আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা ।গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

আমলোকিকে ভিটামিন সি এর ভান্ডার বলা চলে।আমলকিতে সব চেয়ে বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। একটি কমলার চেয়েও একটি আমলকিতে বেশি ভিটামিন সি থাকে। এবং ডালিমের চেয়ে ১৭গুন বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। কিন্তু অনেকেই জানেনা আমলকি খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি বা নিয়ম।
আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সর্ম্পকে জেনে নিন


এবং কিকি ভিটামিন রয়েছে বা আমলকী খাওয়ার উপকারিতা কি?প্রিয় পাঠক তাই আজ আমি আলোচনা করব আমলকি খাওয়ার সঠিক সময় বা পদ্ধতি, আমলকী খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি ইত্যাদি বিষয়।

ভূমিকা 

আমলকি ঔষধি গুনে পরিপূর্ণ একটি ফল। আমলকিতে বেশি রয়েছে ভিটামিন সি। আমলকি খেতে অনেক টক।আমলকিতে কমলার চেয়ে প্রায় ১৭গুন,আপেলের চেয়ে ১২০গুন,আমের চেয়ে ২৪গুন,এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। তাই আমলকির রয়েছে অনেক ঔষধি গুনাগুন। আমলকির উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না।

আমলকি সর্দি কাশি থেকে শুরু করে ভিটামিন সি এর অভাব জনিত রোগের মহাঔষধ হিসাবে কাজ করে ।প্রিয় পাঠক আজ আমি আলোচনা করতে চলেছি আমলি খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা, খালিপেটে আমলকি খেলে কি হয় ইত্যাদি। তাই আশাকরি ধৈর্য ধরে আমার সাথেই থাবেন শেষ পর্যন্ত।

আমলকি কি

আমলকি ফাইলান্থাসি পরিবারের ফাইলান্থুস গনের এক প্রকার ভেষজ ফল।এর বৈঙ্গানিক নাম (Phyllanthus emblica)এবং ইংরেজি নাম amla। আমলকি গাছ সাধারণত ৮ থেকে ১৮ মিটার উঁচু হয়।এটা পাতাঋরা প্রকৃতির গাছ। এর পাতা হালকা সবুজ এবং ১/২ ইঞ্চি লম্বা হয়।স্ত্রী ও পুরুষ ফুল একই গাছে ধরে। আমলকি ৪/৫ বছর বয়সে ফল দেয়।আমলকি গাছ প্রায় বাংলাদেশের সব জেলাতেই দেখতে পাওয়া যায়। আমলকি গাছ প্রধানত বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, সিরিয়া ইত্যাদি দেশে চাষ করা হয়।

আমলকী খাওয়ার নিয়ম 

আমলকি পুষ্টি গুণে পরিপূর্ন একটি ফল। এতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন রয়েছে। তাই বলে যখন তখন বা বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিৎ নয়।প্রতিটি ফল বা খাবার খাওয়ার কিছু নিয়ম কানুন আছে। অনেকেই জানেননা আমলকী কিভাবে খেলে বেশি উপকার হয়। প্রিয় পাঠক আজ আমি আলোচনা করব আমলকি খাওয়ার সঠিক নিয়ম। আমলকি বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে খেয়ে থাকেন।


তবে আমলকি, জুস বা অন্য কোন ভাবে খাওয়ার চেয়ে চিবিয়ে খাওয়ায় বেশি উপকারী। এই ফল সাধারণত শীত কালে বেশি পাওয়া যায়, তাই শীত কালে বেশি করে আৃমলকি খাওয়া যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কিকি

আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। আমলকিকে ভিটামিন সি এর ভান্ডার বলা চলে। যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।প্রতিটি জিনিসের ভালো-মন্দ দুইটি দিক থাকলেও আমলকির উপকারিতায় রয়েছে বেশি। নিম্নে আমলকির কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে 

আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। যেটা এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের ফ্রী রেডিকেলের ক্ষতি থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এছাড়াও শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে 

আমলকিতে রয়েছে শক্তিশালী ফাইবার ও ভিটামিন সি যা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হজম শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি খাবার রুচি বৃদ্ধি করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার পাশাপাশি মলত্যাগ স্বাভাবিক করে।

ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী 

আমলকি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী কারণ আমলকি শরীরের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে ফলে ডায়াবেটিসের পরিমাণ কমে যায় এবং ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে 

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও আমলকি সাহায্য করে। কারণ আমলকি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

ত্বকের যত্নে 

আমলকিতে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের যত্নে খুবই উপকারী। ত্বককে কোমল নরম মসৃণ ও উজ্জ্বল করে তোলে। তাই ত্বকের যত্ন নিতে প্রতিদিন একটি করে আমলকি খাওয়া দরকার।

চোখের যত্নে 

আমলকি চোখের জন্যেও খুব উপকারী। বয়স জনিত চোখের মেকুলার ডিজেনেরশনের মতো রোগের জন্য খুবই উপকারী।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে 

আমলকি ক্যান্সার প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমলকিতে একপ্রকার উপাদান রয়েছে যা ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

চুলের যত্নে 

চুলের যত্নে আমলকি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমলকি কে চুলের টনিক বলা চলে। এটি চুলকে ঘন মজবুত করার পাশাপাশি চুলের বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। এটি চুলের খুশকির সমস্যা দুর করে এবং চুল পাকা প্রতিরোধ করে।

পেটের সমস্যা দুর করে 

আমলকি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার পাশাপাশি পেট ফাঁপা, আমসায় দুর করে পেটের সমস্যা সমাধান করে।

এ্যসিডিটির সমস্যা দুরকরে 

প্রতি দিন সকালে এক গ্লাস পানির সাথে সামান্য পরিমাণ আমলকি গুড়া মিশিয়ে পান করলে এ্যসিডিটির পরিমান কমে যায়।

দাঁতের যত্নে 

প্রতিদিন সকালে আমলকির রস পান করলে, মুখের দূরগন্ধ দূর হয় এবং দাঁত ও মাড়ি মজবুত থাকে।

রক্ত সল্পতা দূর করে 

আমলকি রক্তের লোহিত রক্ত কনিকার পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে এবং রক্তসল্পতা দূর করে।
আমলকি শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাটের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ফলে অতিরিক্ত মেদের সমস্যা দুর হয়।

আমলকি খাওয়ার অপকারিতা 

প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আমরা জানলাম আমলকি খাওয়ার উপকারিতা কি। এখন আমি আলোচনা করব আমলকি খাওয়ার অপকারিতা গুলো কিকি? আসলে অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না। তাই অতিরিক্ত আমলকি খেলে বা ব্যবহার করলে হতে পারে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা।অতিরিক্ত আমলকি খেলে পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। যেমন পেট ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ইত্যাদি।


আমলকি রক্ত পাতলা করে। তাই অতিরিক্ত আমলকি খেলে রক্ত পাতলা হয়ে রক্ত ক্ষরণের মতো সমস্যা হতে পারে।অনেকের আমলকিতে এলার্জি থাকতে পারে। তাই যাদের এই সমস্যা রয়েছে তাদের আমলকি না খাওয়ায় ভাল।

খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা কি 

আমলকি পুষ্টি গুণে পরিপূর্ন একটি ফল। তবে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে যে আমলকি খালি পেটে খাওয়া যাবে কিনা? আমি এখন এ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাল্লাহ।এটা বিভিন্ন ভাবে খাওয়ার যেতে পারে। এটা অনেকেই কাঁচা চিবিয়ে খায় আবার কেউ রস করে খায়,আচার করে খায়,তবে যেভাবেই হোক না কেন, সকালে খালি পেটে আমলকি খেলে নিম্নর উপকার হয়।
  • দৃষ্টি শক্তি বাড়ে
  • কোলেস্টেরল কমে
  • ত্বক ভালো থাকে
  • চুল পড়া বন্ধ করে এবং সুন্দর করে
  • অতিরিক্ত ওজন কমায়
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
  • রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
  • ব্যথা দূর করে
  • মেদ কমায়
  • খুশকি দূর করে
  • মুখের দূর গন্ধ দূর করে
  • দাঁত মজবুত ও শক্ত করে
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
  • দাগহীন উজ্জ্বল ত্বক পাবেন
  • এছাড়াও ঠান্ডা জনিত রোগ যেমন
  • সর্দি কাশি জর ইত্যাদি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়

গর্ভাবস্থায় আমলকী খাওয়ার উপকারিতা কি 

গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের বেশি যত্ন নেয়ার প্রয়োজন হয় বিশেষ করে গর্ভবতী মা ও তার অনাগত সন্তানের জন্য।এ সময় সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েন যে গর্ভবতী মাকে কোন কোন খাবার দেওয়া যাবে আবার কোন কোন খাবার দেওয়া যাবে না ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। তবে এ সময় সব খাবারই একটু বুঝে শুনে খেতে হবে কারণ গর্ভাবস্থায় মহিলাদের বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তন আসে। এ সময় বমি বমি ভাব মাথা ঘোরা ইত্যাদি নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।


কিন্তু আমলকি হচ্ছে এক ধরনের ভেজোস ফল। যা গর্ভাবস্থায় খাওয়া ভালো। একজন প্রতিদিন ৬.৫ গ্রাম আমলকি খেতে পারে।এতে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কারণ আমলকিতে রয়েছে সলিউবল ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি। গর্ভাবস্থায় আমলকি খেলে গর্ভবতী মায়ের সময়ের আগে প্রসব হওয়ার ঝুঁকি কমার পাশাপাশি অনাগত সন্তানের হাড় মজবুত করে, এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
এছাড়াও গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়ার আরো কিছু উপকারিতা রয়েছে নিম্নে সেগুলো দেওয়া হল।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে 

গর্ভবতী মায়েদের কোষ্ঠকাঠিন্য, পাইলস, একটি কমন সমস্যা তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আমলকি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ আমলকিতে রয়েছে সলুউবল ফাইবার।যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

রক্তচাপ কামাই 

আমলকি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আমলকিতে রয়েছে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি। যেটা রক্ত নালিকে বিস্তৃত করে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে।ফলে রক্তচাপ কমে।

সকালের ক্লান্তি দূর করে 

গর্ভবতী মায়েদের সকালের ক্লান্তি ভাব একটি সাধারণ সমস্যা। সকালে একটি করে নিয়মিত আমলকি খেলে শরীরের শক্তি যোগায় এবং ক্লান্তি ভাব অবসন্নতা ইত্যাদি দূর করে।

রক্তপরিশোধন করে 

আমলকি শরীরের ক্ষতিকর উপাদান, টকশিট ইত্যাদি শরীর থেকে বের করে দেয়। ফলে রক্ত পরিষ্কার ও পরিশোধন হয়

লেখকের মন্তব্য 

আমলকি ঔষধী গুনে পরিপূর্ণ একটি ফল। প্রিয় পাঠক তাই আজ আমি আমলকির ব্যবহার আমলকির পুষ্টি গুণ, আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কিকি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।গর্ভাবস্থায় আমলকি খেলে কিকি উপকার হয়। প্রিয় পাঠক আশাকরি আপনারা আমার এই পোস্টের মাধ্যমে উপকৃত হতে পেরেছেন। তাই এই পোস্টটি সবার মাঝে শেয়ার করবেন আশা করি। এতক্ষন ধৈর্য ধরে আমার পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url