৭ মাসের বাচ্চার খিচুড়ি রেসিপি ও বচ্চাদের খিচুড়ি খাওয়ার উপকারিতা
বাচ্চা হওয়ার পর মা বাবা বাচ্চার খাবার নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। বিশেষ করে বাচ্চার বয়স যখন ৭ থেকে ৮ মাস।সাধারণত বাচ্চার জন্মের পর থেকে ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধই যথেষ্ট। কিন্তু শিশু যদি মায়ের বুকের দুধ যথেষ্ট না পাই সেক্ষেত্রে বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হতে পারে। তখন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়িতে খাবার খাওয়াতে হবে।
![]() |
কিন্তু বাচ্চার বয়স যখন ছয় মাস পার হয়ে যায় শিশুকে স্বাভাবিক খাবার দিতে হয়। ওই সময় বাবা মা বুঝতে পারে না যে, কোন খাবার খাওয়ানো উচিত। কোন খাবার খাওয়ানো উচিত নয় , কোন খাবারে পুষ্টিগুণ কেমন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে চিন্তিত থাকেন। এক্ষেত্র খিচুড়ি হতে পারে একটি আদর্শ পুষ্টিকর খাবার।
ভূমিকা
জন্মের পর থেকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত হামায়ের বুকের দুধই খাওয়ানো যথেষ্ট। এ সময় শিশুকে বাড়তি খাবার খাওয়ানোর প্রয়োজন হয় না। ছয় মাস বয়স পার হওয়ার পর মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয়। এ সময় শিশুকে একটু একটু করে শক্ত খাবার বা বাড়তি খাবার খাওয়ানো শুরু করতে হবে। বিশেষ করে শিশুর বয়স যখন ছয় থেকে সাত মাস হয়।
তখন খিচুড়ি হতে পারে একটি আদর্শ ও পুষ্টিকর খাবার । আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে সাত-আট মাসের বাচ্চার খিচুড়ি রেসিপি কি, এবং বাচ্চাদের খিচুড়ি খাওয়ানোর উপকারিতা কি, খিচুড়ি খাওয়ানোর প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। প্রিয় পাঠক আমার এই পোস্টটি ধৈর্য সহকারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আশা করি আপনাদের কাঙ্ক্ষিত ও প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই অনুরোধ করবো আপনারা ধৈর্য সহকারে আমার এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
বাচ্চাকে খিচুড়ি খাওয়ানোর প্রয়োজনীয়তা
অনেক বাবা মায়েরা প্রশ্ন করেন যে বাচ্চাকে খিচুড়ি খাওয়ানোর প্রয়োজনীয়তা আছে কি? বাচ্চাকে খিচুড়ি খাওয়ানোর কি দরকার?কেউ কেউ মনে করেন বাচ্চাকে খিচুড়ি খাওয়ানোর জরুরী আবার কেউ কেউ মনে করেন জরুরী না।
ছয় মাস দুধ খাওয়ানোর পর বাচ্চাকে যখন বাড়তি খাবার দেয়া হয় বাচ্চারা বাড়তি খাবারের সঙ্গে পরিচিত থাকেনা।এ সময় বাচ্চারা শারীরিক ও মানসিক ভাবে বিকশিত হতে থাকে। তাই বাচ্চাদেরকে পুষ্টিকর বা ব্যালেন্স ডায়েট খাবার খাওয়ানো জরুরী হয়ে পড়ে। কিন্তু সব খাবারের সঙ্গে পরিচিত না থাকাই ভিন্ন ভিন্ন ভাবে সব খাবার খেতে চাই না।
এক্ষেত্রে বাচ্চাকে খিচুড়ি খাওয়ানো বা দেওয়াটা জরুরি হয়ে পড়ে। ব্যালেন্স ডায়েট বলতে সে খাবার কে বোঝানো হয় যে খাবারে পরিমিত পরিমাণে পুষ্টিগুণ থাকে বা খাবারের সব কয়টি উপাদান থাকে । যেমনঃ আমিষ ,শর্করা , প্রোটিন , চর্বিসহ ভিটামিন এবং মিনারেল থাকে। এসবগুলো উপাদান সাধারণত একটি খাবারের মধ্যে পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে খিচুড়ি হতে পারে একটি আদর্শ খাবার।
কারণ এসব উপাদান একত্রে পেতে হলে আপনার শিশুকে খাওয়াতে হবে ভাত-বা রুটি , মাছ বা মাংস বা ডিম বা শাক সবজি তেল সব কয়টি উপাদান একসঙ্গে । কিন্তু শিশুরা আলাদা আলাদা ভাবে এ খাবারগুলো খেতে চায় না। এতে তাদের পুষ্টির ঘাট হতে পারে।এক্ষেত্রে খিচুড়ি সহজ সমাধান হতে পারে।
আমরা শিশুদের ভালো রাখতে চাই। শিশুরা যেন ভবিষ্যতে সুন্দর সুস্থভাবে গড়ে উঠতে পারে সেটাই কামনা করি। এক্ষেত্রে বাচ্চাকে পুষ্টিকর বা আদর্শ খাবার খাওয়ানো জরুরি। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশসহ প্রায় বিশ্বের সব দেশেই খাবারের সঙ্গে ভেজাল মেশানো হচ্ছে বা ভেজাল যুক্ত খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। এতে করে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়তেছে।
তাই আমাদের খাবারের বিষয়ে বিশেষ করে শিশুদের খাবারের বিষয়ে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। আমরা যদি ছোট থেকেই তাদের খাবারের বিষয়ে যত্নবান না হই তাদের শরীরে এই ভেজাল যুক্ত খাবার খাওয়ানোর প্রভাব পড়তে পারে।তাই আসুন শিশুদের খাবারের প্রতি আরো বেশি যত্নবান হই।
আসুন জেনে নেয়া যাক শিশুদের খাবার নিয়ে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
শিশুকে খিচুড়ি খাওয়ানোর রয়েছে অনেক ধরনের উপকা।
এখন আমরা জানবো শিশুকে খিচুড়ি খাওয়ানোর মধ্যে কি কি উপকার রয়েছে।
শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য জন্য তাদের সুষম বা ব্যালেন্স ডায়েট খাবার খাওয়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একটি খাবারে মধ্যে এই সবগুলো উপাদান থাকেনা বা পাওয়া যায় না। ওই সকল পুষ্টিযুক্ত খাবার বাচ্চারা আলাদা আলাদা ভাবে খেতে চায় না। এক্ষেত্রে তাদের শরীরে পুষ্টিকর খাবারই ঘাটতি থেকে যায়। কিন্তু ঐ সকল উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ালে ঐ সকল উপাদান একসঙ্গে পাওয়া যায়।
যা বাচ্চর শরীরের জন্য জন্য খুবই জরুরী। শিশুরা সাধারণত মুখো রচক খাবার খেতে বেশি পছন্দ করে। এক্ষেত্রে খিচুড়ি হতে পারে তাদের জন্য একটি ভালো খাবার। এতে সব ধরনের উপাদান সম্মিলিতভাবে থাকে বলে তাদের কাছে খাবারটি অনেক আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য হয় তাই তারা এই খাবারটি খুব মজা করে খায়।
নিচে খিচুড়ি রান্নার কিছু রেসিপি দেওয়া হলো
১।শিশুদের জন্য মুগ ডালের রেসিপি
এটা হচ্ছে প্রথম ধাপ, আপনার বাচ্চা যদি এখনো খিচুড়ি খাওয়া শুরু না করে আপনার বাচ্চা ডাল ভাত খাওয়াতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার পরে এই রেসিপিটি খুবই দুর্দান্ত ও ভালো।
উপকরণ
- চাল -১টেবিল চামচ
- মুগ ডাল -১টেবিল চামচ
- হলুদ -এক চিমটি
তৈরি করার উপায় প্রথমে চাল ও ডাল একত্রে ভালো ভাবে ধুয়ে ফেলুন। পরে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে হলুদ মিশিয়েভালোভাবে সিদ্ধ করুন । পরে আর একটু পানি দেন খাবারটি যখন ঘন হয়ে যাবে তখন একটু ঠান্ডা করে বাচ্চাকে চামচ দিয়ে খাওয়াতে পারেন।
২।লবন ছাড়া সবজি খিচুড়ি।
এক বছরের কম বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে খিচুড়ির এই রেসিপিটি খুবই কার্যকরী।
উপকরণ
- চাল -১/২কাপ
- মুগ ডাল -১/২কাপ
- মিশ্র শাকসবজি ধুয়ে কাঁটা (যেমন, আলু, গাজর, মটরশুঁটি, ইত্যাদি)
- ঘি -১চা চামচ
- হলুদ-এক চিমটি
- জিরার বীজ -১/২ চা চামচ
কিভাবে তৈরী করবেন।
প্রথমে ডাল ও চাল ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে আধাঘন্টা পানিতে ভিজে রাখতে হবে। পরে জিরা দিয়ে কুকারে ঘি গরম করে রাখুন বীজ ফেটে না যাওয়া পর্যন্ত রাখুন।অন্যান্য উপাদান ও পানি মিশিয়ে নিন।এই মিশ্রণটি চারটি শিটি পর্যন্ত রান্না করুন। এরপরে চামচ দিয়ে মিশ্রিত করে আপনার শিশুকে খাওয়ান।
৩।শিশুর জন্য তোর ডালের খিচুড়ি।
ভারতীয় বাড়িতে পিজিয়ন পিস একটি প্রধান খাবার, শিশুদের জন্য একটি খাবার হিসেবে পরিচিত। তবে এটি মুগ ডালের চেয়ে কিছুটা ভারী।যেটা শিশুদের হজমের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি করে। বড় শিশুদের জন্য (৮ মাস বা তারবেশি বয়সী ) দেওয়া ভালো।
উপকরণ
- চাল-১/২কাপ
- তোর ডাল-১/২ কাপ
- ঘি-১চা চামচ
- জিরা বিজ-১/২চা চামচ
- হিং-এক চিমটি
- হলুদ -১/২ চা চামচ
তৈরি করার নিয়ম
ডাল ও চাল ভালো করে ধুয়ে ফেলার পরে আধাঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে । তারপরে হলুদ এবং ২ কাপ
পানি দিয়ে প্রায় ৪-৫টি শিটি দিয়ে রান্না করতে হবে।একটি পাত্রে কিছুটা ঘি গরম করে তাতে জিরা এবং হিং যোগ করুন মিশ্রণটি না ফাটা পর্যন্ত। তারপর খিচুড়ির সাথে এটি মিশিয়ে আপনার বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন।
৪।জন্য পালং শাকের খিচুড়ি
শাকসবজি শিশুদের জন্য খুবই পুষ্টিকর একটি খাবার। সবুজ পাতায় প্রচুর পুষ্টি এবং খনিজ রয়েছে। (বিশেষ করে আইরন) যা আপনার শিশুর বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
উপকরণ
- চাল-১/২কাপ
- তোর ডাল-১/২কাপ
- পালং শাক(ছোট করে কাটা) -১/২কাপ
- ঘি-১ চা চামচ
- জিরা বীজ -১/২ চা চামচ
- রসুন -২টি কোয়া
- হলুদ -এক চিমটি
তৈরি করার নিয়ম
ডাল ও চাল ভালোভাবে ধুয়ে আধা ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপরে প্রেসার কুকারে এগুলোর সাথে হলুদ মিশিয়ে প্রায় পাঁচটি সিটি পর্যন্ত রান্না করতে হবে। তারপরেএকটি পাত্রে ঘি ও জিরা ফাটতে শুরু না হওয়া পর্যন্ত গরম করতে হবে এবং এর সাথে রসুন দিতে হবে। তারপরে পালন যোগ করুন এবং নারুন এবং কিছুক্ষণ এই মিশ্রণটি কষান। পাতা সিদ্ধ হয়ে গেলে চাল ডালের মিশ্রণটি দেন। এটি কয়েক মিনিট ধরে রান্না করতে হবে। মিশ্রণটি সিদ্ধ হয়ে গেলে। খাবারের জন্য পরিবেশন করুন।
শেষ কথা
প্রতিটি বাবা-মাই চাই তার সন্তানটি সুস্থ থাকুক। এজন্য শিশুর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি খাবারের প্রতিও বেশ যত্নবান হতে হবে। একটি শিশু জন্মের পর থেকে ৬ মাস পর্যন্ত তার মায়ের বুকের দুধের যথেষ্ট। ছয় মাসের পর থেকে শিশুকে বাড়তি খাবার দিতে হবে। কারণ এ সময় শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে। তাই শেষ কে কোন খাবারটি দেয়া যাবে এবং কোন খাবারটি দেয়া যাবে না এ বিষয়ে আমাদের কে অধিক যত্নবান হতে হবে।
আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে এই বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছ। আশা করি কিছুটা হলেও আপনারা উপকৃত হয়েছেন। আপনার যদি উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে এই পোস্টটি আপনার আপনজনের মধ্যে শেয়ার করবেন। যাতে করে তারাও আপনার মত কিছুটা হলে উপকৃত হয। প্রিয় পাঠক আমার এই পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url