নারিকেল খাওয়ার উপকারিতা বা পুষ্টি গুন কি ?



কমবেশি আমরা সবাই নারিকেল বা ডাব চিনি বা খেয়ে থাকি। নারিকেল শাঁসযুক্ত একটি সুশাদু ও মিষ্টি ফল। তবেঁ আমরা অনেকেই জানিনা যে নারিকেল শ্বাসের উপকারিতা বা পুষ্টি গুণ কি।
নারিকেল খাওয়ার উপকারিতা বা পুষ্টি গুন কি


প্রিয় পাঠক, আজ আমরা জানতে চলেছি, নারিকেল খেলে কি হয়,বা শ্বাসের উপকারিতা বা পুষ্টি গুণ এবং নারিকেলর ঔষধি গুনাগুন কি ইত্যাদি। প্রিয় পাঠক, এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ধৈর্য ধরে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন। তাহলে আশা করি আপনার কাঙ্ক্ষিত তথ্যগুলো পেয়ে যাবেন।

ভূমিকা

ডা বা নারিকেল পছন্দ করে না এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম।আমরা ছোট বড় সবাই ডাব বা নারিকেল খেতে পছন্দ করি। কাচা অবস্থায় একে ডাব বলা হয় এবং পাকার পর এটাকে নারিকেল বলা হয়। ডাব বা নারিকেলের পানি যেমন স্বুসাদু তেমনি নারিকেলের শাস অত্যান্ত সুসাদু ও পুষ্টি গুণে পরিপূর্ন। এছাড়াও নারিকেলের শাস দিয়ে অনেক ধরনের পিঠাপুলি ও নানা ধরনের মজাদার খাবার তৈরি করা হয়।

নারিকেল কি 

ডাব্ বা নারকেলের বৈজ্ঞানিক নাম (Cocos nucifera) Palmae প্রজাতির শাখা প্রসাখা বিহীন এবং লম্বা একবীজপত্রী বৃক্ষের অন্তর্ভুক্ত একটি ফল। নারিকেল গাছ বিশ্বের উষ্ণ মন্ডলে বেশি জন্মে। বিশেষ করে সমুদ্র উপকূলে নিচু জমি ও ছোট ছোট দীপাঞ্চলে এই গাছ বেশি জন্মে। সমুদ্রের উপকূলবর্তী অঞ্চলে লুনা মাটিতে বেশি জন্মে।


দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশেষ করে শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া, এবং ভারতে এই গাছ অধিক পরিমাণে জন্মে। নারিকেল গাছের উচ্চতা মোটামুটি 20 থেকে 30 মিটার, কাণ্ড মুসৃন ও বেলনাকার ও উপরের দিকে ক্রমশ শরু হয়। তবে বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই এই গাছ পাওয়া যায়। বিশেষ করে সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে বেশি দেখতে পাওয়া যায় যেমন চট্টগ্রাম জেলার উপকূলবর্তী অঞ্চলে বেশি এই গাছ দেখতে পাওয়া যায়।

ব্যুৎপত্তি 

নারিকেল নামটি ঘোড়শ শতাব্দীর পর্তুগিজ শব্দ কোকো থেকে উদ্ভূত হয়েছে যার অর্থ "মাথা " বা 'খুলি' কোকো বা নারকেল শেল তাদেরকে কোকো একটি সুমাত্রায় থাকাকালীন ১২৮০ সালে মার্কো পোলো ব্যবহার করেছিলেন। তিনি আরবদের কাছ থেকে এ শব্দটি গ্রহণ করেছিলেন বলে জানা যায়। ুএর মালায়ালাম থাঙ্গা। ১৫০১ সালে প্রকাশিত লুডোভিচো ডি ভরথেমা দ্বারা সম্পাদনায় নারিকেলের বিশদ বিবরণে এবং পরবর্তীকালে এরই নাম "Hortus indicus Malabaricu" হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

নারিকেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা 

নারিকেল একটি সুস্বাদু ও মিষ্টি ফল। আমাদের স্বাস্থ্য রাখতে হলে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কমপক্ষে ১০০ থেকে ২৫০ গ্রাম স্বাস্থ্যকর ফল খাওয়া দরকার। তাই নিয়মিত নারিকেল খেলে বিভিন্ন প্রকার রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এটি সোহেলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। প্রতিটা জিনিসের ভালো-মন্দ দুইটা দিক রয়েছে। তাই ডাব্বা নারিকেলের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। 


এখন আমি আলোচনা করব নারিকেল বা ডাব খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি?

ত্বকের যত্নে 

নারিকেল ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত নারিকেল খেলে ত্বকের আদ্রতা ধরে রেখে ত্বকে কমল সুন্দর ও মসৃণ করে। এছাড়াও নিয়মিত নারিকেল খেলে ত্বকে বয়সজনিত বলিরেখা পড়তে দেয় না। ফলে ত্বক থাকে সুন্দর মসৃণ ও উজ্জ্বল।

কোলন ক্যান্সার ঝুঁকি কমায় 

নারিকেলে অধিক পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিজেন থাকে যেটা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত নারিকেল খেলে অন্যান্য ক্যান্সার যেমন স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ইত্যাদি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাই। তাই নিয়মিত নারিকেল খাবার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

দাঁত ও হাড় ভালো রাখে 

দাঁত ও হাড়ের প্রায় ৮০ পারসেন্ট বা ভাগ ক্যালসিয়াম দ্বারা গঠিত। বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়। তাই দাঁতও হাড় দুর্বল হতে থাকে। এজন্য আপনি যদি নিয়মিত নারিকেল খান তাহলে দাঁত ও হাড় মজবুত থাকবে। কারণ নারিকেলের শ্বাসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে। তাই নিয়মিত নারিকেল খেলে এ ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে 

নারকেল হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কারণ নারিকেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং অন্যান্য ভিটামিন মিনারেল এমাইনো এসিড যেগুলো হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে।

ওজন কমায় 

নারিকেলে অন্যান্য ফলে তুলনায় ক্যালরির মাত্রা কম থাকে। তাই নিয়মিত নারিকেল খেলে আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমে যাবে।

হার্ট ভালো রাখে 

নিয়মিত নারিকেল খেলে হার্ট ভালো থাকে। কারণ নারিকেলে রয়েছে ফ্যাটি এসিড যা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় এর ফলে হার্ট ভালো থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়  

যার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত বেশি তার অসুখ-বিসুখ সাধারণত কম হয়। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হলে নিয়মিত নারিকেল খেতে হবে। কারণ নারিকেলে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে 

নারিকেল স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। কারণ নারিকেলে রয়েছে এম সি টি গ্লুকোজ। এছাড়াও এটা মস্তিষ্কের খাবার হিসেবে কাজ করে। তাই স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে নারিকেলে কোন বিকল্প নেই।

চুলের যত্নে নারিকেল 

চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে নারকেল। নিয়মিত নারিকেল খেলে মাথায় খুশকি ও শুষ্কতা দূর করে ও চুল পড়া বন্ধ করে।

নারিকেল খাওয়ার অপকারিতা

এতক্ষণ আমরা জানলাম নারিকেল খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি। আমরা জানি প্রতিটি জিনিসেরই সুবিধা বা অসুবিধা রয়েছে। তেমনি নারিকেল খাওয়া-দাওয়া কিছু অসুবিধা বা অপকারিতা রয়েছে। তাই এখন আমরা জানবো নারিকেল খাওয়ার অপকারিতা গুলো কি কি?

  • অতিরিক্ত নারিকেলর পানি খাওয়া স্বাস্থ্যর জন্য ভালো না।কারন ডাব বা নারিকেলের পানিতে পটাশিয়াম রয়েছে। যেটা সাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর।যাদের গ্যাসের সমস্যা আছে তাদের বেশি নারীকেল না খাওয়াই ভালো। কারনারিকেলের পানি খাওয়া উচিত নয় কারণ অধিক পরিমাণে নারকেলের পানি পান করার ফলে হাইপারকালাডায়াবেটিকস রয়েছে তাদের বেশি পরিমাণে নারিকেলের পানি পান না করায় ভালো। কারন নারিকেলের পানিতে ইমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • যাদের প্রচুর পরিমাণ শর্করা থাকে। যেটা ডায়াবেটিক্স রোগীর জন্য ক্ষতিকর।
  • যাদের এলার্জি সমস্যা রয়েছে তাদের বেশি পরিমাণে ডাব বা নারিকেলের পানি পান না করায় ভালো।
  • ডাবের পানি পান করলে এলার্জির সমস্যা হতে পারে।সাদফজক্সাদফজক্সাদফজক্সাদফজক্সাদফজক

  •  কাশি পরিমাণে  কিডনির সমস্যা রয়েছে তারা অধিক পরিমাণ নারিকেলের পানি বা নারিকেল খাওয়া থেকে বিরত থাকায় ভালো। কারন নারিকেলে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। যা 

  • যাদে
  •    কিডনির জন্য ক্ষতিকর।রণ অনেক সময় 

  • যাদের সর্দি-কাশির সমস্যা রয়েছে তাদের অধিক পরিমাণ ডাবের পানি না পান করায় ভালো। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়াতে হবে।ণ নারিকেল খেলে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
  • বে
  • যা

ডাবের পানি পান করার নিয়ম 

প্রতিটি জিনিসেরই কিছু নিয়ম কানুন আছে। যদিও ডাবের পানি পান করার নির্দিষ্টভাবে কোন নিয়ম নাই।তবে কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে।
কচি ডাবের পানি পান করতে হবে কারন কচি ডাবের পানিতে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকেনা।
ডাব কাটার সাথে সাথে পান করতে হবে।
রোদ থেকে এসে সঙ্গে সঙ্গে ডাবের পানি পান করা উচিৎ নয়।রোদ থেকে এসে একটু জিরিয়ে নিয়ে তার পরে পানি পান করতে হবে।
ডাবের পানিতে অন্য কোন কিছু না মিশানোই ভালো। যেমন লবন চিনি, গুড় ইত্যাদি।

নিম্ন ডাবের পানির উপাদান গুলো দেওয়া হল 
  • পানি -৯৫ শতাংশ
  • ক্যালসিয়াম-০.৬৯শতাংশ
  • পটাশিয়াম -০.২৫ শতাংশ
  • ফসফরিক অ্যাসিড-০.৫৬ শতাংশ
  • ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড -০.৫৯ শতাংশ
  • নাইট্রোজেন -০.০৫ শতাংশ

গ্রাম /প্রতি ১০০ গ্রামে আছে

  • লৌহ -০.৫ গ্রাম
  • চিনি -০.৮০ গ্রাম
  • আশ-০.৬২ গ্রাম
  • প্রোটিন -০.৭২ গ্রাম
  • চর্বি - ০.২০ গ্রাম

নারিকেল শ্বাসের উপকারিতা বা পুষ্টিগুণ 
  • এতক্ষণ আমরা জানলাম নারিকেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কিকি? এখন আমরা জানবো নারিকেল শাসের উপকারিতা গুলো কিকি।
  • নারিকেলের শাসে অধিক পরিমাণে ফাইবার থাকে। নারিকেলের শাসকে ফাইবারের খনিও বলা চলে।১০ গ্রাম শাসে গমের চেয়েও বেশি ফাইবার থাকে।ফাইবার আমাদের হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
  • শাসে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও পটাশিয়াম আমাদের দেহে পানিও সোডিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখে। আধা কাপ শাঁসে ২৮৫ গ্রাম পটাশিয়াম থাকে।
  • লিভারের সমস্যা দূরে করতে নারিকেলের শ্বাস সাহায্য করে। কারণ শ্বাসে থাকে এমাইনো এসিড যা লিভার সমস্যা দূর করে।
  • এছাড়াও ত্বকের প্রদাহ কামাই এবং দাত মজবুত করে।

  • আরও পড়ুনঃআপেল নাকি পেয়ারা কোনটি বেশি উপকারি
  • আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে। কারণ নারিকেলের শাসে রয়েছে অধিক পরিমাণে আইরন।
  • নারিকেলের শাস নিয়মিত খেলে হিমোগ্লোবিনের পরিমান বেড়ে যায়। ফলে শরীর সুস্থ ও ভালো থাকে।
  • নারিকেলের শ্বাস শরীরের ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। কারণ নারিকেলের শ্বাসে থাকে সামান্য চর্বি যা দেহের ইনসুলিন এর ভারসাম্য বজায় রাখে।
  • ওজন কমাতে সাহায্য করে নারিকেলের শ্বাস। নারিকেলের শাসে যে অল্প পরিমাণ ক্যালোরি থাকে তা শরীরের শক্তি যোগায়। তাই নারিকেলের শাঁস খেলে খুব তাড়াতাড়ি ক্ষুধা লাগে না। ফলে শরীরের ওজন কমে যায়।

লেখকের মন্তব্য 

ডাব বা নারিকেল খেতে পছন্দ করে সবাই। নারিকেলের পানি বা শাসে অধিক পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে। তাই এটা খুধা বা তৃষ্ণা নিবারনের পাশাপাশি ভিটামিনের চাহিদাও পুরন করে। তাই বলে বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিৎ নয়। এতে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। তাই ডাব বা নারিকেল খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। প্রিয় পাঠক এতক্ষণ ধৈর্য ধরে আমার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।( No More Today) আজ আর নয়।আগামীতে কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url