উচ্চতা ও বয়স অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত

একটি প্রবাদ বাক্য আছে, সাস্থ্যই সম্পদ(Health is Wealth)।সাস্থ্যই সকল সুখের মুল।তাই সাস্থ্য ভাল রাখা কতটা প্রয়োজন তা আমরা জানি।তাই সাস্থ্যর প্রতি আমাদের বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।আমাদের মাঝে এখনও একটি ভ্রন্ত ধারনা আছে সুস্থ্য শরীর মানেই মোটা শরীর ।এই ধারনা মোটেই ঠিক নয়।
উচ্চতা ও বয়স অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত

তাই অনেকেই সাস্থ্য ভাল রাখতে গিয়ে শরীরের ওজন বাড়িয়ে ফেলে।এতে শরীরের বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়।ওজন সাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত বেড়ে গেলে শরীরের সাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হয়।অন্যদিকে সাভাবিকের চেয়ে কম হলেও নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে ।তাই উচ্চতা ও বয়স অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত তা জেনে রাখা দরকার।

ভুমিকা

উচ্চতা ও বয়স অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত তা হয়তাবা আমরা অনেকেই জানিনা। জারা এই বিষয়টি সর্ম্পকে জানেনা এই পোষ্টি শুধু তারই জন্য।ওজন কম বা বেশি কোনটাই সাস্থ্যর জন্য ভাল নয়।প্রয়োজনের তুলনায় ওজন বেড়ে গেলে বা কমে গেলে শরীরের সাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হয়।ফলে দেখা দিতে পারে নানান শারীরিক জটিলতা।

কিন্ত এখানে প্রশ্ন হল আপনি কি করে বুঝবেন আপনার শরীরের ওজন কত হওয়া উচিত।আমাদের সবার শারীরিক ওজন এক নয়,তাই সবার ওজন এক হওয়ার প্রয়োজন নেই।যারযার উচ্চতা অনুযায়ি ওজন ঠিক থাকলেই ভাল।তাই উচ্চতা অনুযায়ি আপনার ওজন কত হওয়া উচিত তা জেনে রাখা দরকার।আসুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত

বিএম আই কি?

বিএম আই এর পুর্নরুপ হচ্ছে "বডি ম্যাস ইনডেক্স"এটি একটি আর্ন্তজাতিক সুচক।নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই তার বয়স ও ওজন অনুযায়ী ওজন কম না বেশি তা পরিমাপ করা হয় এই পদ্ধতির মাধ্যমে।উচ্চতা পরিমাপের একক হল মিটার আর ওজন পরিমাপের একক হল কিলোগ্রাম।আপনার ওজনকে উচ্চতার বর্গফল দারা ভাগ করলে যে ফলাফল আসবে তা বডি ম্যস ইনডেক্স বা সংক্ষেপে বিএমআই বলা হয়।

বিএম আই বের করার নিয়ম

একজন ছেলে বা মেয়ের ওজন ও উচ্চতা ব্যাবহার করে বিএম আই বের করা হয়। আমরা জানি ওজন মাপা হয় কেজিতে আর উচ্চতা মাপা হয় মিটারে ।মোট ওজনকে উচ্চতার বর্গফল দারা ভাগ করে বিএম আই বের করা হয়।
বিএম আই এর সুত্রঃ
                                 ওজন
বিএমআই        = -------------- -------
                           উচ্চতা X উচ্চতা
আন্তর্জাতিকভাবে বিএমআই ১৮.৫ থেকে ২৪.৯ এর মধ্যে হলে উচ্চতা অনুযায়ী ওজন সঠিক হলে ধরে নেওয়া হয়।

ওজন কেন নিয়ন্ত্রণে রাখবেন

শরীরের ওজনের সাথে স্বাস্থ্যের একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সুস্বাস্থ্য ও বিভিন্ন রোগের মূলে রয়েছে শরীরের ওজন।
ওজন সম্পর্কিত যে বিষয়গুলো সুস্বাস্থ্যের সাথে নিবিড় হয়ে জড়িত তার মধ্যে রয়েছে
  • দেহের উচ্চতা অনুযায়ী ব্যক্তির ওজন
  • কোমরের মাপ তথা পেটে মেদের পরিমাণ
  • ২৫ বছর বয়সের পর থেকে ওজন কেমন বাড়ছে
স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত বেড়ে গেলে শরীরের নিজস্ব ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। সেই সাথে শরীরে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে থাকে।
আবার ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলেও শরীরে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন বদ অভ্যাস ত্যগ করা পাশাপাশি উচ্চতা অনুযায়ী শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রিত রাখতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত।

অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতার নানান জটিলতা সমূহ

ওজন কম বা বেশি কোনোটি শরীরের জন্য ভালো নয়। কারণ প্রয়োজনে তুলনায় ওজন বেড়ে গেলেও যেমন বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে প্রয়োজনের তুলনায় ওজন কমে গেলেও শরীরে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা বলতে এমন অবস্থা কে বোঝায় যখন শরীরে অস্বাভাবিক পরিমাণে মেদ ও চর্বি জমে থাকে। যেটা স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ১৯৭৫ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই ৪০ বছরে বিশ্বব্যাপী স্থূলতার হার বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি শিশুরাও এই ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। কারণ এসব দেশের শিশুরা খুব সহজেই ও কম খরচে অতিরিক্ত ক্যালরি যুক্ত খাবার গ্রহণ করছে।

অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা থেকে যেসব মারাত্মক রোগের সৃষ্টি হয় তার মধ্যে

  • হার্ট অ্যাটাক
  • বিভিন্ন হৃদরোগ
  • উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার
  • টাইপ -২ ডায়াবেটিকস
  • ব্রেন স্টোক
  • বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার
  • পিত্তথলির পাথর
  • সন্তান ধারণ ও সহবাসের সমস্যা
  • হাঁপানি বা এজমা
  • চোখে ছানি পড়া
  • উচ্চ কোলেস্টেরল
  • আর্থাইটিস বা গ্রাই গ্রাই ব্যথা
  • স্লিপ অ্যাপনিয়া
শরীরের এই অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি কমিয়ে এসব মারাত্মক রোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব।

শরীরের জন কম হওয়ার জটিলতা

প্রয়োজনে তুলনায় শরীরের ওজন বেশি হলে যেমন বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয় তেমনি শরীরের ওজন প্রয়োজনে তুলনায় কম হলেও নানান জটিলতা সৃষ্টি করে। অস্বাভাবিকভাবে শরীরের ওজন কমে গেলে যে সকল স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দেয় তার মধ্যেঃ
  • পুষ্টিহীনতা
  • রক্তশূন্যতা
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়
  • হাড় ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া ও অস্টিওপ্রসেস
  • মাসিক ও গর্ভধারণের সমস্যা হওয়া ইত্যাদি।

গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

আমাদের মধ্যে একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, সুস্বাস্থ্য মানেই মোটা দেহের অধিকারী হতে হবে। মোটেও এ ধারণারই সঠিক নয়। একজন সুস্থ রোগমুক্ত মানুষ কম ওজনের হতে পারে। তিনি যদি স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস করেন চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলেন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাহলে তার ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলেও কোন অসুবিধা নেই।

উচ্চতা ও বয়স অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত?

আমাদের বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত। এটা হয়তো বা অনেকেই আমরা জানি না। কারণ সবার শরীরের ওজন এক নয়।অনেকেরই বয়সের তুলনায় ওজন কম্ব বেশি হয়ে থাকে। প্রিয় পাঠক, তাই আসুন জেনে নেয়া যাক বয়স্ ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত।

উচ্চতা ও বয়স অনুযায়ী ওজন বের করার নিয়ম

আমাদের উচ্চতা ও বয়স অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত এবং কিভাবে আমরা ওজন বের করতে পারব। নিম্নে দেয়া হলোঃ
আপনার ওজনকে উচ্চতার বর্গফু ফল দ্বারা ভাগ করলে যে ভাগফল পাওয়া যায় তাই হচ্ছে বিএম আই সংক্ষেপে" বডি ম্যাচ ইনডেক্স" বলা হয়।

  • উচ্চতা                                পুরুষের ওজন            নারীর ওজন

  • ২.৫ ফুট ১ ইঞ্চি                    ৪৫-৫৫ কেজি           ৪০-৫০ কেজি


  • ৩.৫ ফুট ২ ইঞ্চি                  ৪৮-৬০ কেজি            ৪২-৫২ কেজি


  • ৪.৫ ফুট ৩ ইঞ্চি                   ৫২-৬৪ কেজি          ৫৪-৫৬ কেজি


  • ৪.৫ ফুট ৪ ইঞ্চি                   ৫৩-৫৬ কেজি         ৫৫-৬৫ কেজি


  • ৫.৫ ফুট ৪ইঞ্চি                   ৫৬-৬৮ কেজি         ৫৫-৬৫ কেজি


  • ৫.৫ ফুট ৫ ইঞ্চি                  ৫৮-৬৮ কেজি         ৫৭-৬৭ কেজি


  • ৬.৫ ফুট ৫ ইঞ্চি                   ৬০-৭০ কেজি         ৫৭-৬৮ কেজি

শিশুদের ক্ষেত্র বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত জেনে নেন।


বয়স ছেলেদের (আর্দশ)           ওজন মেয়েদের (আর্দশ )ওজন

  • ৬ মাস ৭.৮ কেজি                                  ৭.২কেজি

  • ১ বছর ১০.২কেজি                                 ৯.৫কেজি


  • ২ বছর ১২.৩কেজি                                ১১.৮কেজি

  • ৩ বছর ১৪.৬কেজি                                ১৪.১কেজি


  • ৪ বছর ১৬.৭কেজি                                 ১৬কেজি


  • ৫ বছর ১৮.৭কেজি                                ১৭.৭কেজি


  • ৬ বছর ২০.৬৯কেজি                            ১৯.৫কেজি

  • ৭ বছর ২২.১কেজি
  •  ৮ বছর ২৫.৩কেজি                              ২৪.৮কেজ

  • ৯ বছর ২৮কেজি                                   ২৬কেজি

  • ১০ বছর ২কেজি                                    ৩২কজি
  • ১১ বছর ৩৬কেজি                                 ৩৫কেজি

  • ১২ বছর ৪৫কেজি                                  ৪৪কেজি

লেখকের বক্তব্য

প্রিয় পাঠক ,সাস্থ্যই সকল সুখের মুল আমরা সবাই জানি।তাই আমাদের সাস্থ্যর প্রতি নজর দেওয়া উচিত।সাস্থ্য ভাল তো সব ভাল।প্রিয় পাঠক,আজ আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে উচ্চতা ও বয়স অনুযায়ী একজন মানুষের ওজন কত হওয়া উচিত এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।অনেকেই জানেনা যে তার বয়স অনুযায়ি ওজন কত হওয়া দরকার।এতক্ষন হয়তোবা জানতে পেরেছেন এই বিষয়টি।তাহলে আজ থেকে এই বিষয় গুলো মেনে চলার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।তাহলে আমরা আল্লাহর রহমতে অনেক রোগ বালাই থেকে মুক্তি পাবো ইনশাল্লাহ।সবাইকে অনেক ধন্যবাদ এতক্ষন আমার সাথে থাকার জন্য।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url