প্রাকৃতিক উপায়ে ফর্সা হওয়ার পদ্ধতি
কে না চাই ফর্সা হতে।কারন এখনও আমাদের সমাজে ফর্সা রংকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়।গায়ের রং কালো হলে শুনতে হয় বিভিন্ন কটু কথা।বিশেষ করে মেয়েদেরকেই সম্মুখীন হতে হয় এই ধরনের পরিস্থতির। তাই তারা বিভিন্ন কেমিক্যাল যুক্ত কৃত্রিম পণ্য ব্যবহার করে থাকেন।
এতে অনেক সময় ত্বক পুড়ে যায়,ব্রুন বের হয়।দেখা দেয় নানান সমস্যা। যারা খুব সহজে প্রাকৃতিক উপায়ে ফর্সা হতে চান আমার এই পোস্ট শুধু তারই জন্য। কারন আমার এই পোস্টের মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে ফর্সা হওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাল্লাহ।
ভূমিকা
ফর্সা মানেই সুন্দর এমনটা নয়,তবুও মানুষ চাই ফর্সা হতে। কারন ফর্সার উপর সবারই আকর্ষণ থাকে। বিশেষ করে মেয়েরা রুপ চর্চা করতে বেশি ভালবাসে। তাই তারা বিভিন্ন ধরনের প্যাক,ক্রিম ব্যবহার করে থাকে। এতে অনেক সময় হিতের বিপরীত হতে পারে। দেখা দিতে পারে বিভিন্ন সমস্যা। তাই প্রিয় পাঠক, যারা কৃত্রিম কোন পণ্য ব্যবহার ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে খুব সহজে ফর্সা হতে চান। আমার এই পোস্টটি তারই জন্য। এখন আমি প্রাকৃতিক উপায়ে ফর্সা হওয়ার পদ্ধতি সর্ম্পকে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাল্লাহ।
প্রাকৃতিক উপায়ে ফর্সা হওয়ার পদ্ধতি
বাজারে যদিও বিভিন্ন ধরনের ফেসপ্যাক রয়েছে। তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে ঘরোয়া উপায়ে বা প্রাকৃতিক উপায়ে ফর্সা হওয়ার পদ্ধতি ফলো করায় ভালো। কারণ এতে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। নিম্নে কিছু প্রাকৃতিক উপায়ে ফর্সা হওয়ার পদ্ধতি আলোচনা করা হলো।
মসুর ডাল ও ডিমের ফেসপ্যাক
প্রথমে মসুরের ডাল ও ডিম নিতে হবে। এরপর মসুরের ডাল দুই তিন ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর মসুর ডাল ভালোভাবে বেটে নিতে হবে। এই মসুর বাটার সঙ্গে ডিম মিশ্রন করতে হবে। এই মিশ্রণটি ভালোভাবে শুকাতে হবে। মিশ্রণটি আবার ভালোভাবে বেটে নিতে হবে। এই মিশ্রনটি আপনি প্রতিদিন ফেসপ্যাক হিসেবে পানি অথবা গোলাপ জলের সঙ্গে ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল লাবণ্যময়ী ও ফর্সা।
ত্বক পরিষ্কারে কলার ব্যবহার
পাকা কলা চটকিয়ে সপ্তাহে ৩-৪ দিন মুখে লাগান। এবং তিন থেকে চার মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তাহলে মুখের ভিতরে থাকা সব ময়লা বেরিয়ে আসবে। এবং তক হবে লাবণ্যময় আকর্ষণীয় ও ফর্সা।
চালের গুড়া ও চায়ের লিকার এর ফেসপ্যাক
প্রথমে কাঁচা চাল ব্লেন্ড করে নিতে হবে পরিমাণ মতো। এর সাথে মিশিয়ে ঘন করে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করতে হবে। এ ফেস প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করে ত্বক পরিপূর্ণভাবে ভিটামিন সি, ভিটামিন- ই, ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভাবে। ফলে তক হবে নরম মসৃণ লাবণ্যময়ী ও ফর্সা।
লেবু
প্রথমে একটি পাতি লেবু কেটে নিয়ে তার সমস্ত রস বের করে নিতে হবে। দুই চা চামচ এ লেবুর রসের সঙ্গে এক চা চামচ পানি মিশিয়ে নিতে হবে। তবে আপনি চাইলে লেবুর রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। এটি লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।তবে এই প্যাকটি মুখে লাগানোর আগে কানের পিছনে বা গলায় লাগিয়ে টেস্ট করে নিবেন।
কমলালেবুর খোসা
আমরা সাধারণত কমলালেবু খেয়ে লেবুর খোসা ফেলে দিই। কিন্তু এই ফেলে দেয়া খোসাটাই আপনার অনেক কাজে লাগতে পারে। প্রথমে কমলা লেবুর খোসা রোদে শুকিয়ে নিন। এরপর মিহি করে বেটে নিন।তারপর এক টেবিল চামচ গুড়োর সাথে ১ টেবিল চামচ টক দই মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন।এই পেস্টটি মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আপনি নিজেই এই পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
হলুদ
ত্বক ফর্সা করতে হলুদ কার্য কারি ভূমিকা পালন করে। প্রথমে কাচা হলুদ পরিমানমত ভালো ভাবে বেটে নিন।এরপরে এর সাথে ১ টেবল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরী করুন।এই প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর পানিতে ধুয়ে ফেলুন (যে সমস্ত জায়গাগুলিতে সূর্যের তাপে কাল সে হয়ে গিয়েছে সে জায়গাগুলোতে ভালো করে লাগিয়ে নিন)। তাহলে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে লাবণ্যময় সুন্দর ও ভরসা।
দুধ
প্রথমে পরিমাণ মতো দুধ ও মধু নিতে হবে। এরপর এই দুইটি উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। মেশানো হয়ে গেলে এ মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট মুখে রাখতে হবে। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। তবে যাদের ত্বক বেশি শুষ্ক তারা দুধের পরিবর্তে দুধের সর ব্যবহার করতে পারেন। এম এ মিশ্রণটি আপনি প্রতিদিনই ব্যবহার করতে পারবেন।
টমেটো
প্রথমে টমেটো এবং অটোমিল ভালোভাবে ধুয়ে ব্লেন্ডার করে পেস্ট করে নিতে হবে। এর সাথে লেবুর রস মিশাতে পারেন। এ মিশ্রণটি ত্বকের উপর লাগিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন। ১৫ মিনিট পর স্ক্যাবের মতো কিছুটা সময় মেসাজ করুন। এতে করে ত্বকের ভিতরের ময়লা বের হয়ে আসবে এবং কালো ভাব ধীরে ধীরে কেটে যাবে।
দই
পানিতে ভিজিয়ে রাখা বাদাম ও আখরোট একসাথে ব্লেন্ড করে তার মধ্যে কিছুটা পরিমাণ দই এবং তিসি দিয়ে দিতে হবে। তারপরে মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে রাখুন। এটি শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বক ফর্সা ও লাবণ্যময় হবে।
গোলাপজল
গোলাপজল তুলোর মধ্যে নিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন। দিনে এক থেকে দুই বার ব্যবহার করতে পারবেন। এটা গোসলের আগে অথবা বাহির থেকে ঘুরে আসার পরে ব্যবহার করতে পারবেন। এটি ত্বকের উপরিভাগের নোংরা গুলোকে পরিষ্কার করে ফেলে। ফলে ত্বক ধীরে ধীরে সুন্দর ফর্সা লাবণ্যময় হয়।
পেঁপে
পাকা পেঁপে বেটে নিয়ে এর সাথে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে ভালো করে মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এরপরে এই মিশ্রণটি গলায় ঘাড়ে হাত দিয়ে ভালো করে লাগিয়ে নিতে হবে। লাগানোর ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ভালো পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহার করলে। ধীরে ধীরে ত্বক ফর্সা হয়ে উঠবে।
বেসন
পরিমাণ মতো বেসন দুধ লেবুর রস এবং হলুদ গুঁড়া একসঙ্গে মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করুন।এ ফেসপ্যাকটি মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বক ফর্সা হবে।
যষ্টিমধুর ফেসপ্যাক
প্রথমে যষ্টিমধু থেকে রস বের করে নিতে হবে। ঘুমানোর আগে তুলোর সাহায্যে এই রস মুখে লাগিয়ে রাখুন। এতে করে ত্বকের ডার্কনেস এবং সূর্যের তাপে কালো হওয়া কালচে ভাব দূর হবে।
ডাবের পানি
কচি ডাবের পানি মুখ এবং ঘাড়ে লাগিয়ে নিন।পানি লাগানোর পরে হাতে হালকা করে ম্যসাজ করে দিন। এরপর আবার ত্বকের উপরে ডাবের পানি লাগিয়ে নিন। এবার ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। ১৫ মিনিট পরে সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন গোসলের আগে বা পরে ব্যবহার করতে পারেন।
গ্রিন টি
গ্রিন টি লেবুর রস, মধু একসঙ্গে মিক্স করে নিন। এই মিশ্রণটি ভালো হবে ত্বকের উপর লাগিয়ে নিন। এবং ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। ১৫ মিনিট পরে ভালো পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।এই মিশ্রনটি আপনি সপ্তাহে প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারবেন।
গরম তেল ম্যাসাজ
বাদাম তেল অথবা জলপাই তেল পরিমাণ মতো নিতে হবে। এর সঙ্গে কয়েকটি নিম পাতা নিতে হবে। এই তেলের ভিতরে কয়েকটি নিম পাতা দিয়ে হালকা গরম করে নিন। এই তেলটি আপনার সারা শরীরে ভালোভাবে মেখে নিন। এবং ৩০ মিনিট পরে গোসল করে নেন। এভাবে সপ্তাহে দুইদিন করলে আপনার তক উজ্জ্বল ফর্সা হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরার রস বের করে এর সঙ্গে মধু মিশ করতে হবে। এই মিশ্রনটি ঘুমানোর আগে মুখে লাগিয়ে ঘুমাতে হবে। এবং পরের দিন সকালে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। তাহলে আপনি নিজেই এর পরিবর্তন টা দেখতে পাবেন।
চন্দন গুড়োর ফেসপ্যাক
চন্দন গুড়োর সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করতে হবে। এ ফেসপ্যাকটি মুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে আশা করি মুখের ত্বক উজ্জ্বল ও ফর্সা হবে।
শসার রস ও মধু
পরিমাণ মতো শসার রস এবং তার সাথে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে। যাদের ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত তারা মধুর পরিবর্তে লেবু ব্যবহার করতে পারেন। এ পেস্ট টি মুখে লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। ইনশাআল্লাহ আপনি এর জাদুকরি গুণ নিজেই দেখতে পাবেন।
আলুর রস
আলো ব্লেন্ড করে নিয়ে তার রস বের করে নিন। এ রস যেখানে যেখানে আপনার কালচে দাগ রয়েছে সেখানে সেখানে লাগিয়ে নিন। এবং ২০ মিনিট পর ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বক নরম উজ্জ্বল লাবণ্য ও ফর্সা হয়।
বিট পালং এর ব্যবহার
৪ চা চামচ বেসন এবং ২ চা চমচ হলুদের গুড়োর মধ্যে বিট পালং ব্লেন্ড তার রস এর সঙ্গে মিশে নিন। এরপর এই মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার ত্বক স্থায়ীভাবে ফর্সা হবে ইনশাল্লাহ।
ত্বক ফর্সা করার আগে কতগুলো বিষয়ের উপর নজর দেওয়া উচিৎ।
- প্রতিদিন আপনার খাবার মেনুতে টক দই রাখতে হবে। কারণ টক দই আপনার ত্বককে উজ্জ্বল ও লাবণ্যময় করবে।
- প্রতিদিন বেশি পরিমাণে পানি পান করুন। কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ লিটার পানি পান করতে হবে।
- চা ও কফির মত উত্তেজক সৃষ্টিকারী পানীয় থেকে বিরত থাকুন। কারণ এটি আপনার ত্বকে প্রভাব ফেলতে পারে।
- ত্বককে সাময়িকভাবে উজ্জ্বল ও ফর্সা করার জন্য কোন ধরনের কৃত্রিম কেমিক্যাল যুক্ত পণ্য ব্যবহার করবেন না। তাহলে আপনার তক নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
লেখকের মন্তব্য
সবাই নিজের ত্বক সুন্দর উজ্জ্বল লাবণ্য ও ফর্সা রাখতে চাই। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা সবার ত্বক একইভাবে তৈরি করেননি। কারো ত্বক ফর্সা আবার কারো ত্বক কালো, কিছু মানুষের ত্বক তৈলাক্ত, আবার কারো ত্বক শুষ্ক। তাই তককে উজ্জল ,সুন্দর লাবন্য রাখতে বিভিন্ন কৃত্রিম ক্রিম ব্যবহার করে থাকেন।এতে তককের ক্ষতি হতে পারে ।তাই আমার পরামর্শ হচ্ছে প্রাকৃতিক উপায়ে ফর্সা হওয়ার পদ্ধতি বা উপায় গুলো ব্যবহার করা ।কারন এর কোন পার্শ প্রতিক্রয়া নেই ।এই উপায় গুলো আমি পুর্বেই আলোচনা করে ফেলাছি যা হয়তবা এতক্ষনে পড়ে ফেলেছেন।সবাইকে অনেক ধন্যবাদ আমার এই পোস্টটি পড়ার জন্য।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url