দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় সম্পর্কে অনেকেই জানতে চাই। দ্রুত ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কিছু নিয়ম কানুন ও খাদ্যঅভ্যাসে পরিবর্তন আতে হবে ।
যেমন স্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যাস নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম ,ওজন নিয়ন্ত্রণ, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট এবং নিয়মিত রক্ত শর্করা পরীক্ষা করা জরুরী। এছাড়াও ডাক্তারের নিয়মিত পরামর্শ নেয়াটা অত্যন্ত জরুর বা গুরুত্বপূর্ণ।
ভূমিকা
ডায়াবেটিকস এমন একটি রোগ যা সম্পর্কে আমরা সকলেই মোটামুটি পরিচিত। একবার ডায়াবেটিকস হয়ে গেলে তা আর পুরোপুরি ভাবে নিরাময় হয় না। তবে নিয়ন্ত্রণে রেখে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব। তাই দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় সম্পর্কে অনেকেই জানতে চাই। আর তাই দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে বেশ কিছু নিয়ম কানুন ও খাদ্যভাসের পরিবর্তন আনতে হবে।দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণআনতে হলে সঠিক খাদ্য অভ্যাস নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করা অত্যন্ত জরুরি। আর তাই কি কি খাবার খাওয়া যাবে আর কি কি খাবার খাওয়া যাবেনা এ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকাটা জরুরী।দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আমার এই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে পড়তে হবে তাহলে আশা করি আপনারা বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ডায়াবেটিসের লক্ষণ
ঘনঘন প্রসব হওয়াঃযখন কারো শরীরে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে তখন তার শরীরে যে অতিরিক্ত ইন্সুলিন থাকে থাকে তা কাজে আসে না ফলে শরীরে শর্করা মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে ঘন ঘন প্রসব হয়।
ঘনঘন পিপাসা লাগা ও ক্ষুধার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
ঘনঘনপিপাসা ও অতিরিক্ত প্রসবের ফলে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যাওয়ার কারণে ঘনঘন পিপাসা লাগে ও ক্ষুধার পরিমাণ বেড়ে যায়
সময় মত খাওয়া দাওয়া না করলে রক্তে শর্করা কমে যাওয়া
শরীরে প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ তৈরি না হয় ক্ষুধার পরিমাণ বেড়ে যায়।তাই সময় মত ও নিয়মিত খাওয়া দাওয়া না করলে রক্তে শর্করা পরিমাণ কমে যায়।
মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যেতে পারে
শরীর থেকে দ্রুত গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যাওয়াই এবং অগ্নাশয় ইনসুলিন তৈরি না হয় মিষ্টির প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায়।
শরীরের ওজন কমে যাওয়া
অতিরিক্ত বা ঘন ঘন প্রসবের মাধ্যমে গ্লুকোজ বেড়ে যাওয়ার ফলে শরীরের ওজন দ্রুত কমে যায়।
শরীরে কোন ক্ষত বা কাটা ছেড়া হলে সহজে সেটা না ছাড়া
শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলে সময় লাগে।
চামড়ায় খসখসে ও চুলকানি ভাব বেড়ে যাওয়া
আমাদের শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ পানি দ্বারা গঠিত। তাই ডায়াবেটিক্স হলে ঘাম ও প্রসাবের মাধ্যমে পানি শরীর থেকে বের হয়ে যায়। যার ফলে চামড়া বা ত্বক খসখসে হয়ে যাই এবং চুলকানির পরিমাণ বেড়ে যায়।
মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া এবং চোখে কম দেখতে পাওয়া
ডায়াবেটিকস রোগীদের চোখে আকৃতি পরিবর্তন হতে পারে যার ফলে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায় এবং চোখের মনি ফুলে যেতে পারে।তাই দ্রুত চিকিৎসা না করলে চোখ চিরতরে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
অল্পতেই বিরক্ত হওয়া
শরীর থেকে প্রসবের মাধ্যমে শরীরের প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ কমে যাওয়ায় এবং প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ শরীরের তৈরি না হওয়ায় শরীরে ক্লান্তি বোধ হয় এবং অল্পতেই মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় এবং বিরক্তবোধ হয়।
ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ
ডাইবেটিকস প্রধানত দুই ভাগে বিভক্তঃ
টাইপ -১ডাইবেটিকস
আমাদের শরীরের অগ্নাশয় থেকে যখন কম পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি হয় বা একে বারেই তৈরি হয় না। তখন আমাদের শরীরে রক্তে শর্করার সঠিক পরিমাণ ধরে রাখতে পারে না একেই টাইপ -১ ডায়াবেটিকস বলা হয়। এইটা ডায়াবেটিকস সাধারণত ছোট বাচ্চাদের বেশি হয়ে থাকে।
টাইপ -২ ডায়াবেটিসক
এই ধরনের ডায়াবেটিস হলে আমাদের শরীরের অগ্নাশয় ভালোভাবে কাজ করে এবং ইনসুলিনও তৈরি হয় কিন্তু আমাদের শরীর তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেনা। এর ফলে আমাদের কিডনি হার্ট এবং চোখের সমস্যা দেখা দিতে পারে। টাইপ টু ডায়াবেটিক সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা দেয়। তবে এটা বাচ্চাদেরও হতে পারে। অনেক সময় এর লক্ষণ বোঝা যায় না তাই আমাদের শরীরের যত্ন নেওয়া এবং সুস্থ থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
গেস্টেশনাল এবং অন্যান্য।
দ্রুত ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা একবার হয়ে গেলে তার পরিপূর্ণভাবে ভালো হয় না। তবে কিছু নিয়ম কানুন এবং খাদ্যঅভ্যাসের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তাই অনেকেই দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় সম্পর্কে জানতে চাই। তাই দ্রুত ডাইবেটিক্স নিয়ন্ত্রণ করতে হলে
নিয়মিত ব্লাড সুগার চেকআপ করতে হবে
দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নিয়মিত ব্লাড সুগার চেকআপ করা। ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে প্রতিমাসে বা প্রতি তিন মাসে এই পরীক্ষা করতে পারেন। ব্লাড সুগার নিয়মিত চেকআপ করলে পরবর্তী পদক্ষেপ গুলো নেয়া সহজ হয়। তাই অবশ্যই নিয়মিত ব্লাড সুগার চেকআপ করতে হবে।
নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে
দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় হল পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবশ্যই খাবারের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। এজন্য দরকার প্রতিদিন সঠিক পুষ্টিকর খাবারের তালিকা তৈরি করা। একবারে বেশি খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে খাবার গ্রহণ করতে হবে। ফলে শরীরের মধ্যে গ্লুকোজ এর মাত্রা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে। অল্প অল্প করে বারবার খাবার গ্রহণ করলে শরীরের ওজনের মাত্রা এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা সঠিক থাকে।
ব্যায়াম করতে হবে
একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্যায়াম করে ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিয়মিত ব্যায়াম করলে মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এবং পাশাপাশি ফ্যাট ও সুগারের স্তর নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। তাই মানসিক ব্যায়াম যেমন ধ্যান করা স্টেজ নির্মূল করে ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে
দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনার অন্যতম উপায় হলো শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তাই সঠিক খাবার তালিকা তৈরি করি এবং নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। কারণ প্রসব করার সময় আপনার শরীর থেকে গ্লুকোজ বের হয়ে চলে যাই। এর পাশাপাশি শরীরের প্রয়োজনে ভিটামিন পুষ্টি ইত্যাদি বজায় রাখতে সহায়তা করে। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করার মাধ্যমে ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে
যে সকল কারণে ডায়াবেটিকস হয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হলো মানসিক দুশ্চিন্তা। মানসিক চাপের কারণে অনেক সময় ডায়াবেটিকস বেড়ে যায়। কারণ এটা শরীরের শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে ডায়াবেটিসের পরিমাণে বেড়ে যায়। তাই যতদূর সম্ভব মানষিক চাপ দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করতে হবে
দ্রুত ডরাবেটিকস নিয়ন্ত্রণ করার অন্যতময় উপায় হলো নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করা। এই ওষুধগুলো গ্রহণ করার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই ওষুধগুলো অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধি গ্রহণ করা ঠিক হবে না।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম
সুস্থ থাকার জন্য ঘুমের কোন বিকল্প নাই। মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য ঘুম অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞদের মতে একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম অপরিহার্য। তাই নিয়মিত ঘুম না হলে শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাই। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং ডায়বেটিকস থেকে মুক্তি পেতে আমাদেরকে অবশ্যই পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন।
স্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যাস
দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজি, বাদাম, চাল ওটস, ডাল ইত্যাদি খাবার তালিকায় রাখতে হবে। পাশাপাশি শর্করা জাতীয় খাবার যেমন চাল ,ময়দা্রুটি ,মিষ্টি ইত্যাদি যত সম্ভব কম করার চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি ফাইবার জাতীয় খাবার কম খেতে হবে।
কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার নিয়ন্ত্রণ
দ্রুত ডায়াবেটিসে নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। দুই ধরনের কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। প্রথমত চাল এবং চিনির মত সাধারণ কার্বোহাইড্রেট গুলি দ্রুত আমাদের দেহে ভেঙ্গে যায় এবং দ্রুত শক্তি দেয়।
দ্বিতীয়ত
কার্বোহাইড্রেট যেমন গম, ভেঙ্গে যেতে বেশি সময় নে এবং ধীরেধীরে আমাদের শক্তি দেই। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জটিল কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খাওয়া আবশ্যক।
ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে
ডায়াবেটিসে নিয়ন্ত্রণ জানতে হলে অবশ্যই শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তাই শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রাখতে হলে স্বাস্থ্যকর খাবার ও শরীরচর্চা নিয়মিতভাবে করতে হবে। যার ফলে ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট
ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা
দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ আনতে হলে অবশ্যই ধূমপান ওয়ালকোহল জাতীয় খাবার থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। কারণ এগুলো ডায়াবেটিকস এর পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য ক্ষতি করে থাকে।
পায়ের যত্ন
ডায়াবেটিকস রোগীদের অবশ্যই পায়ের যত্ন বিশেষভাবে নিতে হবে। প্রতিদিন পা ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে মশারাইজ করে রাখতে হবে এবং ছোটখাটো কাটানো ফুচকা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
নিয়মিত শরীর চর্চা
প্রতিদিন শরীর চর্চার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রতিদিন অন্তত৩০-৪০ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি অন্যান্য ব্যায়াম যেমন সাইক্লিন সাঁতার কাটা, যোগব্যায়াম ইত্যাদি করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
এছাড়াও এই খাবারগুলো নিয়মিত গ্রহণ করার চেষ্টা করতে হবে। যেমনঃ
- মাছ
- সবুজ চা
- ওয়াইল্ড স্যামন,
- ডিমের সাদা অংশ
- টক দই
- লেবু
- শস্য দানা
- বাদাম
- মটরশুটি
- সুষম খাদ্য
- শর্করা নিয়ন্ত্রণ
- ফাইবার সম্মিলিত খাবার
শেষ কথা
আমার এই কনটেন্ট এর মাধ্যমে দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। যারা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমার এই পোস্টটি পড়েছেন আশা করি তারা উপকৃত হবেন ইনশাল্লাহ। আমার এই পোস্টটি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ উপকারে আসবে বলে আমি মনে করি। তাই আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনারা যদি বিন্দু পরিমাণও উপকৃত হতে পারেন তাহলে আমার পোস্টটি লেখা সার্থক হবে। আজ আর নয় কথা হবে অন্য একটি পোস্ট নিয়ে। আল্লাহ হাফেজ।

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url