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।এই প্যাকটি ব্রুন দূর করার পাশাপাশ মুখের দাগও দূর করে।
আপেল এবং মধু
আপেল এবং মধুর মিশ্রন মুখের দাগ দূর করার একটি খুব ই কার্যকারি ঘরোয়া পদ্ধতি।প্রথমে আপেল কেটে এর পেস্ট তৈরী করে তাতে ৫-৬ মধু মিশাতে হবে।এই মিশ্রনটি লাগিয়া কিছুক্ষন পর ঠান্ডা পানি দিয়া মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।এইভাবে সপ্তাহে ৫-৬বার ব্যাবহার করতে পারবেন।কয়েকদিনের মধ্য এর পরিবর্তন বুঝতে পারবেন।
তুলসি পাতার রস
ব্রুন দূর করার জন্য তুলসি পাতার রস খুব ই কার্যকর।কারন এটি একটি আয়ুরবেদিক গুনাগুন সম্পন্ন একটি ভেষজ।তুলসি পাতার রস করে ব্রুনের জায়গায় মাখিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।এর পর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়া ধুয়ে ফেলুন, এর পর ম্যাজিক দেখতে পাবেন।
চন্দনকাঠ,গোলাপজল,ও লেবুর রস
প্রথমে চন্দন কাঠের গুড়া ও গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে।এর সাথে দুই থেকে তিন ফোটা লেবুর রস মিশাতে হবে।যাদের গোলাপ জলে এলার্জি আছে তারা মধু মিশাতে পারেন।এই পেস্টটি সপ্তাহে ৩-৪ দিন ব্যাবহার করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।
দারুচিনি গুড়া ও গোলাপ জল
গোলাপ জল নিয়মিত ব্যাবহার করলে ব্রুন দূর হওয়ার পাশাপাশি দাগও দূর হয়।দারুচিনি গুড়ার সাথে গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরী করতে হবে।এই পেস্ট ব্রুনের উপর ২০মিনিট লাগিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।এতে ব্রুনের সংক্রামন,দাগ,এবং ব্যথ্যা অনেকাংশে দূর হয়।
ডিমের সাদা অংশ
ব্রুন আক্রান্ত স্থানে ডিমের সাদা অংশ লাগিয়ে সারারাত রাখতে হবে।আরো ভাল হয় এর সাথে একটু লেবুর রস মিশিয়ে নিলে।এটা আপনার তকের খসখসে ভাব দূর করে ,এবং তককে মসূন,উজ্জল,এবং নরম করে।
পেপেও চালের গুড়া
ব্রুন হওয়ার অন্যতম কারন হল অপরিষ্কার তক।বাহিরের ধুলা বালি এবং অতিরিক্ত প্রসাধনির ব্যাবহার এর অন্যতম কারন।তাই তক সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।প্রথমে পেপে চটকে নিতে হবে,এর সাথে পরিমান মত চালের গুড়া এবং এক চা চামচ পাতি লেবুর রস মিশিয়ে তৈরী করতে হবে।এই মিশ্রনটি মুখসহ সারা শরীরে লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে।এখানে পেপে ছাড়া ঘূতকুমারির রস ব্যাবহার করতে পারেন।
মুলতানি মাটি ও নিমপাতা
এতে কয়েকটি নিম পাতা ভাল্ভাবে পিষে নিন।পিশা হয়ে গেলে এর সাথ পরিমান মত মুলতানি মাটি ও গোলাপ জল মিশিয়ে নিন।প্যাকটি গাঢ় হলে এর সাথে পরিমানমত গোলাপজল মিশিয়ে নিন।এই প্যাকটি মখে লাগিয়ে কিছুক্ষন রাখুন।মুখ শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
পুদিনাপাতা
ব্রুন এবং ফুসকুড়ি দূর করতে পুদিনা পাতা খুব কার্যকরি।টাটকা পুদিনাপাতা বেটা ২০ মিনিট আক্রান্ত স্থানে রাখুন।তার পর ধুয়ে ফেলুন।এতে অনেক বেশি ফল পাওয়া যায়।
স্পেশাল প্যাক
রক্তচন্দন পাউডার ও আনারের খোশার গুড়া ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।এর সাথে দুই চা চামচ টকদই বা দুধ দিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। এই পেস্ট মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এই পেস্টটি সপ্তাহে ৩-৪ দিন নিয়মিত মাখলে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে পাবে,ত্বক মসৃণ, নরম,কোমল হবে এবং ব্রুনের দাগ দূর হবে।
ব্রণ ও ব্রণের দাগ থেকে মুক্তির উপায়
- প্রিয় পাঠক,ব্রুনের দাগ থেকে মুক্তির আরো কিছু টিপস বা উপায় নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি আমার সাথেই আছেন।
- রাত জাগা,দুশ্চিন্তা, রোদে পোড়া,এবং অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহারের কারণে ব্রুন হতে পারে। তাই একটু সচেতন থাকলে বা কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করলে এই ব্রুন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- মুখ ধোয়া
- ব্রুন হওয়ার অন্যতম কারণ হলো অপরিষ্কার অপরিছন্নতা।তাই ব্রুন দূর করার প্রথম ধাপ হচ্ছে মুখ সঠিকভাবে ধোয়া। তার মানে এই নয় যে আপনাকে শুধু মিখ বারবার ধুতে হবে।এতে হিতের বিপরিত হতে পারে। সকালে, রাতে, দুপুরে, এবং বাহির থেকে আসলে মুখ অবশ্যই পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
- প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে। অর্থাৎ দিনে কমপক্ষে ৯-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
- প্রতিদিন রাতে খাবারের পর ঘুমানোর আগে মৌসমি ফল খান।এতে আপনার ত্বককে উজ্জল মসৃন করবে।তবে তৈল যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলায় ভাল।
- বাইরে থেকে আশার পরে অবশ্যই মুখ পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করে ত্বকে জমে থাকা ময়লা ও ধুলাবালি পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমাদের মধ্যে অনেকেরই বাজে অভ্যাস রয়েছে হাতের নখ দিয়ে ব্রুন খোটা। এতে আরো হিতের বিপরীত হতে পারে। তাই এই অভ্যাস পরিহার করতে হবে।
লেখকের শেষ কথা
ব্রুন হওয়া একটি সাভাবিক বিষয়।এটা ছেলে মেয়ে উভয় এর হতে পারে। এটা সাধারণত বয়ঃসন্ধি কালে বেশি হয়।তবে অন্য যেকোনো বয়সেও হতে পারে। তবে বেশি দুসচিন্তা না করে সচেতন হলেই এই ব্রুন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রিয় পাঠক, ইংরেজিতে একটা কথা আছে (Prevention is better than cure)অর্থাৎ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো। তাই অতিরিক্ত দুসচিন্তা না করে এই ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করলে ইনশাআল্লাহ আপনার সমস্যা দুর হবে। এতক্ষণ আমার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। কথা হবে অন্য কোন পোস্ট নিয়ে। আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url