চুল পড়া বন্ধ ও নতুন চুল গজানোর ঘরোয়া উপায়
প্রিয় পাঠক,আসসামু আলাইকুম,অনেকেই আমাদের মাঝে জানতে চাই চুল পড়া বন্ধ ও নতুন চুল গজানোর ঘরোয়া উপায় সর্ম্পকে।চুল পড়া একটি সাধারন সমস্যা হলেও অনেক সময় এটা ভয়াবহ হিসাবে দেখা দিতে পারে।এটা ছেলে মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই হতে পারে।
এটা যে শুধু সমস্যা তা নয়,বরং কম বয়সী ছেলেদের জন্য দুঃচিন্তার কারনও।তাই প্রিয় পাঠক ,আজ আমি চুল পড়া বন্ধ ও নতুন চুল গজানোর ঘরোয়া উপায় সর্ম্পকে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাল্লাহ।তাই এই পুরো বিষয়টি জানতে হলে আমার এই পোষ্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
ভুমিকা
চুল ঝরে যাওয়া বা চুল পড়ে যাওয়া এই সমস্যা এখন অকের মাঝেই দেখা যাচ্ছে।এটা বিভিন্ন করনে হতে পারে,পরিবেশগত কারনে,বংশগত কারনে,আবার অনেকের বয়স বাড়ার সাথে সাথে চুল ঝরে যায় বা পড়ে যায়।তাই আমাদের মাঝে অনেকেই চুল পড়া বন্ধ ও নতুন চুল গজানোর ঘরোয়া উপায় সর্ম্পকে জানতে চাই।তাই আজকের আর্টকেলটি খুবই গুরুতপুর্ন হতে চলেছে।কারন এখন আমি চুল পড়া বন্ধ ও নতুন চুল গজানোর ঘরোয়া উপায়,সর্ম্পকে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাল্লাহ।তাই এই পুরো বিষয়টি সর্ম্পকে জানতে হলে এই পুরো পোষ্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে।
চুল পড়া বন্ধ ও নতুন চুল গজানোর ঘরোয়া উপায়
চুল পড়বে আবার গজাবে এইটা একটা সাভাবিক প্রক্রিয়া।কিন্তু চুল যখন অতিরিক্ত পরিমানে ঝরে যেতে থাকে তখন চিন্তার কারন হয়ে দাড়ায়।কারন শারীরিক সুন্দর্যের একটি গুরুতপর্ন উপাদান হচ্ছে চুল।তাই চুল ঝরে গেলে অনেক সময় সামাজিক ভাবেও অবহেলার সীকার হতে হয়।অনেকেই অনেক কিছু ব্যাবহার করার পরও ভাল ফল পাচ্ছেননা।প্রিয় পাঠক ,আর নয় দুশঃচিন্ত চুল পড়া বন্ধ ও নতুন চুল গজানোর ঘরোয়া উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব এখন।
হেয়ার ম্যাসাজ
নিয়মিত হেয়ার ম্যাসাজ করলে খুব তাড়াতাড়ি নতুন চুল গজায় এবং চুল পড়া বন্ধু হয়।এজন্য আপনি তেল বা হেয়ার মাক্স মাথার স্কেলপে ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে করে আপনার মাথার স্কেলপে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন চুল গজাতে সহায়তা করবে। এর পাশাপাশি আপনি নিয়মিত হালকা করে চিরুনি করবেন।
পেয়াজের রস
পেয়াজের রস চুলের জন্য খুবই উপকারী। কারণ পেয়াজে প্রচুর পরিমাণে সালফার থাকে। তাই মাথায় পেয়াজের রস দিলে চুলের ফলিকলের রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং চুল মজবুত করে।
ধুমপান পরিহার
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এটা আমরা কম বেশি সবাই জানি। আর অতিরিক্ত ধূমপান করার ফলে চুলের ফলিকল নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে চুল পড়া বৃদ্ধি পায়। এবং চুল পেকে যায়। তাই আমাদের যদি ধূমপানের অভ্যাস থেকে থাকে তাহলে তা দ্রুত পরিহার করতে হবে।
প্রোটিন গ্রহণ
অনেক সময় প্রোটিনের অভাবে চুল ঝরে যায়। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন রাখতে হবে। তাই প্রোটিনের ঘাটতি পূরণের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০-১০০ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে।
নারকেল তেল
নারিকেল তৈল চুল পড়া বন্ধের হতে পারে সহজ সমাধান। কুসুম গরম নারিকেল তৈল মাথার তালুতে লাগিয়ে হালকা করে ম্যাসাজ করতে হবে।নারিকেল তেল চুলের গোড়ায় গিয়ে চুলের ফলিকলের পুষ্টি যোগায় এবং চুলের বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
নিমপাতা
নিম পাতার গুনাগুনের কথা বলে শেষ করা যাবে না। নিম পাতার গুনাগুন সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। নিম পাতা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে নিমপাতা ব্যাবহার করা হয় তেমনি চুলের যত্নেও উপকারী। এর জন্য কিছু নিমপাতা পানিতে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর এই ফোটানো পানি পাত্রে সংগ্রহ করে, শ্যাম্পু করার সময় এ পানি ব্যবহার করে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। এটি সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন করতে পারেন। এতে চুলের বিভিন্ন সংক্রমণ দূর করার পাশাপাশি চুলের খুশকি দূর করে এবং চুল পড়া বন্ধ করে।
মেথি
চুলের যত্নে এবং চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে মেথির কোন তুলনা হয়না।প্রথমে প্রয়োজন মত মেথি পানতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।তারপর এই গুলো বেটে পেষ্ট তৈরী করতে হবে। এই পেস্ট সপ্তাহে ৪-৫ বার লাগাতে পারেন। এই ভাবে নিয়মিত লাগালে চুল পড়া কমে যাবে, নতুন চুল গজাবে এবং চুল হবে উজ্জ্বল, মজবুত।
এলোভেরা
এ্যালোভেরা জেল চুলের জন্য খুবই উপকারী। এই ুএ্যালোভেরা জেল মাথার তালুতে লাগাতে হবে।এতে চুল মজবুত করার পাশাপাশি চুল পড়া বন্ধ করে।
ডিম
ডিমের পুষ্টিগুনে কথা আমরা সবাই জানি। তাই চুল পড়া বন্ধের সহজ সমাধান হতে পারে ডিম। কারন ডিমে আছে প্রোটিন ও বায়োটিন। যা চুলের জন্য খুবই উপকারী পুষ্টি উপাদান। এছাড়াও আপনি চাইলে ডিমের সাথে টকদই, অলিভ অয়েল ইত্যাদি মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করে চুলে লাগাতে পারেন। এতে চুল হবে উজ্জ্বল ঋকঋকে এবং পাশাপাশি নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে।
টকদই
টকদই চুল পড়া বন্ধ এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। কারণ টক দই প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। তাই টক দই নিয়মিত চুলে লাগালে চুল মজবুত হওয়ার পাশাপাশি মাথার তালুর সুস্থতা বজায় রাখে এবং চুল পড়া কমে যায়। তাই টক দই চুল পড়া বন্ধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
গ্রীন টি
গ্রীন টি চুলপড়া বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্রিন টি ঠান্ডা করে মাথার তালুতে লাগাতে হবে এতে চুল পড়া কমে যায়। কারণ, গ্রীন টিতে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে। গ্রিন টি এটি এইচটি নামের হরমোনকে বাধাগ্রস্ত করে। এই হরমোনটি চুল পড়ার জন্য সরাসরি দায়ী।
ক্যাস্টর অয়েল
ক্যাস্টর অয়েল নতুন চুল গজাতে এবং চুল পড়া রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্যাস্টর অয়েল অত্যন্ত ঘন ও চটচটে তাই ক্যাস্টর অয়েলের সঙ্গে নারিকেল তেল মিশে চুলে ব্যবহার করতে পারেন।
আমলোকি
আমলোকি চুলের জন্য খুবই উপকারী।আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। আমলকির এই পুষ্টি উপাদানগুলো চুলের ফলি কল কে মজবুত করে এবং চুল পড়া রোধ করে। আপনি নিয়মিত আমলোকি খাওয়ার পাশাপাশি আমলকি তেল চুলে ব্যবহার করতে পারেন। আমলকি চুল পড়া বন্ধের পাশাপাশি নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে।
কালোজিরা
কালোজিরার গুনাগুন বলে শেষ করা যাবে না। মৃত্যু ব্যতীত প্রায় সকল রোগের মহা ওষুধ হিসেবে পরিচিত কালোজিরা। প্রথমে পরিমাণ মতো কালোজিরা ও মেথি রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর গুঁড়ো করে নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে একটি পাত্রে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে মাথার চুলে ব্যবহার করতে পারবেন। এটি সপ্তাহে ৩ দিন চুলে লাগাতে পারেন। এতে আপনি চুলের বিভিন্ন উপকার পাবেন ইনশাল্লাহ।
জবা ফুল
মাথার চুল পড়া বন্ধে জবা ফুল হতে পারে সহজ সমাধান। জবা ফুলের পাতা ও পাপড়ি দিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। এই পেস্ট মাথার তালুতে লাগালে খুব দ্রুত চুল বৃদ্ধি পায়, চুল মজবুত হয় এবং চুল পড়া রোধ হয়।
বিভিন্ন ভিটামিন
পুষ্টিকর খাবার যেমন শরীরকে ভালো রাখতে সাহায্য করে তেমনি চুলের যত্নেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। শরীরে যদি ভিটামিন না থাকে তাহলে চুলে পৌঁছায় না। ফলে চুলের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তাই চুলের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন, ভিটামিন সি, বায়োটিন, ভিটামিন এ ভিটামিন বি, আইরন, এবং জিংক।
ভিটামিন
এই ঘরোয়া উপায় গুলো ব্যাবহার করার পাশাপাশি এই ভিটামিন গুলো নিয়মিত ব্যাবহার করতে হবে।যেমন,জিংক,আয়রন।
জিংক ও আয়রন
মাথার চুল পড়া রোধে আয়রন এবং জিংক খুবই কার্যকারী একটি ওষুধ। কারণ আয়রন এবং জিংক মাথার কোষে অক্সিজেন পরিবহন করে এবং নতুন টিস্যু তৈরিতে ও ক্ষয় রোধে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত ভাবে আয়রন ও জিংক গ্রহণ করলে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। তাই আয়রনযুক্ত খাবার যেমন,মটরশুঁটি, বাদাম,কলিজা,মাংস,দুধ,ইত্যাদি খাবার খেতে হবে।
ভিটামিন সি
ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন,পেয়ারা, লেবু, কলা,আনারস,কামরাংগা,কাচা মরিচ,আমলোকিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে।
আরও কিছু ঘরোয়া উপায়
পানি
শরীরে পানির ঘাটতি হলেও চুল ঝরে যেতে পারে। তাই প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তাই চুল পড়া রোধ করতে হলে প্রতিদিন অন্তত পক্ষে ৫-৬ লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
ভেজা চুল না আচড়ানো
চুল নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। কিন্তু তাই বলে ভেজা চুল আচড়ানো যাবে না।কারন ভেজা চুল আঁচড়ালে চুল ঝরে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কারণ এ সময় চুলের গোড়া নরম থাকে। তাই চুল শুকিয়ে নিয়ে আচড়াতে হবে।
অতিরিক্ত চিন্তা
মাথার চুল পড়ার জন্য যে কারণগুলো দায়ী তার মধ্যে অন্যতম হলো অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও মানসিক অবসাদ চুল পড়ার জন্য অনেকাংশ দায়ী। তাই যতটা সম্ভব নিজেকে হাসি খুশি রাখার চেষ্টা করুন। এবং পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে যেন কখনোই মাথার ত্বকে ঘাম অতিরিক্ত জমে না থাকে বা শুকিয়ে না যায়। মাথার ত্বকে অতিরিক্ত ঘাম জমে থাকলে চুল পড়ে যেতে পারে।
চুলের কিছু সাধারণ যত্ন
- নিয়মিত চুল পরিষ্কার রাখতে হবে।কিন্তু তাই বলে অতিরিক্ত চুল আচড়ানো যাবে না।
- পেঁয়াজের রস চুলের গোড়ায় নিয়মিত লাগিয়ে ১০ মিনিট রাখতে হবে।
- মেহেদী পাতা বেটে চুলে নিয়মিত কিছু দিন ব্যাবহার করতে পারেন।
- চুকনো আমলোকি পানিতে ভিজিয়ে চুলে ব্যবহার করতে পারেন।
- কালোজিরা তৈল চুলে বেশি বেশি চুলে ব্যাবহার করতে হবে।
- শুধু পুষ্টিকর খাবার খাওয়া বা ঔষধ খেলেই হবেনা চুলের যত্ন নেওয়াটাও জরুরি।তাই এই বিষয় গুলো মেনে চললে এবং নিয়মিত চুলের যত্ন নিলে আশাকরি ভাল ফল পাবেন।
শেষ কথা
বর্তমানে চুল পড়ে যাওয়া বা ঝরে যাওয়া সাভাবাবিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।এটা বিভিন্ন কারনে হয়ে থাকে।যেমন,পরিবেশ দুষন,খাদ্য ভেজাল,বংশগত ইত্যাদি।তাই অনেকেই জানতে চাই চুল পড়া বন্ধ ও নতুন চুল গজানোর ঘরোয়া উপায় সর্ম্পকে।তাই আজ আমি আমার এই আর্টিকেলের মাধ্যমে এই পুরো বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।যারা আমার এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন আশাকরি তারা উপকৃত হয়েছেন।আপনারা যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অনুরোধ রইল আমার এই পোষ্টটি সবার মাঝে শেয়ার করে দেবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url